এইচ এম জালাল আহমেদ
বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী অত্যন্ত গর্বিত। কিন্তু নন্দিত হতে পারছে না। না পারার পেছনে নানাবিদ কারন রয়েছে। অনেক কারনে মধ্যে উল্লেখযোগ হচ্ছে, আচরন, চলাফেরা, দায় দায়িত্ববোধ, কর্তব্য পালনে দুর্বলতা ও পরিবেশ পরিস্থিতি। বিদ্যমান অবস্থায় পুলিশ বাহিনীর আচরনগত বিষয়টি লক্ষণীয়। হয়ত পুলিশ বাহিনীর কাছে বিষয়টি সাধারণ হলেও স্বাভাবিক দৃষ্টিতে দেখতে প্রশ্নবিদ্ধ। যদিও সবার ক্ষেত্রে তেমনটি নয়। তবে চলমান প্রক্রিয়ায় পরিস্কার চোখের সামনে ভেসে ওঠছে পুলিশ বাহিনীর বিলাশবহুলতা। আরাম আয়েসের চাকরি। বিশেষ করে এগুলো থানা পুলিশের ক্ষেত্রে বেশী লক্ষণীয়। তাদের মধ্যে অধিকাংশই নিজেদেরকে জনগণের সেবক ভাবতে রাজী নন। তাদের আচরনটা মুনিবের অবস্থানে। পোশাক ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিভাগীয় বিধি মানছে বলে মনে করার কোন কারন নেই। একদম ফ্রি স্টাইলে পোশাক পড়ছে এবং চলাফেরা করছে। যেভাবে পোশাক পড়ছে এবং চলাফেরার বিধি পরিপন্থি। অবশ্য এ বিষয়টি পদস্থ পুলিশ কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে খুব কম দেখা যায়। তারা বিধি মোতাবেকই পোশাক পড়েন এবং প্রকাশ্যে চলাফেরা করে থাকেন। কিন্তু তাদের অধঃনস্তদের পোশাক ও চলাফেরার দিকে নজর রাখছেন না। পরিস্কার করে বলা যায় তদারকির অভাবে এ অবস্থায় দাঁড়িয়েছে। বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে নেয়া প্রয়োজন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে সরেজমিনে গেলে এবং যারা বিভিন্ন ইস্যুতে নানা স্থানে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতে আসে সেখানে যাচাই করলে যথেষ্ট প্রমাণ মিলবে। বেশীরভাগ তরুণ কর্মকর্তা ও সদস্য ফ্রি স্টাইলে রাষ্ট্রীয় পোশাক পড়েন এবং চলাফেরা করে থাকেন। তাদের পরিচালনা করার ক্ষেত্রে কর্মকর্তা থাকলেও তারা হয় পোশাক পড়ার নিয়ম ও চলাফেরা করার বিধি মনে রাখেন না। না হয় অধঃনস্তদের পরিচালনা করার সাহস রাখেন না। অপরদিকে কর্তব্য পালনে অবহেলা রয়েছে। যে কোন একটি তাদের মধ্যে বিদ্যমান বলেই প্রতিয়মান হচ্ছে। থানা পুলিশের উপ পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) ও সহকারী উপ পুলিশ পরিদর্শক (এএসআই) দের অধিকাংশ পোশাক পড়েন এবং চলাফেরা করেন যা পুলিশ বাহিনীর বিধি বিধান অনুযায়ী পড়ছেন এবং চলাফেরা করছেন তা ভাববার কোন সুযোগ রয়েছে বলে সরেজমিনে দেখলে মনে হবে না। অন্যদিকে রয়েছে বন্ধের দিন ছাড়া সব দিনগুলোতে রাষ্ট্রীয় পোশাক না পড়ে থানা পুলিশের দায়িত্ব পালন করার সুযোগ রয়েছে বলে জানা নেই। আধুনিক যুগে আধুনিক কোন বিধান হয়ে থাকলে বলার কিছু নেই। যদি তেমন কোন নতুন বিধান না থাকে তাহলে পড়নের পোশাক, জুতা টুপিসহ অন্যান্য পোশাকের অংশ পরিপূর্ণ থাকা বাঞ্চণীয়। বিষয়টি কর্তৃপক্ষের দেখনীয়। দেখবেন কি দেখবেন না তা তাদের বিষয়। পুলিশ বাহিনী আরাম আয়েসের নয়।
তিনদিন পূর্বে আলোচনায় উদাহরন হিসেবে বলা হয়েছে, ডিএমপির উত্তরার এক পিআই একটি প্রজেক্ট পরিচালনা করেন। কোটি কোটি টাকার বিষয় সেখানে। এখানে আরো বিত্তবান ব্যক্তিরা রয়েছেন তার সাথে। এ কাজে ব্যস্ত থাকায় তিনি বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া রাষ্ট্রীয় পোশাক পড়েন না। যদিও পড়েন তা একেবারে সীমিত সময়েল জন্য। কারন তিনি দেশের চেয়ে বিদেশে বেশী থাকেন বলে পুলিশি পোশাক পড়ার চেয়ে টি শার্ট পড়তে বেশী পছন্দ করেন। তাই তার রাষ্ট্রীয় পোশাকে যথেষ্ট অনীহা রয়েছে বলেই আচরনে প্রতিয়মান হচ্ছে। তিনি আর্থিক ও সামাজিকভাবে যে অবস্থানে রয়েছেন সেখানে সবার সামনে পুলিশ পরিদর্শকের পোশাক পড়তে একটু ভাবতে হয়। সবার সামনে নিজেকে ছোট মনে হতে পারে। তার সহকর্মীরা সবাই কোটিপতি এবং প্যারোড গাড়ীতে ঘোড়েরন। অনেক পুলিশ কর্মকর্তা রয়েছেন যারা তাদেরকে স্যার বলে ডাকেন। সেখানে প্রজেক্ট এর কর্ণধার হয়ে সামান্য পুলিশ পরিদর্শকের র্যাংক ব্যাচ পড়তে একটু ভাবতেই পারেন। তিনি কি পড়বেন কি পড়বেন না তা তার নিজের বিষয় এবং বিভাগীয় শৃঙ্খলা দেখার জন্য তার বিভাগীয় কর্মকর্তা রয়েছেন তারা দেখবেন। আলোচনার বিষয়টি হচ্ছে স্টাইলটা একেবারে ফ্রি স্টাইল। এভাবে বোধ হয় পুলিশ বাহিনীতে চলার সুযোগ নেই। থাকার কোনভাবে কথা নয়।
পূর্বের আলোচনায় বলছিলমা পোশাক যেমন ফ্রি স্টাইলে পড়েন। ঠিক তেমনিভাবে তাদের চলা ফেরাও ফ্রি স্টাইলে। চেইন অব কমান্ড মানছেন তেমনটি বোধ হয় আচরনে প্রমান মিলছে না। ডিএমপির পঞ্চাশটি থানার মধ্যে ৮ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রয়েছেন যারা বাহিনীর চেইন অব কমান্ড মানার কোন প্রয়োজন মনে করেন বলে ভাবার সুযোগ নেই। ডিএমপির ১১টি থানা পুলিশ পরিদর্শক তদন্ত ও ১৬ থানা পুলিশ পরিদর্শক অপারেশন, ৯ জন পিআই, ১৩ জন বিভিন্ন ফাড়ি ও বক্সের আইসি ১৯ জনের মত রয়েছেন সহকারী উপ পুলিশ পরিদর্শক (এএসআই) রয়েছেন, তাদের আচরনগত বিষয়টি অবশ্যই সরেজমিনে তদারকির দাবি রাখে। তাদের অবৈধ প্রভাবের লাগাম টেনে ধরার সময় অতিক্রম করার পূর্বেই টেনে ধরার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। এগুলো খুব জরুরি ভাবে দেখার প্রয়োজন ছিল। বিশেষ করে কয়েকটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, পুলিশ পরিদর্শক তদন্দ ও অপারেশন রয়েছেন তাদের আচরনগত বিষয়টি অবশ্যই পুলিশ পরিপন্থি বলে অভিজ্ঞজনদের মতামত রয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকের নাম শোনা যাচ্ছে তারা অপরাধী চত্রের সাথে সুসম্পর্ক রেখে মোটা অংকের অবৈধ অর্থ উপর্জন করছেন। তাদের রয়েছে বড় ধরনের একটি অপরাধ চক্রের শক্তিশালী সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেটের সাথে নানা পেশা শ্রেণীর পরিচয় দেয়া কোন কোন ব্যক্তি জড়িয়ে থাকতে পারেন।
সোজা কথা বলা যায় এবং সবার বলা উচিৎ, না এভাবে আরাম আয়েস ও মনিবের অবস্থানে থেকে আর যা-ই ঘটুক এবং করলে করতেই পারেন। শৃঙ্খল পুলিশ বাহিনীতে চাকরি করার সুযোগ রয়েছে বলে জানা নেই। তারপরও তো যেভাবে চাকরিতে বহাল রয়েছেন সেভাবে বোধ হয় তেমনটি থাকার সুযোগ নেই। কিন্তু থাকার সুযোগ নেই তারপরও তো ফ্রি স্টাইলে চলছেন ডিএমপির কিছু সংখ্যক। তাদের নিয়ন্ত্রণ করা খুবই জরুরি বলেই সচেতন মহল মনে করেন। জানিনা ডিএমপি কর্তৃপক্ষ কি ব্যবস্থা নিবেন। তারা এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিবেন কি নিবেন না তা তাদের সম্পূর্ণ নিজস্ব ব্যাপার। তবে বিষয়টি সাধারণ দৃষ্টিতে দেখলে শৃঙ্খল বাহিনীর বিধি পরিপন্থি বলে অনেকে মনে করেন। যাই হোক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, পুলিশ পরিদর্শক তদন্ত অপারেশন এর মধ্যে কতিপয় কিভাবে সিন্ডিকের সাথে জড়িয়ে নানা অপরাধকে পরোক্ষভাবে আশ্রয় দিয়ে আর্থিক লাভবান হচ্ছে। বিশেষ কয়েকটি ঘটনা নিয়ে পরবর্তী আলোচনার চেষ্টা করা হবে। সম্মানিত পাঠক সে আলোচনায় দুষ্টি রাখবেন। আবারো বলছি চলমান আলোচনাটি মোটেই সমালোচনা নয়। কারো ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি ক্ষুণœতার জন্য নয়।