এইচ এম জালাল আহমেদ
সম্মানিত পাঠকুল সব সময় নানা ঘটনা নিয়ে আলোচনা করে আসছি। আজকে আলোচনা করছি ভিন্ন ও নিজ বাস্তবতাকে নিয়ে। রাষ্ট্রে অনেক নারী পুরুষ নানা বয়সের মানুষ গুম হয়েছে। কিছু কিছু গুম হবার পর উদ্ধারের ঘটনাও রয়েছে। যেখানে সেখানে প্রায়ই হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটছে। সড়কে দুর্ঘটনা নিত্যদিনের ঘটনা। পাশাপাশি স্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনাও কম নয়। এ সবগুলোতে মানুষের প্রাণহানি ঘটে। প্রত্যেক মৃত্যু ব্যক্তির স্বজন থাকে। সন্তানের সামনে বা কাঁদে মা বাবা বা বড় ভাই বোন বা যে কোন সম্পর্কের বড়দের লাশ বহন যতটা না ওজন তার চেয়ে অধিকভারী বাবার কাঁদে সন্তানের লাশ। এ লাশ যেভাবেই ঘটুকনা কেন ওজন বহন করা বড়ই কঠিন। স্বজনদের এ শোক বইবার কষ্টটা কতটা যে ভারী তা যারা শোক বইয়ে বেড়াচ্ছেন তারা ছাড়া অন্যরা উপলদ্ধি করতে তেমন পারবেন বলে মনে হয়না। যেমনটি আমি এক কঠিন শোক বইতে গিয়ে এ আলোচনা করছি। আমার বড় ভাইর কণিষ্ঠ চেলে বোরবার দিনগত রাতে চির বিদায় নিয়ে চলে গেছেন চির নিজ ঠিকানায়। তার অকাল মৃত্যু আমাদের পরিবারকে দ্বিতীয়বারের মতো শোকাহত করছে। খুব একটা ভারী শোক বইতে হচ্ছে এবং বাইছি। সে শোকাহত মন থেকে উপলদ্ধির আলোকে আলোচনাটি করার চেষ্টা করছি মাত্র।
সম্মানিত পাঠককুল, গতকাল আলোচনা করেছি দেশের পৃথক তিনটি স্থানে ট্রিপল করে হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে। এ সংঘটিত পৃথক তিন ঘটনায় শিশু ও নারীসহ ৯ ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। হত্যাকান্ডের বিষয়ে যতটুকু তথ্য এ পর্যন্ত তদন্তকারী সংস্থা প্রকাশ করেছেন এবং আইনি ব্যবস্থা নিয়েছে রাষ্ট্র তাতে দেখা যায় খুনিরা স্বজন। আলোচিত ৯ হত্যাকান্ড ছাড়াও প্রায়ই বাবা, মা, ভাই বোন, দুলাভাই ও চাচা ফুফাদের হাতে হত্যকান্ডের ঘটনার ঘটছে। সামনের দিনগুলোতে ঘটবে না তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারবেন না। ওগুলো নিয়ে আজকে আলোচনা করব না। কারন আমি বিদ্যমান পরিস্থিতিতে কাঁদে লাশ বহন না করলেও খুব কঠিন এক শোক বইছি। আমার আপন বড় ভাই’র কণিষ্ঠ ছেলে মেকানিক্যাল প্রকৌশলী মোহাম্মদ রিয়াজুল ইসলাম রিয়াজ গত ২০ জুন রোববার দিনগত রাত দেড়টায় চির বিদায় নিয়ে চলে গেছে তার নিজ চির ঠিকানায়। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। তার এ অকাল মৃত্যুর পর আমাদের ও তার মা বাবার শোকের মাতনটা সত্যিই খুব কঠিন। প্রত্যেকের আহাজারি ছিল অধিক বেদনার। আমাদের শোকের মাত্রার চেয়ে তার মা বাবা ভাই বোনদের শোকের মাতমটা যে কতটা ধারনের বাইরে তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন।
সম্মানিত পাঠককুল আজকে আলোচনাটা ভিন্ন এবং নিজ বাস্তবতার ওপর কেন আলোচনা করছি ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে তা তুলে ধরার চেষ্টা করছি। ভাতিজা রিয়াজ এর মৃত্যুরপর আমাকে ওদের বাবা মা ভাই বোন বোধ করে বিদ্যমান শোকের মাত্রার সাথে একটু অনুমান করে দেখলাম। যারা বিগত দিনগুলোতে গুম হয়ে আজো কোন সন্ধ্যান মেলানো যায়নি। যারা নানা ঘটনা চক্রে অন্যদের হাতে প্রাণ হারিয়ে হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন। যারা চলার পথে নানা সড়কে গাড়ীর চাকার চাপায় বা ধাক্কায় ছিটকে পড়ে প্রাণ হারিয়েছেন তাদের স্বজন একইভাবে