এইচ এম জালাল আহমেদ
রাজধানী থেকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী অর্থাৎ হকার উচ্ছেদ অসম্ভব। রাষ্ট্র চাইলেও সম্ভব হবে বলেও মনে হয় না। কারন তারা কঠিন সিন্ডিকেটে অবস্থান করছে। ঢাকা উত্তর সিটি মেয়র কয়েকবার পদক্ষেপ নিয়েও পেছাতে বাধ্য হয়েছেন। তিনি পূর্বে অনেক হুঙ্কার দিলেও এখন আর হকার নিয়ে টুশব্দও করছেন না। করেও লাভ নেই। রাজধানীর এ হকার নামের ফুটপাতের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা অবস্থানগত দেখতে অভাবী মনে হলেও রাজনৈতিক দলের চেয়েও শক্তিশালী। হকার নিয়ে কোন পেশার মানুষের মধ্যে দ্বিমত করার কেউ নেই। সবাই ঐক্যে থাকেন। তা নিজেদের স্বার্থেই থাকেন। হকার মানে সোনার হরিণ। বিনা পুঁজির অধিক আয়ের আর্থিক খাত। এখান থেকে অর্থ উপর্জনে কোন বিনিয়োগ করতে হয় না। লাখ লাখ টাকা আসে সীমিত এলাকা থেকে। তাই তো পুলিশ পথচারীদের চলাচল স্বাভাবিক না রেখে হকার নামের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ফুটপাত দখল নিচ্ছে। তাদের নিরাপদ রাখতে পুলিশ পাহারা দিচ্ছে। সাধারণ মানুষ এখন আর ফুটপাত দিয়ে স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারেন না। চলতে পারছেন না রিকশাসহ কোন যানবাহন। হেটে যেতেও পড়তে হয় চরম ভোগান্তিতে হারাতে হয় মোবাইল সহ নানা সম্পদ। পড়তে হয় ছিতাইকারীদের কবলে।
পূর্বের কয়েকবার আলোচনায় বলেছি ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার অত্যন্ত সৎ পুলিশ কর্মকর্তা। তার সততা নিয়ে প্রশ্ন তোলার কেউ নেই। তারমত একজন সৎ পুলিশ কমিশনারের মাধ্যমেও ডিএমপির বাঁশের চেয়ে কঞ্চি মোটাদের অপসারণ বা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেননি। পারেননি বা করেননি কোনটাই জানিনি। জানার চেষ্টাও করিনি। কারন জেনে কোন লাভ নেই। রাজধানীর ফুঁটপাত মোটা অঙ্কের টেন্ডার হয়েছে। যদিও রাষ্ট্র বা সরকার এ অঘোষিত প্রকাশ্যে টেন্ডারের কোন অর্থ পাচ্ছে না। পাবার কোন সুযোগও নেই। ফুটপাতের হকার নামের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের থেকে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা আসে নানা পেশার কতিপয় মানুষের হাতে। এ জন্য তাদের কোন অর্থ বিনিয়োগ করতে হয় না। শুধু প্রভাব থাকলেই হয়। হকার থেকে কোন পেশার ব্যক্তিরা নিয়মিত অর্থ নিচ্ছে না সে পেশা খুজে পাইনি। সব ক্ষেত্রে নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক না থাকলেও হকাদের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কঠিন ও মধুর সম্পর্ক রয়েছে। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন নানা পেশার কতিপয় কথিত প্রভাবশালীদের নিয়ে টেকসই একটা সিন্ডিকেট তৈরি করে হকার নিরাপদ রাখতে পাহারা দিচ্ছে।
