এইচ এম জালাল আহমেদ
পূর্বের আলোচনায় বলা হয়েছে প্রতারক অপরাধীর সাথে পুলিশের বন্ধুত্ব দুঃখজনক। শুধু পুলিশ বাহিনীর কতিপয় সদস্য ও কর্মকর্তার পেশা পরিপন্থি সম্পর্ক দুঃখজনক। ঠিক এ ধারাটা সব পেশার ব্যক্তিদের জন্য বাঞ্ছণীয়। কেউ আইনের উর্ধ্বে নয়। ঠিক তেমনি সব পেশা শ্রেণীর মানুষের প্রযোজন প্রতারক ও যে কোন অপরাধীর সাথে সম্পর্কহীন থাকা। দেশে বিদ্যমান নানা ঘটনায় যথেষ্ট প্রমাণ মিলছে বিভিন্ন পেশার কতিপয় ব্যক্তির আলোচিত সম্পর্ক রয়েছে। এ সব সম্পর্কের পেছনে রয়েছে আর্থিক বিষয়। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় কয়েকটি ঘটনা থেকে বেরিয়ে আসছে প্রতারক, মাদক ব্যবসায়ী ও নানা ধরনের অপরাধের সাথে কতিপয় পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যের সাথে নানা পেশা শ্রেণীর কেউ কেউ জড়িেেয় পড়ছেন। ইতিমধ্যে তেমন প্রমাণ প্রকাশ্যে অনেক মিলছে। বিশেষ কারে ক্যাসিনো, সাহেদ, সাবরিনা ও শামীমদের ঘটনায়। এ সম্পর্ক বিস্তার জাতি ও পেশার জন্য অত্যান্ত দুঃখজনক। এ ধরনের সম্পর্ক স্থাপন হবার কথা নয়। তবুও অহরহ অনুরূপ সম্পর্কের প্রমাণ মিলছে। তাই স্বাভাবিক কারনেই সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রশ্ন ওঠছে কেন এ সম্পর্ক? বিশেষ করে কোন পেশাদারদের ক্ষেত্রে মোটেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে বলে মনে করার কিছু নেই। এগুলো দুঃখজনক যদি পেশাদারিত্বের বাইরে অনুরূপ চক্রের সাথে কোন আর্থিক সম্পর্ক সৃষ্টি হয়।
আলোচিত শামীম নিজেকে বিভিন্ন সময় বড় মাপের ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত করে আসছেন। তার পুরো পরিচিত হওয়া কোম্পাণী ও প্রথিষ্ঠানের অনেকগুলোরই বৈধতার হদিস মিলছে না। শুধু তাই নয়, তিনি এসব ভূয়া ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান ও কোম্পাণী দেখিয়ে নানাজন থেকে কোটি কোটি টাকা বিনোগের নামে গ্রহণ করে প্রতারনা করেছেন। এ অর্থ আত্মসাৎ করতে নানা অপরাধমূলক কাজে তিনি জড়িয়ে রয়েছেন। তার সাথে বিশ্ববিদ্যালয়র শিক্ষক পরিচয়ের এবং নানা পেশার কতিপয় ব্যক্তিসহ পুলিশ বাহিনীর কয়েকজন কর্মকর্তা ও সদস্য জড়িয়ে পড়ছেন। এ ধরনের সম্পর্ক অত্যান্ত দুঃখজনক বলে বিবেচ্য। এখানে কারো নাম বা পরিচয় উল্লেখ করে ছোট করতে চাইনা। কাউকে ছোট ও সমালোচনা করার জন্য আলোচনাটি করছি না। আলোচনাটা প্রকৃতপক্ষে কারো কারো সম্পর্কের কারনে যেন আইন আদালত যৌক্তিক কোন কোন কারনে যেন ন্যায় বিচারে বিব্রত পরিস্থিতিতে না পড়তে হয়। সম্মানিত বিচারক সব বুঝলেও ন্যায় বিচারের ক্ষেত্রে তদন্তটা সততা ও আইনের মধ্যে না রাখলে কোন ভিন্ন ফলাফল হতে পারে। সেদিকটা আমাদের সব পেশা শ্রেণীর মানুষের মনে রাখা উচিত।
যে বিষয়টির ওপর গুরুত্ব আরোপ করে আলোচনা করা হচ্ছে সে বিষয়টি উপলদ্ধি করা প্রয়োজন। এখানে আবারো বলছি শুধু পুলিশ কর্মকর্ত ও সদস্য প্রতারকচক্র ও নানা পেশার অপরাধীদের সাথে সম্পর্ক হওয়া দুঃখজনক তা নয়। সব পেশার মানুষের জন্য একই অবস্থান হওয়া উচিত। ঢাকার বাইরের বিভিন্ন থানা পুলিশ ও নানা পেশার কতিপয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে অনুরূপ জোরালো তথ্য রয়েছে। তাদের কারো কারো বিরুদ্ধে ভূক্তভোগী অনেকেই কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিকারের জন্য আবেদন নিবেদন করেছেন। সে সব আবেদেনের পরিপ্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ কতিপয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে বলে প্রমাণ মিলছে। ঠিক সে কারনেই বলা হচ্ছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) তে কয়েক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, পুলিশ পরিদর্শক তদন্ত ও পুলিশ পরিদর্শক অপারেশন রয়েছেন সত্যিকার অর্থেই প্রভাবশালী। অনেক সময় বন্ধুমহলে কথার কথায় বলে বেড়ান পুলিশ বাহিনীর মধ্যে একটা বৈসম্য রয়েছে। এ বৈসম্যটা হচ্ছে ক্যাডার নন ক্যাডার। ক্যাডার পুলিশ কর্মকর্তারা সাধারণত বিসিএস। নন ক্যাডার যারা তারা যে একেবারে শিক্ষায় খুব একটা কম তাও নয়। বিশেষ করে ঢাকাসহ দেশের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ূয়া এবং প্রকৌশী পর্যন্ত নন ক্যাডার পুলিশ কর্মকর্তা রয়েছেন।
বিশেষ করে পুলিশ বাহিনীর উপ পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) পদে যারা নিয়োগ পাচ্ছেন তাদের মধ্যে বেশীরভাগ বিশ্ববিদ্যলয় পড়ূয়া। প্রত্যেকেই ডিগ্রীধারী এবং মেধাবী। তাদের ছাত্রজীবনের একটি পরিচয়ও রয়েছে। এসব তরুণেরাই পুলিশ পরিদর্শক পদে পদোন্নতি লাভ করেন। সত্যিই তারা তাদের মেধার পরিচয় রাখতে সক্ষম হচ্ছেন। শুধু তাই নয় তাদের সে ছাত্রজীবনের পরিচয়ও পেশায় জড়িয়ে খুব সুনামের সাথেই অনেককে দাবরিয়ে বেড়াচ্ছেন। তাদের কর্মকান্ডের প্রশংসা না করলে ভুল হবে। খুবই প্রশংসনীয়ভাবে তারা দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণকারী বাহিনীতে নিজের আঙ্গিকে চলাফেরা করছেন। যা ইচ্ছে তা করে বেড়াচ্ছেন। অথচ নন ক্যাডারদের কিছুসংখ্যক বলার চেষ্টা করছে বিসিএস পুলিশ কর্মকতারা নন ক্যাডারদের একটু নিচু দৃষ্টিতে দেখে আসছে। কিন্তু বিদ্যমান কিছু ঘটনায় তার বিপরীত দেখা যাচ্ছে। প্রশংসীয় ওসব পুলিশ কর্মকর্তাদের র্যাংক ব্যাচ যাই থাকুক না কেন তাদের ইচ্ছের ওপরই কর্তৃপক্ষ কাজ করতে বাধ্য হন। জানি এ বিষয়টি অনেকেই প্রকাশ্যে এ সত্যটি স্বীকার করতে চাইবেন না। অবশ্য প্রকাশ্যে স্বীকার করার বিষয়ও নয়, তবুও বাস্তব সত্য। যেমনটি ডিএমপির কয়েক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, পুলিশ পরিদর্শক তদন্ত ও পুলিশ পরিদর্শক অপারেশনরা নানা কর্মকান্ডে পরিস্কারভাবে প্রমাণ রাখছেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)র যেসব থানায় অনুরূপ পুলিশ কর্মকর্তা রয়েছেন সেব থানা গেলে যে কেউই তাদের প্রভাবের উত্তপ্ততার তাপ বহন করে আসতে পারবেন। তারা মানছেন না কর্তৃপক্ষ, মানছে না বিভাগীয় চেইন অব কমান্ড। যেখানে একজন মন্ত্রী একজন পুলিশ কর্মকর্তার পদায়ন নিয়ে হস্তক্ষেপ করেন তাহলে আর যাই হোক সুষ্টু কোনো সমাধের ক্ষেত্রে তাদের আচরণ যথার্থ হবে তা প্রত্যাশার বিপরীতটা। যাই হোক সোজা ভাবে বলা যায় তাদের প্রভাবটা অনেকটাই কর্তৃত্ববাদের। তাদের ছাত্রজীবনের পরিচয়টিই মূখ্য এবং বাস্তবায়নযোগ্য। সে কারনেই বোধ হয় পুলিশ বাহিনী নিয়ে নানা কথা চাউর হচ্ছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। সবার মাঝে যা চাউর হচ্ছে এবং আলোচনা সমালোচনার ঝড়বইছে তা অবশ্যই পদস্থ পুলিশ কর্মকর্তাদের জন্য নেতিবাচক। শুধু তাই নয় তাদের এ কর্তৃত্ববাদ এক সময় রাষ্ট্রের জন্য ভিন্ন কিছু ইঙ্গিত বহন করতে পারে। এরূপ মন্তব্য করে আলোচকরা বেশ কিছু বিষয় তুলে ধরছেন যা পরবর্তী পর্বে আলোচিত হবে। সম্মানিত পাঠক সে আলোচনার দিকে দৃষ্টি রাখুন।