এইচ এম জালাল আহমেদ
রাষ্ট্র সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্যাটারিচালিত কোন রিকশা সড়কে চলবে না। এ ধরনের যানবাহন সড়ক থেকে প্রত্যাহার করবে। এ বিষয়টি বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণকারী বাহিনী পুলিশ। সরকারের ঘোষণার সাথে সাথে তারা বিভিন্ন পদ্ধতিতে রিকশাটি বন্ধের কার্যক্রম ইতিমধ্যেই অভিযান চালিয়ে শুরু করেছে বলে বিভিন্ন মাধ্যমে জানা গেছে। রাষ্ট্রের গৃহীত সিদ্ধান্তটি যথার্থ এ কারনে যে অনেক পূর্বেই দেশের সর্বোচ্চ আদালত একটা নির্দেশনা দিয়েছে। আদালতের নির্দেশনা মানতে সরকার ও জাতি বাধ্য। প্রশ্ন ওঠছে আদালতের নির্দেশনা থাকার পরও ইতিপূর্বে কেন কার্যকর করার পদক্ষেপ নেয়া হলো না? দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণকারী বাহিনী বারবার পদক্ষেপ নিয়েও পেছন ফিরে আসছে কেন? এসব প্রশ্ন সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক ভাবে আলোচনা সমালোচনার খোরাক যোগিয়েছে। সে কারনে আমার আলোচনা তাদের সমালোচনার বিষয়বস্তু নিয়ে। রাষ্টের হিসেব মেলানো উচিৎ সারা দেশে তৈরি হওয়া কোটিকোটি টাকার ব্যাটারিচালিত রিকশা রয়েছে। এ রিকশাগুলো ডাম্পিং এ ফেলে নষ্ট করে দিলে কতটা আর্থিক ক্ষতি সাধিত হবে। হিসেব মিলাতে হবে কত মানুষ তার নিজ কর্মসংস্থান বা আয়েরপথ হারাবেন। রিকশা সড়কে নামতে দেয়া না হলে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণকারী বাহিনী কতটা বিপাকে পড়বে। এ রিকশা আটক ছেড়ের দেবার নামে নানা নাটকের জন্ম হবে। সব মিলিয়ে সংকটটি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা ভাবতে হবে।
গতকাল আলোচনায় আকার ইঙ্গিতে কয়েকটি বিষয় আলোচিত হয়েছে। সেখানে যা বলার বলা হয়েছে। আজকের আলোচনা ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের সিদ্ধান্তটি বিশেষ কারনে ইতিবাচক। অপরদিকে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা রয়েছে। তাছাড়াও রয়েছে নানা জটিলতা। সব মিলালে বন্ধের বিপক্ষে অবস্থান নেবার সুযোগ থাকে না। ঠিক বিপরীতটা চিন্তা করলে বিরোধীতা না করারও সুযোগ নেই। প্রকৃতপক্ষে রিকশাটা বন্ধ করা বাঞ্ছণীয়। তবে গরীব মানুষের আর্থিক ক্ষতি ও দেশের কোটি কোটি টাকার সম্পদ ধ্বংসের বিষয়টি বিবেচ্য। ব্যাটারিচালিত রিকশার সাথে নানাভাবে যারা জড়িয়ে রয়েছেন তারা কি রাষ্ট্রের এ সিদ্ধান্ত সরকার বাস্তবায়ন করুক তা চাইবেন? আমার তো মনে হয় না তারা ক্ষমতাসিন জোটের কেউ হলেও মুখে কিছু না বললেও বাস্তবায়ন চাইবেন। তারা বাস্তবায়নে পরোক্ষভাবে এ পদক্ষেপের বিরোধীতা অবশ্যই করবেন। অপরদিকে রাজনৈতিক কিছু মহল ও দল নিশ্চিতভাবে রিকশা চালকরা কোন কর্মসূচি দিলে তাদের সমর্থন জানাবেন। অবশ্য ইতিমধ্যেই কয়েকটি রাজনৈতিক দল রিকশাবন্ধের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে কথা বলে ফেলছেন। তারা তাদের পক্ষে বিভিন্ন যৌক্তিক যুক্তি তুলে ধরছেন।
কে কি বলছেন তা বড় বিষয় নয়। যে বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন বলে বিশ্লেষকরা ও আলোচকরা মনে করে তা হচ্ছে, রিকশা সড়কে নামা প্রতিরোধ করতে কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণকারী বাহিনী। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হিসেবে যতটুকু মৌখিক জানা গেছে তা হচ্ছে যেখানে রিকশার ব্যাটারি চার্জ দেয়া হয়ে সে গ্রেজের বৈদ্যুতিক লাইন বিছিন্ন করে দেয়া হচ্ছে। রাস্তায় রিকশা বের হলেই পুলিশ রিকশা আটক করে ডাম্পিং এ পাঠিয়ে দিচ্ছে এবং কতেক রিকশা আটক করে থানা হেফাজতে নেয়া হচ্ছে। অবশ্য এ দু’টো পদক্ষেপ ছাড়া কার্যকর ভিন্ন কোন পদক্ষেপ নেবার সুযোগ পুলিশের হাতে নেই। এ ক্ষেত্রে নানাজনের কাছে নানা তথ্য চাউর হচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন রিকশা আটক ছেড়ে দেয়া নেয়া নিয়ে ইতিমধ্যেই বেচাকেনা হচ্ছে। সোজা কথা বানিজ্য হচ্ছে। অনেক রিকশা গ্রেজের মালিকরা কর্তৃত্ববাদের অংশিদার হিসেবে পুলিশকে এড়িয়ে থাকার প্রচেষ্টা চালানো শুরু করেছেন। এ ক্ষেত্রেরও নানা বানিজ্যের কথা শোনা যায়। জানি না তা কতোটা সত্য মিথ্যে। সত্য হোক বা না হোক সাধারণ মানুষের মধ্যে বানিজ্যের বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে মালিকানার রিকশা চালকরাও বসে নেই তারাও স্থানীয় পুলিশ প্রশানসনকে পক্ষে নিতে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছেন।
