যশোর প্রতিনিধি :
ভারতীয় ব্যাক ফাঙ্গাস ঝুঁকিতে রয়েছে সীমান্তবর্তী জেলা যশোর। পাসপোর্ট যাত্রী যাতায়াতের মাধ্যমে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার শংকা রয়েছে। এ নিয়ে রীতিমত চিন্তিত জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। বর্তমানে স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। একইসাথে মন্ত্রণালয়ের নিদের্শনা মেনে কাজ করছেন। ইতিমধ্যে দেশে বø্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হয়ে একজন মৃত্যুবরণ করেছেন। এর থেকে মুক্ত থাকার জন্য স্বাস্থ্য বিভাগ সবাইকে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে ও পরিস্কার মাস্ক ব্যবহারের কথা বলেছেন। গত মার্চ মাসে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে ভারতের নয়টি রাজ্য নাকাল হয়ে পড়ে। প্রতিদিনই মহারাষ্ট্র, উড়িষ্যা, মুম্বাইসহ এসব রাজ্যে লাখ লাখ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। দিনে মৃত্যুবরণ করছেন চার হাজারের বেশি মানুষ। মৃত মানুষের শেষকৃত্য নিয়েও ভয়াবহ সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। এ পর্যন্ত ভারতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন তিন লাখ ১৫ হাজার দুশ’ ৬৩ জন। আক্রান্ত হয়েছেন দু’ কোটি ৭৩ লাখ ৬৯ হাজার ৯৩ জন। যা প্রতিবেশি হিসেবে বাংলাদেশের জন্য একটি ভয়াবহ বার্তা। ভারতে শুধুমাত্র করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা ছড়িয়ে পড়েনি। ছড়িয়ে পড়েছে করোনা পরবর্তী প্রাণঘাতী ‘বø্যাক ফাঙ্গাস’ (কালো ছত্রাক) বা মিউকরমাইকোসিসের সংক্রমণ। এরপর এসেছে হোয়াইট ফাঙ্গাস ও ইয়োলো ফাঙ্গাস। করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের পর চলতি মাসে নতুন বিপদ হিসেবে দেখা দিয়েছে এ কালো ছত্রাক। বিরল এ রোগের সংক্রমণে মৃত্যুর হার ৫০ ভাগের কাছাকাছি বলে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। ভারতে করোনায় সুস্থ হয়ে ওঠা কয়েক হাজার কোভিড-১৯ রোগীর শরীরে এ ছত্রাকের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। চিকিৎসকরা বলেছেন, সাধারণত করোনা থেকে সেরে ওঠার ১২ থেকে ১৮ দিন পর শরীরে এ ছত্রাকের সংক্রমণ দেখা দিতে পারে। এতে আক্রান্ত হয় মানুষের চোখ ও ফুসফুস। চোখে রক্ত জমাট বেঁধে অন্ধ হয়ে যাওয়া বা সংক্রমিত চোখ ফেলে না দিলে সারা শরীরে সংক্রমণ ছড়িয়ে মৃত্যু অনিবার্য হয়ে পড়ে। এছাড়া, ফুসফুস সংক্রমিত হলে রক্ত জমাট বেঁধে রোগী মারা যায় বলে ডাক্তাররা জানিয়েছেন। ইতিমধ্যে বাংলাদেশে বø্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। ঢাকা বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বø্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ মে এক রোগী মারা যান। এরপর থেকে এ রোগ নিয়ে গোটা দেশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। নড়েচড়ে বসে স্বাস্থ্য বিভাগ ও মন্ত্রণালয়। গোটা দেশের হাসপাতালগুলোতে মন্ত্রণালয় থেকে সতর্কবার্তা পাঠানো হয়েছে। এ কারণে যশোর স্বাস্থ্য বিভাগও বø্যাক ফাঙ্গাস নিয়ে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। বর্তমানে স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন ও এ রোগ থেকে সতর্ক থাকতে মানুষ ও কোয়ারেন্টাইনে থাকা রোগীদের পরামর্শ দিচ্ছেন। এদিকে, ভারতের সীমান্তবর্তী জেলা হিসেবে যশোর বø্যাক ফাঙ্গাস সংক্রমণের ঝুঁকিতে রয়েছে। প্রতিদিনই বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন দিয়ে অসংখ্য মানুষ যশোরে আসছেন। এখানে পরীক্ষা করা হচ্ছে তাদের