এইচ এম জালাল আহমেদ
সারা দেশে নানা স্থানে বিভিন্ন কারনে হত্যাকান্ড সংঘটিত হচ্ছে। সব হত্যাকান্ডের বিষয়টি নিয়ে কারো মাথা ব্যাথা নেই। সারা দেশের মানুষ জানার আগ্রহ দেখান না। তবে গত সপ্তাহে পরপর দেশের তিনপ্রান্তে তিনটি ট্রিপল হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। প্রথমটি কুষ্টিয়া জেলা শহরে প্রকাশে রাজপথে গুলি করে হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে খুনি। এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় এক শিশু সন্তানসহ এক মা ও অপর একজন নিহত হয়েছেন। দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটছে সিলেটের গোয়াইনঘাটে। এখানে খুনি একই পরিবারের চার ব্যক্তিকে জবাই করেছে বা কোপিয়েছে। এ ঘটনায় দু’শিশু সন্তানসহ এক মা নিহত হয়েছেন। তার স্বামী গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। দু’দিন পূর্বে রাজধানীর কদমতলীতে রাতে নেশাজাতীয় খাবার খাওয়াইয়ে একই পরিবারের তিনজনকে হাত পা বেধে শ্বাসরোধ করে হত্যা করছে খুনি। এ তিনটি ঘটনার বিষয়য়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়েছে রাষ্ট্র। এ সব খুনের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে তিন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করছে পুলিশ। হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন এবং জড়িতদের সঠিকভাবে সনাক্ত করতে তদন্ত করছে পুলিশ। তাদের তদন্তে প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে বলে জাতি প্রত্যাশা করে। যতটুকু জানা গেছে ট্রিপল হথ্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের পরিচয় পেয়েছে পুলিশ। তারা জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছেন। ফলে প্রমান মিলছে এসব হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে বিকৃত মনমানসিকতা থেকে। খুনি অবশ্যই বিকৃত মানসিক মানুষ। এ মানসিকতা সৃষ্টি হয়েছে যে কোন লোভ লালসায় মধ্যে থেকে বেরিয়ে আসছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন। আলোচনা করার বিষয় থাকে না যখন কোন ঘটনা নিয়ে তদন্ত চলে। এখানে কে কাকে হত্যা করছে বা করতে পারে সে বিষয় আলোচনা বা সমালোচনা কিছুই করার ইচ্ছে নেই। তবে এসব সংঘটিত হত্যাকান্ডের পর সাধারণ মাসুষের মধ্যে কি প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় এবং খুনিরা এ ধরনের ঘটনা কেন ঘটাচ্ছে সে বিষয়টি বিবেচ্য। অর্থাৎ হত্যাকান্ডের কারন ও ধরণ নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা প্রয়োজন। আমরা সাধারণত চলমান ঘটনার ওপর কয়েকজনের মুখের কথা ও পুলিশ বা তদন্তকারী কর্মকর্তা কি বলছেন তার ওপর ভিত্তি করে মন্তব্য করে আসছি। আমরা কেউ প্রকৃতপক্ষে ওকথাটা বলছি না কেন এ ধরনের খুনের প্রবাবনতা বাড়ছে। কেনই বা হিং¯্রতার সৃষ্টি হচ্ছে। কেনইবা অহরহ স্বজন স্বজনকে হত্যা করতে আগ্রহী হচ্ছে এবং একের পর এক অঘটন ঘটিয়ে যাচ্ছে। যখন অহরহ অনুরূপ অঘটন ঘটছে তখন এসব ঘটনা প্রতিরোধ করার উপায় কি একেবারে নেই? যদি নাই থাকে তাহলে এধরনের অঘটন