মূল কথা হচ্ছে, বানিজ্যের বিষয়টি পুলিশ প্রশাসন তো দুরে থাক যারা বানিজ্যে অর্থবিনিয়োগ করছেন তারাও কখনো এ সত্যিটা স্বীকার করবেন না। তারা স্বীকার করবেনইবা কিভাবে? এটা প্রকাশ পাইলে তো তাদের কর্তৃপক্ষ কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবেন। জড়িতদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোন পদক্ষেপ সরকার নিতেই পারে এবং নেয়া উচিৎ। কিন্তু যে ব্যবস্থাই নেকনা কেন কোনভাবেই চলমান বানিজ্য ও তদবির এড়ানো অসম্ভব। নানা কারনে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলের মাত্রাটা কমাতে পারলে পারতেও পারে। অনেকের আশঙ্কা সরকার কিছু সংখ্যক রিকশা চালকদের কাছ থেকে রিকশা কেড়ে নিতে পারলেও পরিপূর্ণভাবে প্রতিপালন বড়ই কঠিন এবং দুরহ ব্যাপার। সুতরাং স্পষ্ট করেই বলা যায়, রাষ্ট্র পরিশেষে ব্যাটারিচালিত রিকশা পুরো উচ্ছেদ করতে পারবে বলে মনে হয় না। যতটুকু জানা গেছে তাতে ধারনা হয়েছে যারা রিকশা তৈরি করে বিক্রি ও ভাড়ায় সড়কে ছেড়েছেন তাদের অধিকাংশ ক্ষমতাসিন দলের নেতাকর্মী। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনও ওসব নেতাকর্মীর স্বার্থের বাইরে হস্তক্ষেপ করবে বলে মনে হয় না। যদি হস্তক্ষেপ করতে নাইবা পারেন তাহলে এখানে বানিজ্যের ছাপ জেগে ওঠছে। জানি না এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ দৃষ্টি দিয়ে প্রতিরোধ করতে পারবেন কিনা। না পারার সম্ভাবনার কথা বলছেন অনেক আলোচকরা।
পরিশেষে আলোচনার সমাপ্তি এ কথা বলে টানতে চাই। রাষ্ট্র ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধ করতে পারলে অভিনন্দন জানাব। কিন্তু রিকশা বন্ধ করতে গিয়ে লাখ লাখ মানুষকে বেকার করে আর্থিক ক্ষতিতে ফেলে যেন না দেয়। গরীব মানুষের মধ্যে যেন অপুরণীয় আর্থিক সংকট সৃষ্টি না হয়। কোটি কোটি টাকার সম্পদ যেন ধ্বংস করা না হয়। এ ব্যাপারে যেন বিকল্প কোন নুতন ব্যবস্থা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। সড়ক বা রাজপথ থেকে রিকশা উচ্ছেদের নামে যেন কোন বানিজ্য করার সুযোগ না পায়। কোন কর্তৃত্ববাদ যেন হস্তক্ষেপ করে সরকারের গ্রহীত পদক্ষেপটি থেকে সরকারকে পেছনে ফিরে আসতে বাধ্য না করে। আরো অনেক বিষয় রয়েছে যা একানে প্রকাশ্যে এসে কিছু নোংরা বিষয়কে পরিচিত ঘটানো সম্ভব নয়। তা তা নিয়ে আলোচনা করা থেকে বিরত থাকাই ভাল এবং বাঞ্ছণীয়।
তবে যে কয়টি বিষয় তুলে ধরা হয়েছে সেগুলো প্রতিরোধ করা না হলে সব চেয়ে বেশী বিপাকে থানা পুলিশ পড়তে পারে। তাদের বিরুদ্ধে সত্য মিথ্যে আলোচনা সমালোচনা চাউর হতে পারে। তাই বলা হয়েছে রিকশা সড়কে চলা বন্ধ করতে হলে কিছু ক্ষমতা প্রয়োগ করাও বোধ হয় বাঞ্ছণীয়। নইলে বাস্তবায়নে বড় ধরনের ধাক্কা পড়তে পারে। জাতির প্রত্যাশা গরীবের ব্যাপক আর্থিক ক্ষতিতে না ফেলে যেন যথার্থ পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। জানি না রাষ্ট্র বা সরকার আলোচিত বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখবে কিনা। সচেতন মহলের ধারনা সরকার বা রাষ্ট্র পদক্ষেপটি বাস্তবায়ণ করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিবে। তাই বলছি রাষ্ট্র যেন নিশ্চিত করে, সম্পদ আর্থিক ক্ষতি বানিজ্যে দিকে নজর রেখে রিকশা বন্ধ বাস্তবায়ন করবে সরকার। অর্থাৎ রিকশা প্রত্যাহারে সম্পদ আর্থিক ক্ষতি বানিজ্য যেন না ঘটে সেদিকে সরকারের নজর দারী প্রয়োজন।