ভাবলাম। মৃত্যুগুলো যেভাবেই ঘটে থাকুক না কেন স্বজনরা আপন হারিয়েছেন। ফিরে না আসার নিশ্চিতে হারিয়েছেন। হাজারো চেষ্টা করেও এদের কাউকে ফিরিয়ে আনা কোনদিন ধরায় সম্ভব হবেনা। যেমনটি সম্ভব হবে না আমার ভাতিজা রিয়াজের প্রাণকেও। সে নিশ্চিত চিরতরে হারানোর ব্যধনাটাই তাড়িয়ে বেরাচ্ছে বিবেককে। সে তারনার উপলদ্ধি থেকেই এ আলোচনা। এখানে ভাতিজা রিয়াজের কিছু বিষয় আলোচনায় স্থান দিতে চাই। কারন আর কোন রিয়াজ স্বজন এভাবে ভুল না করেন। আর যেন কোন সুশিক্ষিত রিয়াজ যেন অমন কোন সমস্য সাধারণভাবে এড়িয়ে না যান।
সম্মানিত পাঠককুল রিয়াজকে নিয়ে যে কথাটা বলতে চাই তা হচ্ছে, রিয়াজ চলে গেছে তার প্রাণহীন দেহটি রেখে গেছে মা বাবা ও স্বজনদের কাঁদে। যে লাশের ওজন বইতে কষ্ট হচ্ছে তার মা বাবা ভাই বোনসহ গোটা স্বজনের। সত্যি বড়ই কঠিন। শোকের মাতমে যেন বুকের ভেতরটা পাথর চাপার মত লাগছে। কেমন যেন বাকরুদ্ধ হয়ে যাচ্ছি। রুমাল দিয়েও চেপে রাখতে এবং থামাতে পারিনি চোখের পানি ঝড়া। হৃদয়টা যেন কালবৈশাখির ঝড়েরর মত কাপিয়ে তুলছে। ভাতিজা রিয়াজ ৪/৫ দিন ধরে বুকে ব্যাথা অনুভব করছিল। অনেকের কাছে বুকের ব্যথার বিষয়টি জানিয়েও ছিল। সবাই মনে করছিল কম খায় বলে গ্যাস চেপে বসেছে। তাই গ্যাস প্রতিরোধের ওষুধ কাইতে পরামর্শ দিয়েছেন। সেমতে রিয়াজ গ্যাসের ওষুধ সেবন করেছে। কিন্তু রোগ বা ব্যাধিটা ভিন্ন ছিল তা কেউ ধারনা করতে পারেননি। রিয়াজের শেষ বিদায়ের পর ডাক্তারের মাধ্যমে জানা গেছে তার প্রকৃতপক্ষে হার্ড এর রোগ ছিল। সে কালকে হার্ড ফেল করার পর রক্তক্ষরণে প্রাণহারিয়েছে। জীবিত থাকলে হয়ত তার কাছ থেকে বিস্তারিত জানা যেত। এখন জেনেই আর লাভ কি? যা ঘটার তাই ঘটে গেছে। এখন শুধু কঠিন শোক বইয়ে বেরানো ছাড়া বিকল্প কোন উপায় নেই। সুযোগ নেই এ ভুলের মাশুল দেবার। সুযোগ নেই হারানো সময়টা ফিরিয়ে আনা।
সম্মানিত পাঠককুল আলোচনাটা নিজের উপলদ্ধি থেকে করছি বলে ভিন্ন ভাবনার সুযোগ নেই। আলোচনাটি এখানে দাঁড় করাতে চাই আমরা বা রিয়াজ যে ভুলটা করছে সেভুল যেন অন্য কেউ না করেন। এ ভুলের মাশুল নেই। এ ভুলের পরিনতি কঠিন শোক। শোকের পরিধিটা অনেক লম্বা ও সরু। ধারন ক্ষমতার বাইরে তারপরও বইতে হচ্ছে। নিশ্চিতভাবে এ কঠিন শোক আমাদের ও রিয়াজের মা বাবা ভাই বোনদের সারা জীবন বইতে হবে। এ শোক সংশোধনের কোন উপায় নেই। কিন্তু আরো যারা রিয়াজ রয়েছেন তারা যেন অমন ভুল না করেন। তারা যেন কোন কঠিন ব্যধিকে লুকিয়ে না রাখেন। তারা যেন নিজ শরীরের ব্যধিটা যেন স্বজনের কাছে প্রকাশ করেন। হয়ত যার যতটুকু নিয়তির লিখন রয়েছে ততক্ষণ বেচে থাকবেন। বিধাতা যেদিন মৃত্যুর সময় ও তারিখ নির্ধারন করে পাঠিয়েছেন এবং যে ঘটনাচক্রে প্রাণের শেষ পরিনতি ঘটবে সেভাবেই ঘটবে। যেমনটি ভাতিজা রিয়াজের ঘটেছে। অপরদিকে যা ঘটছে আমার ক্ষেত্রে। এখন তো আমার এ কথা লেখার সময় না এবং সুযোগ থাকত না। যদি রিয়াজের মৃত্যুর খবর পাবার সাথে সাথে বাড়ি যেতে পারতাম। কেন প্রাণপ্রিয় ভাতিজার মৃত্যুর খবর শোনার পরও তার লাশের পাশে শেষবারের মত তার মা বাবা ভাই বোন চাচা চাচি ফুফু ফুফাসহ অন্যান্য স্বজন ছাড়াও শোকাহতদের সাথে দাঁড়াতে পারিনি। বিষয়টি এখানে আলোচনা করতে চাইনা এবং করব না। শুধু অনুরোধ করব কোন মা বাবা ও ঘণিষ্ঠস্বজনদের যেন এরূপ কঠিন শোক বইতে না হয়। এ শোক যে পৃথিবীর কঠিন শোক। কোন বাবার কাঁদে যেন সন্তানের লাশ না বইতে হয়!!