বিশেষ প্রতিনিধি :
আওয়ামী লীগের নামে ভুঁইফোঁড় সংগঠনের আবির্ভাব ও নব্য আওয়ামী লীগারদের কারণে সরকার ও দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। কতিপয় নেতা দলের নাম ভাঙ্গিয়ে যেমন ফায়দা লুটছেন, তেমনি সুবিধা নিয়ে ভিন্ন মতাদর্শীদের দলে ঠাঁই দিয়েছেন। এতে করে সমালোচনার মুখে পড়েছে আওয়ামীলীগ ও এর অঙ্গ সংগঠন। অভিযোগ রয়েছে সরকারি সুযোগ সুবিধা নেওয়া কিংবা এলাকায় নিজের অধিপত্য ধরে রাখতে ভিন্নমতের অনেকেই কিছু নেতাকে ম্যানেজ করে সরকারি দলের ব্যানারে ভিড়েছে। এরা দলের ভেতরে থেকেই বিভিন্ন বিতর্কের সৃষ্টি করছে।
অভিযোগ রয়েছে, সম্প্রতি বহুল আলোচিত হেলেনা জাহাঙ্গীর এক সময়ে মহিলা দলের নেত্রী ছিলেন। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার ভাইরাল হওয়া ছবিটি অনেক প্রশ্নের জন্ম দেয়। পট পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে যান তিনি। বিএনপি মতাদর্শী হেলেনা জাহাঙ্গীর সময়ের ব্যবধানে ভিড়ে যান আওয়ামীলীগে। দলটির মহিলা বিষয়ক উপকমিটির সদস্য হয়ে চমকে দেন সকলকে। এছাড়াও কুমিল্লা জেলা উত্তর আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা নির্বাচিত হন। দলে কয়েকজন আত্নীয় থাকায় পদ পেতে তার কোনো বাঁধা আসেনি। নিজেকে বাংলাদেশ আওয়ামী চাকুরিজীবী লীগের সভাপতি দাবি করা হেলেনা জাহাঙ্গীরকে অবশেষে দলীয় সব ধরনের পদ থেকে বহিস্কার করা হয়।
বিতর্কিত ব্যবসায়ী নেতা হেলেনা জাহাঙ্গীরের পর মনির খান ওরফে দর্জি মনির নামের আরেক ভুঁইফোঁড় নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জননেত্রী শেখ হাসিনা পরিষদ নামের একটি ভুঁইফোড় সংগঠন গড়ে তুলে নিজে নিজেই এর সভাপতি বনে যান মনিরএরকম আরও কয়েকশ ভুঁইফোঁড় সংগঠনের হদিস মিলেছে ইতিমধ্যে।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মুজাহিদ আযমি ও সাধারণ সম্পাদক নাইমুল ইসলাম গেল বছরে কোরবানির ছাগল চুরি করে সমালোচনার মুখে পড়েন। এলাকাবাসি জানিয়েছেন, থানা ছাত্রলীগের ওই দুই নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তারা কেহই মুজিব আদর্শের সৈনিন ছিলেন না। কখনোই তারা ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্তও ছিলেন না। কিন্ত ৩৩ নং ওয়ার্ডের সাবেক এক কাউন্সিলরের মাধ্যমে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে পদ কিনে নেন। স্বার্থান্বেষী এক নেতার কারণে কমিটির উপযুক্ত পদ পাননি ত্যাগী কর্মীরা। অথচ সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে দলটিকে।
এদিকে ক্যাসিনোকান্ডে ইমেজ সংকটে থাকা আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগের ভাবমূর্তি ফেরাতে নতুন কমিটি ঘোষণা করে চমকে দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যুবলীগের সপ্তম জাতীয় কংগ্রেসে সংগঠনটির নতুন চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। কিন্তু বিভিন্ন জেলা কমিটির বিরুদ্ধে রয়েছে তৃণমূলের বিস্তর অভিযোগ। আর সেই অভিযোগের তীর মাথায় নিয়েও কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন সেই সব যুব নেতারা। একই রকম অভিযোগে জর্জরিত নেত্রকোণা জেলা যুবলীগ। অভিযোগ রয়েছে, টাকার বিনিময়ে ছাত্রদলের নেতাদের উপজেলা কমিটিতে সভাপতি ও সদস্য করছেন। জেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীদের নানা অভিযোগের তীর বর্তমান কমিটির আহ্বায়ক মাসুদ খান জনির দিকে। অভিযোগ রয়েছে তার স্ত্রী ঝুমা তালুকদারের বিরুদ্ধেও, যিনি দূর্গাপুরের উপজেলা চেয়ারম্যান। দূর্গাপুরে একটি ব্রিজের কাজ পেয়েছিলেন মাসুদ খান জনি। সেই কাজের জন্য এক ব্যক্তির কাছ থেকে ৮ লক্ষ টাকা নেন তিনি। সেই টাকা এখনও ফিরিয়ে দেয়নি, উল্টো তার যাবতীয় ব্যবসা বাণিজ্য তার দখল করে নিয়েছেন। নেত্রকোনা জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক জামিউল ইসলাম খান জামির বিরুদ্ধেও স্থানীয় নেতৃবৃন্দের অসন্তোষ রয়েছে। এছাড়াও নেত্রকোনা ছাত্রদলের ২০০৩ সালের জেলা কমিটির সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক সাঈদ বিন নূর চৌধুরী পাপ্পুকে করা হয় জেলা যুবলীগের সদস্য। নেত্রকোনা জেলার যুবলীগের বর্তমান বিতর্কিত কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন নেতৃত্বের হাতে যুবলীগের দায়িত্ব তুলে দেওয়ার জন্য দাবী জানিয়েছেন জেলার তৃণমূল যুবলীগের কর্মীরা।