এভাবে ঘটেই যাবে? কিন্তু না সমাজের এ ব্যধি রোধ করতে হবে। বন্ধ করতে হবে বিকৃত চরিত্রের মানুষের মানসিকতা। এ জন্য প্রয়োজন রাষ্টীয় ও সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা। কর্তৃত্ববাদের প্রভাব ও নেতিবাচক প্রচারনা বন্ধ করা প্রয়োজন। বিভিন্ন ঘটনাচত্রে প্রতীয়মান হচ্ছে পুরো সমাজ যেন এক নিবন্ত প্রদীপের অন্ধকারে আমরা ঢেকে দিচ্ছি। এখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। দাঁড়াতে হবে সমাজের প্রদীপটা জ্বালাতে। ইতিবাচক প্রচার প্রচারনার মাধ্যেমে সমাজের বিকৃত মনমানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। এ জন্য যা প্রয়োজন তাই করার পদক্ষেপ নেয়া খুবই জরুরি। যেমন কুষ্টিয়ায় প্রকাশ্যে রাজপথে জেলা শহরে শত মত মানুষের সামনে দেশে সুশৃঙ্খল একটি বাহিনী গর্বিত পুলিশ এর একজন সহকারী উপ পুলিশ পরিদর্শক (এএসআই) নিজ অস্ত্র দিয়ে গুলি করে হত্যা করেছে এক শিশু সন্তান ও নারীসহ তিন ব্যক্তিকে। শোনা যাচ্ছে যে শিশুটি হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন তার মা খুনির স্ত্রী। কিন্তু খুনি পুলিশ কর্মকতা একজন হিন্দু ধর্মের মানুষ। নিহত নারী একজন মুসলিম পরিবারের। তাদের মধ্যে বিয়ে হলো কি করে? আবার এ নারীর শিশু সন্তান পুলিশ কর্মকর্তার নয়। পূর্বের স্বামীর সন্তান। তার সাথে যে বিকাশ কর্মী নিহত হয়েছেন তিনি নাকি একই নারীর প্রেমিক। সার্ভিক বিষয়টি কেমন যেন রহস্যজনক। পুলিশ কর্মকর্তা আদালতে স্বীকারোক্তিতে বলেছেন তার স্ত্রীর পরকিয়ার কারনে ক্ষোভে এ কাজটি করেছেন।
প্রসঙ্গক্রমে বলা যায়, খুনি পুলিশ কর্মকর্তা চাকরি করে খুলনা। ঘটনা ঘটালেন কুষ্টিয়ায়। এ কিভাবে সম্ভব হলো। তিনি তার বিবাহিত স্ত্রীকে কুষ্টিয়ায় রাখলেন কেন? তিনি ঠিক দুপুর বেলায় কুষ্টিয়ায় আসলেন কি করে। কোন খবর পেয়ে আসলেও তো খুলনা থেকে কুষ্টিয়া আসতে কমপক্ষে এক ঘন্টা প্রয়োজন। না তিনি ছুটিতে কুষ্টিয়ায় অবস্থান করছিলেন? যেখানেই অবস্থান করুণনা কেন ঘটনা ঘটিয়েছেন তিনি তা প্রার্থমিকভাবে প্রমাণিত। পুলিশের সে এএসআই ই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছেন। তার দেয়া বক্তব্য থেকে ধারনা করা যায় তার বিবাহিত স্ত্রীর সাথে নিহত বিকাশকর্মীর পরকিয়া ছিল। এ বিষয়টি হয়ত এ পুলিশ কর্মকর্তার জানা ছিল। তিনি ওৎপেতে ছিলেন কখন কোথায় তারা একত্র হন। তার পরিকল্পনায় যা ছিল ঠিক সেভাবে তিনি তার স্ত্রীকে পেয়ে ঘটনাটি ঘটিয়েছেন। ক্ষোভে স্ত্রী ও তার পরকিয়া প্রেমিককে হত্যা করেছে। কিন্তু ছয় বছরের শিশুটি কি করেছিল? তাকে গুলি করে গহত্যা করার কোন প্রয়োজন ছিল কিনা? অনেকের ধারনায় ছিল না। কুষ্টয়ার সংঘটিত ঘটনাটি নিয়ে ব্যাপক তদন্তের বিষয় বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। দেখা যাক পুলিশের চূড়ান্ত তদন্তে ঘটনার রহস্য হিসেবে কি উদঘাটন হয়। তদন্ত শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তাই এ নিয়ে আগাম কোন মন্তব্য করা যথার্থ নয়।
কয়েকটি খবরের কাগজে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে গোয়াইনঘাটে সংঘটিত ট্রিপল হত্যাকান্ডের ঘাতক বা খুনি নিহত নারীর চিকিৎসাধীন আহত স্বামী । তাকে পুলিশ হত্যার দায়ে তাকে গ্রেফতার করেছে। ঘটনাচক্রে দু’সন্তানসহ নিহত নারীর স্বামীও একই সময় রক্তাক্ত আহত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তিনি তার স্ত্রী ও দু’সন্তানকে হত্যা করবেন কেন? যদি সত্যিই তিনি এ ট্রিপল হত্যাকান্ড ঘটিয়ে থাকেন তা হলে বিকৃত কোন বিষয় বিদ্যমান রয়েছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন। জানিনা পুলিশের কাছে কি প্রমাণ রয়েছে সংঘটিত হত্যাকান্ডের বিষয়ে। কোন প্রমাণ ছাড়া তো তাকে গ্রেফতার করার কথা নয়। পাশাপাশি দু’শিশু সন্তানসহ স্ত্রীকে হত্যা করবেন কেন? এ হত্যাকান্ডের পেছনে কারন কি তা অবশ্যই রহস্যজনক হবে। কারন যার ওপর হ্যাকান্ডের দায় চাপছে তিনি একজন স্বল্প আয়ের মানুষ। দেখতে শোনতেও তেমন হ্যামসাম নন। তার কোন পরকিয়ায় পড়ার কতা নয়। তারপরও যাচাই ছাড়া সরাসরি খুনি হিসেবে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত লেখাটা বোধ হয় সঠিক হবে না। যদি সত্যিই স্বামী ও সন্তানদের বাবা খুনি হন তাহলে ভাবতে হবে তার বিকৃত মনমানসিকতা রয়েছে। এ ধরণের মানসিকতা সৃষ্টির পেছনের কারনটি সনাক্ত করা জরুরি। এ কারনটি প্রকাশ পেলে ধারনা করা যাবে সমাজের প্রকৃত ব্যধিটা।
সবশেষ গত শনিবার রাজধানী ঢাকার কদমতলীতে যে ট্রিপল হত্যাকান্ডের বিষয়টি আরো চাঞ্চল্যকর। বোনের হাতে মা বাবাসহ হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন। হত্যাকান্ড ঘটিয়ে খুনি হিসেবে নিজেকে দাবি করে পুলিশকে গ্রেফতার করতে অনুরোধ করেছে এক নারী। যখন পুলিশ তার অনুরোধে বাসায় পৌছলেন তখন তিনটি হাত পা বাধা মরদেহ উদ্ধার করেছেন তখন সেখান থেকে এক শিশুসহ দু’জন অচেতন অবস্থায় থাকা দু’জনকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করেছে। সেখান থেকে এক নারীকে হত্যাকান্ডের দায়ে গ্রেফতার করেছেন পুলিশ। যে নারীকে গ্রেফতার করেছেন তার শিশু মেয়ে সন্তান ও স্বামী অজ্ঞান অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসায় গিয়েছে। অপরদিকে বাবা মা বোন এর মরদেহ সেখানে নেয়া হয়েছে ময়না তদন্তের জন্য। তিনি পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন একই তিনজনকে হত্যা করেছেন। কিভাবে হত্যাকান্ড ঘটিয়েছেন তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। এ ব্যাপারে পুলিশ তদন্ত করছেন। তাদের তদন্তে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটিত হবে। যাই হোক এ নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে আলোচনা বা সমালোচনা করতে চাইনা। তবে এ ঘটনায় যে তথ্যে গণমাধ্যমে প্রকাশি হচ্ছে তাও বিকৃত বিষয়। এক কথায় বলা যায় নোংরামি। সে কারনেই বলতে চাইছি সমাজে এমন নেতিবাচক বিষয় ঢোকছে যা মানুষের সাধারণ মনমানসিকতা নষ্ট করতে সহায়ক হচ্ছে। সেখান থেকে এ বিকৃত ঘটনা গুলো একেরপর এক অঘটন ঘটছে। সবার প্রত্যাশা রাষ্ট্র বা সরকার ও সমাজ এ বিষয়টির দিকে নজর রেখে যথার্থ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবে।