সোহেল আহাদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সদর উপজেলার সুহিলপুরে ২৫ বছর যাবৎ ভূমিহীনদের দখলে থাকা খাস জায়গা স্থানীয় প্রভাবশালীদের লিজ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে গতকাল মঙ্গলবার এবিষয়ে একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন সুহিলপুরের মনু মিয়া নামে এক ব্যক্তি। ভুক্তভোগীরা বলছেন, সুহিলপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সাবেক নায়েব পঙ্কজ ও সদর উপজেলা ভূমি অফিসের অফিস সহকারী নিতাই চন্দ্র এই লিজ দেয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করেছেন। প্রভাবশালীদের লিজ দেয়ার আগে ও পরে জায়গাটি ভোগ দখলকারীদের কোন প্রকার নোটিস করা হয়নি। অভিযোগপত্র ও সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, সুহিলপুর হারুনুর রশীদ কলেজের সামনে ৮ শতক খাস জায়গায় র্দীঘদিন যাবৎ মাছ চাষ ও টং দোকান দিয়ে ব্যবসা করে কোন রকম দিন যাপন করছেন মাখন মিয়া, হাসান মিয়া ও মনু মিয়া। তাদের নিজস্ব কোন ভিটা বাড়ি নেই।
এই খাস জায়গাটির পাশেই তারা হেলিপ্যাডের একটি জায়গায় ঘর তুলে থাকছেন। তাদের পরিবারে প্রতিবন্ধী সদস্যও রয়েছে। অপরদিকে বর্তমানে যারা লিজ নিয়েছে তারা আর্থিকভাবে স্বচ্ছল ও সমাজে প্রভাবশালী লোক। তাদের অনেকের বাড়িতেই স্থায়ী ইমারত রয়েছে। স¤প্রতি খাস জায়গাটি সুহিলপুর মুসলিম পাড়ার মৃত ইউসুফ মেম্বারের ছেলে আল আমীন, সেলু মিয়ার ছেলে রাকিব মিয়া ও বকুল মিয়া লিজ নিয়ে নেয়। সরকার থেকে লিজ দেয়ার আগে জায়গাটি ভোগ দখলকারীদের কোন কিছু জানানো হয়নি। ভোগ দখলকারীরা ভূমিহীন ও গরীব লোক হওয়া স্বত্বেও অনিয়মতান্ত্রীকভাবে প্রভাবশালীদের লিজ দেয়া হয়। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করে বলেন, আমরা ভূমিহীন, জায়গাটি দখলকারী ও গরীব লোক হিসেবে আমরাই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জায়গাটির লিজ পাওয়ার কথা। কিন্তু অনিয়মতান্ত্রিকভাবে এই লিজ কিছু প্রভাবশালী ও স্বচ্ছল ব্যক্তিদের দেয়া হয়েছে। এখন আমাদের রাস্তায় নামা ছাড়া কোন উপায় নেই। বিষয়টি জানতে চাইলে সুহিলপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের নায়েব মো. তোফাজ্জল বলেন, এই লিজটি আমার সময় দেয়া হয়নি। এটি করেছেন আগের নায়েব। যিনি বর্তমানে তালশহর পূর্ব ইউনিয়নে আছেন। এ বিষয়ে সুহিলপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সাবেক ও তালশহর পূর্ব ইউনিয়ন ভূমি অফিসের বর্তমান নায়েব পঙ্কজ বর্দ্ধন বলেন, যারা এখন জায়গাটি লিজ নিয়েছে তাদের বাবার নামে এই জায়গাটি আগে লিজ ছিলো। তাই নতুন করে তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে তাদেরকে লিজ দেয়া হয়েছে। অনিয়মতান্ত্রিকভাবে লিজ নেয়ার কাজে সহযোগিতার অভিযোগের বিষয়ে জানতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা ভূমি অফিসের অফিস সহকারী নিতাই চন্দ্র বলেন, যেই জায়গাটি লিজ দেয়া হয়েছে সেখানে কেউ থাকেনা বা দখলে নেই। দীর্ঘ ২৫ বছর যাবৎ জায়গাটি দখলে আছে জানালে তিনি ক্ষীপ্ত হয়ে উঠেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার এসিল্যান্ড সাইফ-উল আরেফীন বলেন, যারা বর্তমানে জায়গাটি ভোগ দখল করে আছেন তারা আগে আবেদন করেননি। এখন যেহেতু লিজ হয়ে গেছে তাই বাদ দেয়া একটা জটিল প্রক্রিয়া। এরপরও লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। যারা আগে থেকেই জায়গাটি ভোগ দখল করে রাখে তারা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে লিজ পাওয়ার অধিকার রাখে কিনা এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, “কিসের ভিত্তিতে তারা দখলে রেখেছেন সেটা আগে দেখতে হবে”।