সোহেল আহাদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি: দখলদারিত্ব এক প্রতিযোগিতায় ঠেকেছে ব্যক্তি থেকে শুরু করে জাতীয় সংগঠনের কেউ বাদ যায়নি। নিজেদের আধিপত্য বিস্তারে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ট্রাক রাখাসহ প্রধান কার্যালয় নির্মাণ করতে জেলা ট্রাক মালিক সমিতি ও মোটর ওয়ার্কশপ মেকানিক ইউনিয়নের নেতারা সড়ক ও জনপথ বিভাগের জায়গা দখল করে ভরাট করেছে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অভিযোগ ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) নাকের ডগায় জেলা ট্রাক মালিক সমিতি দীর্ঘ বছর ধরে জায়গা দখল করে ইমরাত নির্মাণ করে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি সবার নজরে পড়লেও সড়ক ও জনপথ (সওজ) কর্তৃপক্ষ তা উদাসীনতার কথা বলে উড়িয়ে দিচ্ছেন। যদিও সওজের নির্বাহী প্রকৌশলীর বাড়ি থেকে কোকিল টেক্সটাইল মিল এলাকা মাত্র ৫০০/৬০০ মিটার দূরত্ব। কর্তৃপক্ষের এমন উদাসীনতা ও হেয়ালীপনায় দিন দিন শহরের মেড্ডাস্থ কোকিল টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডের সামনের জলাভূমি দখলে নিতে ময়লা-আবর্জনা ফেলে ভরাট করছে জেলা ট্রাক মালিক সমিতি ও শ্রমিক নেতারা। বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় যা রাস্তায় পানি জমে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার পৌর ভূমি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলা শহরের মেড্ডা মৌজায় ৫৪২ এসএ দাগে (সাবেক দাগ) ও ৩ নম্বর খতিয়ানে ৩ একর ৩০ শতক জায়গা আছে যা বর্তমানে ১ নম্বর খাস খতিয়ানভূক্ত। সেখানে কোকিল টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডের সামনে ৫২ শতকের বেশি জলাভূমি ভরাট করে জেলা ট্রাক মালিক সমিতি ও মোটর ওয়ার্কশপ মেকানিক ইউনিয়ন। সদর উপজেলার পৌর ভূমি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম আমাদের কণ্ঠকে বলেন, মেড্ডাস্থ কোকিল টেক্সটাইল সংলগ্ন জায়গাটি মূলত সড়ক ও জনপদ বিভাগের। সরকারি জরিপেও তাদের নামেই অন্তর্ভূক্ত রয়েছে। সওজ বিভাগ আমাদেরকে জানাননি তাই আমরাও কোন ব্যবস্থা নিতে পারিনি। তারা আমাদের কাছে সহযোগিতা চাইলে আমরা অবশ্যই তাদেরকে সহযোগিতা করবো। এ বিষয়ে নদী নিরাপত্তার সামাজিক সংগঠন নোঙর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সভাপতি শামীম আহমেদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এক শ্রেণির লোকজন রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে দখলদারিত্বের চেষ্টা করছে। অথচ বাংলাদেশের কোন রাজনৈতিক দলের গঠনতন্ত্রে নদ-নদী, খাল-বিল, পুকুর-জলাশয় ভরাট বা দখল করে রাজনৈতিক দল/সহযোগী সংগঠনের কার্যালয় অথবা রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে ব্যবসা-বাণিজ্যের কোন সুযোগ নেই! সরকারের দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত দপ্তরের অবহেলা আর সঠিক নজরদারির অভাবে রাষ্ট্রের প্রচলিত আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে সরকারি দলের নাম ভাঙ্গিয়ে সরকারি জায়গা দখল করে সরকারের সব অর্জন ধূলিস্যাৎকারীদের চিহ্নিত করে দখল উচ্ছেদ করতঃ আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন তিনি। জেলা ট্রাক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মিজানুর রহমান তানিম বলেন, এ জায়গাটি আমরা সড়ক ও জনপথ বিভাগ থেকে ২০১২ সনে লিজ নিয়েছি যা এমপি মহোদয়ও অবগত আছেন। আমাদের ট্রাক মালিক সমিতির নির্ধারিত অফিস ভবন না থাকায় আমরা এখানে অফিসের জন্য ভবন ও ট্রাক স্ট্যান্ড নির্মাণ করেছি। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আপনারা সাংবাদিকরা অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করেন। শহরে এত অনিয়ম, দুর্নীতি চোখে না দেখে ট্রাক মালিক সমিতির দিকে নজর দিচ্ছেন কেন। আপনাদের মাঝে কোন মেধাবী সাংবাদিক নেই। আমি জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করেছি। সওজ থেকে আমরা যখন লিজ নিয়েছিলাম তখন বর্তমান কর্তৃপক্ষ কেউ ছিল না, তারা জানার কথাও না। তারা কিছু বুঝেও না। বিষয়টি নিয়ে কথা হলে জেলা ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি জেলা আওয়ামীলীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক ও পৌরসভা ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর শেখ মো. মহসিন আমাদের কণ্ঠকে জানান, ২০১২ সালে মাসিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষা কমিটির সভায় মেড্ডা কোকিল টেক্সটাইল মিলের পূর্ব দিকের জায়গাটি ট্রাক রাখার জন্য সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। তখন আমরা কুমিল্লায় সড়ক ও জনপদ বিভাগের বরাবর আবেদন করি যা এখনো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আবেদন করা আর আবেদন মঞ্জুর হওয়ার পূর্বেই সেখানে সমিতির জন্য কার্যালয় নির্মাণ করা কতটুকু যৌক্তিকতা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি এড়িয়ে বলেন, কিছুদিন পূর্বে আমাদের সড়ক ও যোগাযোগ মন্ত্রী উবায়দুল কাদের সাহেব নবীনগর সফরে এসে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীকে আদেশ দেন ট্রাক মালিক সমিতির নামে জায়গাটি বন্দোবস্ত করে দেয়ার জন্য। আপনার সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বলছেন জায়গাটি আপনারা লিজ পেয়েছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরা এখনো লিজ পাইনি। আর এখানে আমার রাজনীতিক কোন পরিচয় ব্যবহার করিনি। আমি শুধু জেলা ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি আর আমি সেটাই ব্যবহার করেছি। এ বিষয়ে গত ১৭ জুন বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পঙ্কজ ভৌমিক আমাদের কণ্ঠকে জানান, জায়গা লিজ নিয়েছে বা এখানে কোন ইমারত নির্মাণ হয়েছে তা আমার জানা নেই। আমরা মাঝে মাঝে অবৈধ দখলদারের লিস্ট তৈরি করে জেলা প্রশাসকের নিকট উচ্ছেদ অভিযানের জন্য আবেদন করি। এবার করোনায় লকডাউনের জন্য আমরা এখনো লিস্ট করতে পারিনি। আপনাদের সাথে অর্থনৈতিক লেনদেন বা অন্যান্য কোন চুক্তি হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনার মাধ্যমে জানতে পেরেছি তারা আমাদের জায়গা দখল করে এখানে ভবন নির্মাণ করেছে এবং ট্রাক স্ট্যান্ড নির্মাণ করেছে যা খুবই গর্হিত অন্যায়। আমাদের সাথে কোন প্রকার চুক্তি হয়নি। তারা এক প্রকার জোর জবরদস্তি করেই তা দখলে নিয়েছে। আমরা তদন্ত করে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিব। জেলা ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি বলছেন তারা জায়গাটি বন্দোবস্তের জন্য সড়ক ও জনপদ বিভাগে আবেদন করেছেন। অপরদিকে সাধারণ সম্পাদক বলছেন আমরা জায়গাটি বন্দোবস্ত পেয়েছি। তবে সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী বলছেন আমরা কোন আবেদন পাইনি এবং কাউকে বন্দোবস্ত করে দেয়া হয়নি। এ নিয়ে শুরু হয়েছে ধূম্যজাল। আতঙ্কে রয়েছে ভূক্তভোগী সাধারণ জনগণ। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এ বি এম মশিউজ্জামানকে মুঠো যোগাযোগ করে পাওয়া যায়নি।
বৃহস্পতিবার, জুন ১
সংবাদ শিরোনাম
- জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশন শুরু
- লঞ্চে মোটরসাইকেল পারাপারে নিষেধাজ্ঞা থাকছে না
- দেশের সবচেয়ে বড় এডুকেশন এক্সপো সোমবার
- কমলগঞ্জে অভিনব কায়দায় সিএনজি চুরি : কৌশলে নগদে টাকা আদায়
- রূপগঞ্জের মুড়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের উন্মোক্ত বাজেট ঘোষণা
- এনবিআরের দাবি করা কর দিতে হবে ড. ইউনূসকে
- কাউকে জেতানো বা পরাজিত করা ইসির দায়িত্ব নয়
- ভালুকায় অসংক্রামন রোগের কারণ ও প্রতিরোধে করণীয় শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত