এইচ এম জালাল আহমেদ
বিগত কয়েকদিন ধরে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার কতটা সফল তা নিয়ে ধারাবাহিক আলোচনা করেছি। সে আলোচনার মধ্যেই রাজধানীতে আবিস্কার হয়েছে নোংরামি এক ঘটনার মাধ্যমে এক পরীমণির। তিনি নাকি চিত্রনায়ীকা। চলচিত্রে নাকি অভিনয় করেন। সিনেমা দেখিনা এবং দেখার সৌভাগ্য হয়নি। তাই কোন নায়ক নায়ীকা এখন আর চিনি না। যারা এখন রয়েছেন তাদেরকে চিনতে হবে তেমনটিও নয়। কারন অভিনয় কতটা ভালো মন্দ তা নিয়ে কিছু বলব না। তবে কতিপয় নায়ক নায়ীকা পরিচয় দিয়ে চলেন বা পরিচিতি লাভ করছেন তাদের কারো কারো নানা বিষয় জানার পর তাদের চেনার রুচিটাও থাকে না। ঠিক তেমনটি নেই আলোচিত সমালোচিত চিত্র নায়ীকা পরিচয়ের উদঘাটিত নোংরা ঘটনার নতুন পরিচয়ের নায়ীকা পরীমণির নাম জানলাম এবং তার ছবি গণমাধ্যমে দেখলাম। লেখার জন্য প্রস্তুতিও নিয়েছিলমা। নানা ঘটনা জানার পর তাকে নিয়ে লেখার রুচিটা হারিয়ে ফেলছি। যদিও আমি অতো নামিদামি আলোচক নই। তারপরও আমার রুচিতে বাধে তাকে কেন্দ্র করে সংঘটিত ঘটনা লিখতে। তাকে নিয়ে কোন মন্তব্য করে কোন আলোচনাও করব না। তবে তার ঘটনার মাধ্যমে যে সব নোংরাদের নানা অপরাধ নোংরামির কাহিনী প্রকাশ পাচ্ছে তার কিছু ঘটনা নিয়ে আলোচনা না করলে পেশার সাথে প্রতারনার সামিল হবে। তাই কিছু ঘটনা নিয়ে আজকের আলোচনা করে মন্তব্য করার চেষ্টা করছি।
সম্মানিত পাঠককুল আলোচনার শুরুতে সবিনয়ে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি, এ জন্য যে, নোংরা ও অপরাধের সাথে জড়িতদের নিয়ে লিখলে এবং আলোচনার লেখনির মধ্যে ছন্দ বা ভাবের কোন ব্যতিক্রম হতে পারে এবং কোন কোন বিষয় কারো পছন্দের বাইরের হতে পারে। যেমনটি আলোচনার শুরুতেই পরীমণির ঘটনাটি নোংরা হিসেবে অভিহিত করেছি। কারন পুরো ঘটনাটিই নোংরামিতে ভরপুর বলে আমার কাছে মনে হয়েছে। বোঝার ভুল যাতে না ঘটে সে জন্য আবারো বলছি কোন ব্যক্তিকে আমি নোংরা বলছি না। ঘটে যাওয়া ঘটনাটি পুরো নোংরামি বলে আমার কাছে প্রতিয়মান হচ্ছে। যদি আমি ধরে নেই পরীমণি একজন প্রতিষ্ঠিত নায়ীকা। অপরদিকে গ্রেফতারকৃত রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ, তুহিন সিদ্দিকী অমি এবং অন্যান্যরাও নানা পরিচয়ের সম্মানিত ব্যক্তি। তাদের পরিচিতিকে আমি সম্মান করি। কিন্তু ঘটনার সময়টি ছিল গভীর রাত। সে সময় যদি নারী পুরুষের মধ্যে কোন অঘটন ঘটে নোংরা কোন বিষয় নিয়ে তাহলে কি সে ঘটনাকে নোংরা বলা হলে ভুল হবে? আমার তো মনে হয় নোংরার চেয়ে কোন তুচ্ছের কোন শব্দ জানা থাকলে সে শব্দ ব্যবহার করা বাঞ্ছণীয়। আলোচনায় পরীমণি বা নাসির উদ্দিনকে নিয়ে করতে চাইনা বা তা ভিন্ন আলোচনায় বলার চেষ্টা করব। এখানে আলোচনায় স্থান দিতে চাই আলোচিত তুহিন সিদ্দিকী অমি কে তার পরিচয় কি এবং তার সাজ্ঞপাজ্ঞ কারা তাদের কাজ কি?
আলোচিত তুহিন সিদ্দিকী অমি একজন মানবপাচারের দালালের সন্তান। লেখাপড়া কতটা তিনি করেছেন তা জানা নেই। তবে তার বাবা মোহাম্মদ তোফজ্জল হোসেন বিদেশ ফেরৎ একজন শ্রমিক। তার ব্যবসার অনুসারী অমি ছোট বেলা থেকেই ছিলেন। যদিও তারা বৃহত্তর কুমিল্লার মুসলিম পরিবারের নাগরিক। ৮০ দশকের মাঝামাঝি বি বাড়িয়ার তৎকালীন এক সংসদ সদস্যের বদৌলতে বিমানবন্দর এলাকায় নানা উপরি ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। সেখান থেকে এক ডলি নামের নারীর হাত ধরে বিমানবন্দ হল কেন্টিনে মদ বিয়ার বেচাকেনার ব্যবসায় জড়িয়ে পছিলেন। এ তোফজ্জল সে সময় নানা কারনে কয়েকবার গ্রেফতারও হয়েছিল বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। সে ব্যবসা থেকে নানা দেশে মানবপাচারের ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছিলেন তোফজ্জল। সে ব্যবসা থেকে আজো বেরিয়ে আসতে পারেননি তিনি। তার ব্যবসার পুরোটাই বর্তমানে দেখবাল করে আসছেন অমিও সাইফুল। মোহাম্মদ তোফজ্ঝল হোসেনের ক্যাশিয়ার ও ম্যানেজার হচ্ছেন জনৈকি হাফেজ সাইফুল ইসলাম। তারা রাজধানীর আশকোনায় সবার চোখের সামনে অবৈধ ব্যবসার ট্রেনিং সেন্টার খুলে প্রকাশ্যে ব্যবসা করে আসছে কয়েক বছর যাবৎ। বাপ বেটার সাথে কথিত ম্যানেজার ও ক্যাশিয়ার হাফেজ সাইফুল ইসলাম তার সহকর্মীদের নিয়ে অবাধ ব্যবসা চালিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে আশকোনার মত স্থানে একাধিক প্লট ও ফ্ল্যাট ও বহুতলভবন স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে।
সাধারণ মানুষ বোধ হয় প্রশ্ন করতেই পারেন এ হাফেজ সাইফুল ও তোফজ্জল হোসন তার ছেলে অমিকে নিয়ে প্রকাশ্যে বিশাল এক দ্বিতল বাড়িতে ট্রেনিং সেন্টার খুলে অবৈধ ব্যবসা দীর্ঘদিন ধরে করে আসলেন কিভাবে? গতকাল রাতে আলোচিত সাইফুল ইসলামের বাসায় আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণকারী বাহিনী অভিযান চালিয়েছেন। এ অভিযান কালে একই ভবনে আরেক রহস্যময় ব্যক্তির সন্ধ্যান পেয়েছে পুলিশ। কিন্তু তারা তো পরীমণির ঘটনার পর অমি গ্রেফতার হবার সাথে সাথেই সপরিবারে পালিয়েছেন। প্রশ্নটা এখানে যে তারা এতদিন ধরে অবৈধ ব্যবসা খুব জাকজমকভাবেই দেশের সব সংস্থার চোখের সামনে চালাল কি করে? পালিয়ে যাবার পর পুলিশ সেখানে অভিযান চালালেন এবং অমির বাসা থেকে পাসপোর্টসহ নানা অবৈধ কাগজপত্র ও মালামাল উদ্ধার করলেন। এব্যাপারে দক্ষিণখান থানায় মামলাও হয়েছে। প্রশ্ন ওঠছে, পরীমণির ঘটনার পর অমি গ্রেফতার হলেন এবং তার বাসা থেকে অবৈধ জিনিসপত্র উদ্ধার হলো। তাইলে কি বলা যায়না যে পরীমণির ঘটনা না ঘটলে এ অবৈধ ব্যবসা কোন সংস্থাই কখনো জানলেও উদঘাটন করতেন না? যাই হোক এসব বিষয় রাষ্ট্র দেখবে আইন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবে। কথায় বলে ঘটনার পেছনে ঘটনা থাকে। অপরাধের পেছনে অপরাধী থাকে এবং তাদের নিরাপত্তায় কেউনা কেউ থাকে। এদেরকে কোন সময় সনাক্ত করে যথার্থ আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয় না বলেই এসব অপরাধীরা থেকে যায় অধোরা।
তুহিন সিদ্দিকী অমির বাবা মোহাম্মদ তোফজ্জল হোসেন এক সময় মলোয়শিয়ায় শ্রমিকের কাজ করতেন। সেখান থেকে এসে আশির দশকের মাঝামাঝি দেশীয় এক সংসদ সদস্যের বদৌলতে মানবপাচারে নেমে পড়েন অনেক মানবও বিভিন্ন দেশে পাঠিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়। ঘটনা চক্রে নানা তথ্য বেরিয়ে আসছে তাদের অনৈতিকতার। কিন্তু আমাদের দেশে নানা সংস্থা দায়িত্বে থাকলেও তারা এদের প্রকাশ্যে চলানো অবৈধ ব্যবসা সনাক্ত করে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারেননি এতদিন। পরীমণির ঘটনা না ঘেেল এবং অমি গ্রেফতার না হলে বোধ হয় এ চক্রটি থেকে যেত অধোরায়। এ চক্রটি বিশাল সম্পত্তির মালিক হয়েছেন অবৈধ ব্যবসার মাধ্যমে। এদের সাথে যাদের সম্পর্ক রয়েছে এবং এতদিন নিবির সম্পর্ক ছিল তারা সমাজে এবং প্রশাসনে খুব নীতিবান ব্যক্তি হিসেবে নিজেদেরকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করে আসছেন। যদিও প্রশ্ন তুলতে চাইনা সে নোংরামির ঘটনাস্থলটির ক্লাব প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা পর্ষদ নিয়ে। এখানে যাদের নাম শোনা যায় তাদের অনেকের পরিচিতি রয়েছে বণাঢ্য এবং অনেক উচু অবস্থানের কর্মকর্তা, রাজনৈতিক ও কলাকুশালীর ব্যক্তিত্ব। তাদের নাম পরিচয়ের যথেষ্ট জৌলস রয়েছে। যাই হোক ঘটনাটি আইনের কাছে তদন্তাধিন রয়েছে সেখানে যথার্থতা প্রমাণ হবে। তবে এ চক্রটির বিষয় নানা তথ্য প্রকাশ পাচ্ছে এবং নতুন কিছু নিয়ে দৈনিক আমাদের কণ্ঠ পত্রিকার পরবর্তী আলোচনা। পরবর্তী আলোচনার দিকে দৃষ্টি রাখুন।