শরীরের তাপমাত্রা ও জানা হচ্ছে রোগের বিষয়ে। এরপর তাদেরকে বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে বাধ্যতামূলক ১৪ দিনের আইসোলেশনে রাখা হচ্ছে। তারপরও এদের মধ্যে পাঁচ জনের শরীরে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ধরা পড়েছে। বৃহস্পতিবার বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন দিয়ে ৪৭ জন পাসপোর্ট যাত্রী ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। এদের মধ্যে ২৩ জনকে যশোর পিটিআই হোস্টেলের কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে, ম্যাগপাই আবাসিক হোটেলে ৬ জন, হাসান ইন্টারন্যাশনালে ২ জন, বেনাপোলের বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে ১৪ জন ও অসুস্থ ২ জনকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। যশোর জেলা প্রশাসন সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। এছাড়া, ভারত থেকে ট্রাকে মালামাল নিয়ে আসা চালক ও হেলপাররা বেনাপোলে যত্রতত্র ঘোরাফেরা করছেন। এ কারণে গোটা ভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তিত জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। এরই প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ও যশোরকে গুরুত্বের চোখে দেখছে। মৌখিকভাবে দেয়া হয়েছে সতর্কতামূলক কিছু নিদের্শনা। এ ব্যাপারে যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার আরিফ আহমেদ বলেন, ভারতে ‘বø্যাক ফাঙ্গাস’ সংক্রমণের বিষয়ে যশোর স্বাস্থ্য বিভাগ অবগত রয়েছে। দেশব্যাপী করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য একটি প্রটোকল বা গাইডলাইন আছে। এসব রোগীদের চিকিৎসায় তারা এ গাইডলাইন ফলো করছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত ভারতীয় বø্যাক ফাঙ্গাস বিষয়ে তারা কোনো গাইডলাইন পাননি। নিদের্শনা পেলে সে অনুযায়ী তারা পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত রয়েছেন বলে জানান এ চিকিৎসা কর্মকর্তা। বিষয়টি নিয়ে সিভিল সার্জন শেখ আবু শাহীন বলেন, ঢাকার বাইরে দেশের অন্য কোথাও বø্যাক ফাঙ্গাস শনাক্ত হয়নি। যদিও সীমান্তবর্তী জেলা হিসেবে যশোর ঝুঁকিতে রয়েছে। তারপরও তারা গোটা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও সতর্কতা অবলম্বন করছেন। এ নিয়ে যশোর স্বাস্থ্য বিভাগ প্রস্তুত রয়েছে বলে তিনি জানান। ইতিমধ্যে কোয়ারেন্টাইনে থাকা রোগী ও হাসপাতালে আগত রোগীদের এ রোগ থেকে মুক্ত থাকতে বিভিন্ন সতর্কতামূলক নিদের্শনা দেয়া হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে করোনা রোগীকে অক্সিজেন ব্যবহার করতে হলে অবশ্যই সিলিন্ডারসহ সবকিছু ভালোভাবে পরিস্কার করা, কাপড়ের মাস্ক প্রতিদিন ধুয়ে ব্যবহার করা, পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকা, মাটি ও পানির সংস্পর্শে বারবার না যাওয়া, পানিতে ভেজা অবস্থায় হাত ও পা বেশিক্ষণ না রাখা, পশুপাখির সংস্পর্শে না যাওয়া প্রভৃতি। তিনি বলেন, বø্যাক ফাঙ্গাস নিয়ে আতঙ্কিত হবার কোনো কারণ নেই। এ রোগটি ছোঁয়াচে নয়। মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হবার কোনো শংকা নেই। সাধারণত যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত মানুষ ও দীর্ঘদিন যারা স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ সেবন করে আসছেন, তাদের এ রোগে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি রয়েছে। তবে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকলে ও সুন্দরভাবে জীবন যাপন করলে ভয়াবহ এ ফাঙ্গাস থেকে দূরে থাকা সম্ভব।