আবু হেনা মুক্তি, খুলনা
বিদ্যুতের ভয়াবহ লোডশেডিংয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছে খুলনাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাধারণ মানুষ। হঠাৎ করে গত কয়েক দিন ধরে লোডশেডিংয়ে নাকাল খুলনাবাসী। দিনের পাশাপাশি গভীর রাতেও বিদ্যুতের লুকোচুরি চলছে। বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, গ্যাস ও ডিজেলের সরবরাহ কম থাকায় বিদ্যুতের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ফলে চাহিদার বিপরীতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। এদিকে লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে অনেকে প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ওজোপাডিকোর সূত্রে জানা যায়, ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের আওতাধীন খুলনা বিভাগের ১০ জেলা, বরিশাল বিভাগের ৬ জেলা, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুরসহ ২১ জেলায় গ্রাহক রয়েছে ১৪ লাখ ২৮ হাজার। সোমবার পদ্মার এ পাড়ের ২১ জেলায় বিদ্যুতের চাহিদার বিপরীতে ঘাটতি ছিল ১৩৪ মেগাওয়াট। এর মধ্যে দিনে অফপিক আওয়ারে ৭৬ মেগাওয়াট এবং রাতে পিক আওয়ারে ৬২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতি ছিল। ফলে বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুতের সরবরাহ বন্ধ রেখে ঘাটতি পূরণ করতে হচ্ছে। খুলনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সূত্রে জানা যায়, পলী বিদ্যুতের গ্রাহক প্রায় ৪ লাখ। গ্যাস ঘাটতির কারণে উৎপাদন বিঘিœত হচ্ছে। খুলনা জেলায় পলী বিদ্যুতে ৬৫-৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন। সেখানে ঘাটতি ১৫ মেগাওয়াট। মাঝে মধ্যে ঘাটতি বেড়ে যায়। পলী বিদ্যুতের গ্রাহক দাকোপ উপজেলার কৈলাশগঞ্জ ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের সদস্য গাজী ফয়সাল আলম বলেন, প্রতিদিন বিদ্যুৎ সকালে চলে যায় এবং রাত ১০টার ভেতরে মাঝে মধ্যে আসে। এই কারণে ছাত্র-ছাত্রীরা পড়াশোনায় অনেক পিছিয়ে পড়ছে। কৃষি কাজেও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হতে হচ্ছে। গভীর রাতে বিদ্যুৎ না থাকায় সিসিটিভি বন্ধ থাকে, এই সুযোগে চুরি ডাকাতির পরিমাণও বেড়ে যাচ্ছে। রূপসা উপজেলার দক্ষিণ নন্দনপুর এলাকার লাকি বেগম বলেন, আগের মতো আবারও লোডশেডিং নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিদ্যুৎ গেলে আর আসে না। সেই আগের মতো লোডশেডিংয়ের সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। প্রায় মাসখানে ধরে বিদ্যুতের সমস্যা খুব বেশি হচ্ছে। বিএল কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ফাহিম মুনতাসির সাফিন বলেন, দিনে-রাতের অধিকাংশ সময় বিদ্যুৎ থাকছে না। বিশেষ করে রাতে পড়ার সময়ে বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। এতে লেখাপড়া করতে সমস্যা হচ্ছে। এছাড়া ডিজিটাল বাংলাদেশে সবকিছুতেই এখন ইন্টারনেট ব্যবহার বেড়েছে। সেখানেও সমস্যা হচ্ছে। নগরীর সোনাডাঙ্গা এলাকার সাইদুল ইসলাম বলেন, ঘন ঘন বিদ্যুৎ যাচ্ছে-আসছে। এতে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া ক্ষতি হচ্ছে। আর ভ্যাপসা গরমে ঘরে থাকা যাচ্ছে না। ফ্রিজ-টেলিভিশন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। হঠাৎ করে বিদ্যুতের সমস্যায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
সোমবার বিকেলে খুলনা পলী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মোঃ জিলুর রহমান বলেন, লোডশেডিংয়ের খুব খারাপ অবস্থা। গ্যাস ঘাটতির কারণে উৎপাদন বিঘিœত হওয়ায় এ লোডশেডিং হচ্ছে । ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ওজোপাডিকো) খুলনা সদর দপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ রুহুল আমিন বলেন, পদ্মার এপাড়ের ২১ জেলার শহর অঞ্চলে গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ১৪ লাখ ২৮ হাজার। খুলনায় আমাদের গ্রাহক আছে প্রায় ২ লাখ ৪৫ হাজার। ২১ জেলায় মোট ৫৮০ মেটাওয়াট বিদ্যুৎ লাগে। এর ঘাটতি আছে ৩০-৩৫ মেটাওয়াট। আর খুলনায় ঘাটতি আছে ১২ মেগাওয়াট। এটা ফিক্সড থাকে না, ওঠানামা করে। সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আজহারুল ইসলাম বলেন, বিদ্যুতের চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ কমেছে। গত তিনদিন এমন চলছে। এটা শুধু খলনায় নয়, সারাদেশে হচ্ছে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, গ্যাস এবং ডিজেলের সংকটের কারণে বিদ্যুতের সরবরাহ কমেছে। দ্রæত এই অবস্থার অবসান ঘটবে বলে তিনি আশাবাদী।