সোহেল আহাদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
পৌরসভার প্রধান সড়ক একটি হওয়ায় তার ওপর চাপ বেশি থাকে। যার ফলে শহরে যানজট নিত্যদিনই লেগে থাকে। এ শহরে সর্বোচ্চ এক হাজার থেকে দেড় হাজার রিকশা চলাচলের জন্য উপযোগী হলেও পৌর কর্তৃপক্ষ তিন হাজার রিকশার অনুমতি দিয়েছে। তবে কিছু অসাধু মালিকরা অনুমোদিত রিকশার লাইসেন্স নকল করে ছয় থেকে সাত হাজার অবৈধ রিকশা লাইসেন্স বানিয়ে রাস্তায় ছেড়ে দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন অপরিকল্পিতভাবে অতিরিক্ত ফি নিয়ে রিকশার লাইসেন্স ব্যবসা করেছে কিছু দালাল চক্র। যদিও পৌর মেয়র মিসেস নায়ার কবির ২০১৬ সনে প্রথম দায়িত্ব গ্রহণ করার পর ২২ জুলাই সিদ্ধান্ত নিয়ে শহরে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটোরিকশা চলা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। মেয়রের এমন সিদ্ধান্তে শহরবাসী স্বাগত জানালেও কিছু দুষ্কৃত দালালের চাপের কারণে তিনি এমন সিদ্ধান্ত থেকে সরে যেতে হয়েছিল। মালিক সিন্ডিকেটের চাপে গত বছর অনাকাঙ্খিত ঘোষণা দিয়ে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটোরিকশার লাইসেন্স দেয়া শুরু করলেন যা শহরের জন্য একটা অভিশাপ হয়ে দাঁড়ায়। হাইড্রোলিক হর্ণ বাজাতে সহজ হওয়ায় চালকরা তা বেছে নিয়েছে ফলে দিন দিন বাড়তে থাকে হাইড্রোলিক হর্ণের যন্ত্রণার মাত্রা। ২০১৯ সনে পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতায় হাইড্রোলিক হর্ণ উচ্ছেদ করলেও তা পুনরায় ব্যবহারের মাত্রা বেড়ে যায়। হাইড্রোলিক হর্ণের অপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের আরএমও ডাক্তার মো. হিমেল খান আমাদের কণ্ঠকে জানান, মানুষের মস্তিষ্কে শব্দ গ্রহণ করার স্বাভাবিক মাত্রা ৬০ থেকে ৭০ ডেসিবল। কিন্তু চারিদিক থেকে বেজে উঠা হাইড্রোলিক হর্ণের মাত্রা ১৫০ ডেসিবলের অধিক। যা মানুষ গ্রহণ ক্ষমতার বাইরে। যার কারণে হাইড্রেলিকের প্রভাবে মানুষের শ্রবণ শক্তি লোপ পায়, মাথা ব্যাথা, অনিদ্রা বেড়ে যায়, চোখে দৃষ্টি লোপ পায়, মানসিক সমস্যা সৃষ্টি হয়, গর্ভবতী মায়েদের নবজাতকের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। হাইড্রোলিক হর্ণে বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের বেশি ক্ষতি হয় বলে তিনি জানান। ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার সচিব মো. শামছুদ্দিন আমাদের কণ্ঠকে বলেন, আমরা রিকশা ও অটোরিকশাগুলোকে নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য ১০০০ টাকা ফি নির্ধারণ করে ৩০০০ রিকশা ও ২০০০ টাকা ফি নির্ধারণ করে ৯০০ অটোরিকশাকে লাইসেন্স দিয়েছি। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শহরে তিন হাজার লাইসেন্স থাকলেও রিকশা চলছে ছয় থেকে সাত হাজার। একই লাইসেন্স কপি করে শহরে ছয় থেকে সাত হাজার অতিরিক্ত রিকশা চলাচল করছে। বিষয়টি পৌর কর্তৃপক্ষ অবগত রয়েছেন এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমাদের লোকবল অভাবের কারণে আমরা এসব অননুমোদিত রিকশাগুলো যাচাই বাছাই করতে পারছিনা। তবে হাইড্রোলিক হর্ণের বিষয়ে আমরা অচিরেই তা উচ্ছেদ করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর ট্রাফিক ইনচার্জ দেবব্রত কর আমাদের কণ্ঠকে জানান, রিকশার লাইসেন্স দেয়ার দায়িত্ব পৌর কর্তৃপক্ষের আর আমাদের দায়িত্ব যানজট নিরসনের। কিন্ত পৌর কর্তৃপক্ষ যে পরিমাণে ব্যাটারিচালতি অটোরিকশার লাইসেন্স দিয়েছে তা নিয়ন্ত্রণ করা এই ছোট্ট শহরে খুবই কষ্টকর। তাছাড়া আমাদের লোকবলও কম। হাইড্রোলিক হর্ণ নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে তিনি আরো বলেন, সরকার যেহেতু ইতিমধ্যেই ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে সেহেতু আমরা আগামী জুলাই মাস থেকেই সকল ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটোরিকশা বন্ধ করে দিব। এ বিষয়ে দ্বিতীয়বারের মত নির্বাচিত পৌর মেয়র মিসেস নায়ার কবির বলেন, আমাদের পৌরসভা দুষ্কৃতিকারীরা পুড়িয়ে দিয়েছে। এখন আমাদের কাজ করা খুবই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইচ্ছে করলেই আমরা সবকিছু করতে পারছিনা। আমরা এর আগে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটোরিকশা চলাচল বন্ধ করে দিয়েছিলাম কিন্তু শ্রমিকলীগের যন্ত্রণায় আমরা সেসময় এমন সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে গেছি। তবে গত বছর আমরা লাইসেন্স দিয়েছি যা এ বছরের ৩০ জুন মেয়াদ শেষ হবে। আমরা আশা করি তা পুনরায় নবায়নের জন্য অনুমতি দিবনা। কিন্তু জেলার নবীনগর উপজেলার পৌর শহরে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। এ শহরের প্রায় ৯০শতাংশ রিকশায় কোন হাইড্রোলিক হর্ণ নেই। নবীনগর পৌরসভার মেয়র এডভোকেট শিব শংকর দাসের সাথে কথা হলে তিনি জানান, রিকশায় হাইড্রোলিক হর্ণের যন্ত্রণায় শহরবাসী অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। বিষয়টি আমারও খারাপ লেগেছে তাই আমি সকলের সাথে পরামর্শ করে সকলের সহযোগিতা নিয়ে রিকশা থেকে হাইড্রোলিক হর্ণ জব্দ করে উচ্ছেদ করেছি।
শুক্রবার, ফেব্রুয়ারি ৩
সংবাদ শিরোনাম
- ভালোবাসা দিবসের নাটক “গল্পটা মজনু’র”
- ফকিরহাটে ২০ হাজার টন চাল জব্দ
- বরগুনায় ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজি করছে ভ্যাট অফিসের কর্মচারী, কর্মকর্তারা, বিপাকে ব্যবসায়ীরা
- ময়মনসিংহে আলোচিত বাবা-ছেলে খুনের ২৪ ঘন্টায় গ্রেফতার ৪
- গণতন্ত্র সূচকে দুই ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ
- আইএমএফ ঋণের প্রথম কিস্তি পেল বাংলাদেশ
- ফুলবাড়ীয়ায় যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে নির্যাতন
- মানুষকে বিভ্রান্ত করা রাজনীতির অংশ হতে পারে না: শিক্ষামন্ত্রী