উদাহরন হিসেবে বলা যায় রাজধানীর দেশের আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর চত্তর বাবুসসালাম মসজিদ ও মাদ্রাসা থেকে রেল লাইন অতিক্রম করে হজক্যাম্প হয়ে আশকোনা পর্যন্ত। হজক্যাম্প মুক্তিযোদ্ধা মার্কেট থেকে বঙ্গমাতা বিদ্যালয় কলেজের সামনের সড়ক বলতে গেলে পুরোটাই হকার নামের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের দখলে। তাদের নিরাপদে বেচাকেনা করার জন্য বিমানবন্দর গোলচত্তর বক্সের পুলিশ নিরলস বিরামহীন দায়িত্ব পালন করছেন। তারা পথচারী বা সিএনজি বা কোন গাড়ীতে চলাচলরতদের হাতের মোবাইল টেনে নেয়া ঠেকাতে না পারলেও সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক চলাচল বন্ধ রাখতে সক্ষম হচ্ছেন। এ কাছে আনসার বিডিবি ও পুলিশ নিরলস দায়িত্ব পালন করছে। তাদের দায়িত্ব হচ্ছে দক্ষিণখানসহ পূর্ব এলাকা থেকে বিমানবন্দরে আগত সাধারণ মানুষের বাহন অটোবাইক ও রিক্সার প্রতিরোধ করা। তারা তিনটি স্থানে এ দায়িত্ব পালন করছে। পোষ্ট নং এ হচ্ছে বঙ্গমাতা বিদ্যালয় ও কলেজ রোডের উত্তর মায় অটোবাইক ও রিকশা ঠেকিয়ে দেয়া। রিকশা ও অটোবাইক সড়কে ঢুকলে হকার নামের ক্ষুদ্র ব্যভসায়ীদের বেচাকেনায় ক্ষতি হবে। তাই বিমানবন্দর গোলচত্তর থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার থেকে যাত্রীদের হেটে আসতে হচ্ছে বাহন ছেড়ে।
পোষ্ট নং দুইঃ এটা হচ্ছে আশকোনা সড়কের পশ্চিম প্রান্ত সিরাজ হোটেল মোড় এ রিকশা ভ্যান ও অটোবাইক ঠেকিয়ে যাত্রী নামিয়ে দেয়া। একইভাবে পার্শ্ববর্তী সড়ক কাওলা বাজার সড়ক এর উত্তরপ্রান্ত হজক্যাম্প এর কোনায় অটোবাইক ও রিকশা ঠেকিয়ে যাত্রী নামিয়ে দেয়া। এখানে অন্যান্য সময় পুলিশ আনসার পাওয়া না গেলেও প্রতিদিন দুপুর ২টা থেকে রাত একটা পর্যন্ত অবিরাম এবং নিরলস দায়িত্ব পালন করতে দেখা যাবে। এ দায়িত্ব পালন করতে তারা কখনো অবহেলা করেন না। অবশ্য অবহেলা করবেনইবা কেন? এখানে অবহেলা করলে সালামির অর্থ হাত ছাড়া হয়ে যাবে। তাই বিধাতার ডাকও ঠিকমত করতে পারেন না তারা। যতক্ষণ না করে পারেন তক্ষণ কষ্ট হলেও ওখানে দায়িত্ব পালন করে থাকেন। না করলেই তো আর্থিক ক্ষতি। যে সময়টি ওখানে উপস্থিত থাকবেন না ততক্ষণ সালামি থেকে বঞ্চিত হবেন। বঞ্চিত যাতে না হতে হয় সে ব্যাপারে তারা যথার্থতার সাথে সতর্ক থাকেন। চমৎকার তাদের দায়িত্ব কর্তব্যবোধ সেখানে দেখা যায়। রাত দেড়টা ২টায় যখন দায়িত্ব ও কর্তব্য শেষ করে বাসায় ফেরার সময় ব্যাটারিত চালিত একটা রিক্সায় যাওয়া খুব কষ্ট হয়ে যায়। কারন মাছ তরকারী ফলসহ নানাবিধ পণ্যের ব্যাগ সামলানো কঠিন হয়ে যায়।
শুধু যে বিমানবন্দর উল্লেখিত সড়কেরই অবস্থা অমন তা নয়। রাজধানীতে আরো অনেক সড়ক রয়েছে যেখানে এর চেয়েও কঠিন পরিস্থিতি রয়েছে যা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করানো কঠিন। লাখ লাখ নয় কোটি কোটি টাকার প্রকল্প। এ প্রকল্পে কোন অর্থ বিনিয়োগ করার প্রয়োজন হয়না। কারন রাজধানীর যে কোন ফুটপাত হোক সেখানে দোকান বাসাতে হলে স্থান বাবদ সর্বনিন্ম ২৫ হাজার টাকা দিতে হয় সিন্ডিকেটকে। এ অর্থ গ্রহণ হচ্ছে স্থানীয় পুলিশ ফাড়ি ও বক্সের আইসির নামে। এ নামে অর্থ আদায়ের জন্য ভাগ ভাগ করে নিয়োজিত ব্যক্তি রাখা রয়েছে। তাদেরকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ভাষায় লাইনম্যান বলা হয়। তারা ফুটপাতে অবস্থান করে অধিক প্রভাব নিয়ে। তাদের প্রভাব সরেজমিনে না দেখলে অভিনয়ের মাধ্যমেও ফুটিয়ে তোলা দুরহ ব্যাপার। আরোচিত বিষয়টি নিশ্চিত করতে ডিএমপির প্রতিনিধি হিসেবে যারা ফাড়ি বক্সের আইসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তাদের অধিকাংশ খুব নোংরা পথ বেছে নিয়েছেন। সে নোংরা বিষয়টি প্রকাশ্যে লিখতে এবং বলতে নিজের কাছেই রুচিহীন মনে হচ্ছে। এ কারনেই তা লিখে আলোচনা শোভনীয় মনে করিনা। তাই বারবার লেখায় ডিএমপি কমিশনারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি এ সব নোংরামিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিন।
যদিও আলোচিত বিষয়টি অনেকের কাছে খুব ছোট বিষয়। কারন এ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা হকার নামে পরিচিত। তাদের পরিচয় যাই হোক তাদের মাধ্যমে অধিক অর্থ আসছে বিনা পুঁজিতে। এ অর্থেরভাগ হয়ে সব পেশার একই রুচির ব্যক্তিদের মধ্যে। সমগ্র ঢাকা মহানগরীতে হকার নামের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অবস্থান রয়েছে ব্যাপক প্রভাবের মধ্যে। তাদেরকে উচ্ছেদ করতে চাইলেও করা কঠিন এবং করতে পারবে বলেও মনে করার কোন সুযোগ নেই। যাই হোক আমার আলোচনাটি এ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদের জন্য নয়। আলোচনার মুল বিষয় হচ্ছে তাদেরকে ব্যবহার করে যে নোংরামির সাথে ডিএমপির কতিয় কর্মকর্তা ও সদস্য জড়িয়ে নোংরামি করছে সে বিষয় নিয়ে। আশা করি দৈনিক আমাদের কণ্ঠ পত্রিকার স্বাভাবিক এ আলোচনার মর্ম বিষয় সবার ধারণায় দিতে সক্ষম হয়েছে। সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা কর্তৃপক্ষ আলোচিত বিষয়ে দৃষ্টি দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
বৃহস্পতিবার, জুন ১
সংবাদ শিরোনাম
- জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশন শুরু
- লঞ্চে মোটরসাইকেল পারাপারে নিষেধাজ্ঞা থাকছে না
- দেশের সবচেয়ে বড় এডুকেশন এক্সপো সোমবার
- কমলগঞ্জে অভিনব কায়দায় সিএনজি চুরি : কৌশলে নগদে টাকা আদায়
- রূপগঞ্জের মুড়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের উন্মোক্ত বাজেট ঘোষণা
- এনবিআরের দাবি করা কর দিতে হবে ড. ইউনূসকে
- কাউকে জেতানো বা পরাজিত করা ইসির দায়িত্ব নয়
- ভালুকায় অসংক্রামন রোগের কারণ ও প্রতিরোধে করণীয় শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত