এইচ এম জালাল আহমেদ
ঢাকা মহানগর পুলিশ নিয়ে আলোচনায় সৈয়দ মুস্তবা আলীর সেই প্রবাসবন্ধু গল্পের বাক্যটি মনে পড়ল। হে বন্দু কুইনানে জ্বর সারে ঠিকই, যদি কুইনানে ক্ষতি করে তা সারাবে কে? পুলিশ জনগণের শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখবে। তারা জাতির নিরাপত্তা দিবে। শিষ্টের পালন দুষ্টের দমনে নিরলস কাজ করবে। তারা দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করবে। অপরাধ দমনে থাকবে অবিচল। তারা বিনয়ী দুরদর্শী বিচক্ষণ ও তৎপর হবেন। তেমনই তাদের প্রশিক্ষণ। জানা নেই সবাই সে প্রশিক্ষণ কার্যকর রাখেন কিনা। শুধু বাংলাদেশ নয় বিশ্বের সব দেশে পুলিশ বাহিনী গর্বিত। কর্মে অনেক দেশের পুলিশ নন্দিত। কারন সেসব দেশের মানুষ ভাল বলেই পুলিশও ভাল হয়ন। ভাল পুলিশ বাহিনী পেতে হলে ভাল নাগরিক প্রয়োজন। দেখতে হবে আমরা ভাল নাগরিক কিনা। আমাদের দেশের পুলিশ ভাল মানুষ থেকে আসতে পারছে কিনা। শুধু পুলিশ নয়, সব পেশা শ্রেণীর মানুষ ভাল নাগরিক কিনা। যদি হয় তাহলে বাংলাদেশের গর্বিত পুলিশ বাহিনীও নন্দিত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব। সবার পূর্বে ভাল নাগরিক হতে হবে। যেমন ভাল গাছের ভাল ফলন। ঠিক তেমন। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার কতটা সফল। এ আলোচনায় অনেক কথা বলা হয়েছে। তুলে ধরা হয়েছে সংক্ষিপ্তভাবে কিছু বিষয়। এখানে আলোচনায় নেয়া হয়েছে রাজধানীর ফুটপাত দখলে ডিএমপির ভূমিকা ও নোংরামির পরিনতি নিয়ে। ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার অতিরিক্ত মহা পুলিশ পরিদর্শক (এ্যাডিশনাল আইজিপি) মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বিপিএম বার। তিনি পেশার শুরু থেকেই সুনামের সাথে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করে আসছেন খুব সততার সাথে। কিন্তু ডিএমপি কমিশনার এর দায়িত্ব নেবার পর তিনি নিষ্ঠার সাথে যথার্থ দায়িত্ব পালন করতে পারছেন কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন। পারিপার্শ্বিকতায় বলা যায় তিনি সফল। কিন্তু বাস্তবতায় তা স্বীকার করা বোধ হয় দুরহ ব্যাপার। তিনি যতটা সফল হবার কথা ততটা হতে পারেননি। কেন পারেননি তার যথেষ্ট প্রমাণিত তথ্য রয়েছে যৌক্তিকভাবে। হয়ত সে বিষয়গুলো তিনি অকপটে প্রকাশ্যে স্বীকার করতে পারবেন না। তবে অস্বীকার করার কোন সুযোগ তার রয়েছে বলে জানা নেই। তিনি স্বীকার করুন আর নাইবা করেন সত্যিটা হচ্ছে তার ইচ্ছে থাকার পরও তিনি সফলতার দোড়গোড়ায় পৌছতে পারেননি। না পারার পেছনে বেশ কয়েকটি কারন বেড়িয়ে আসছে ফুটপাত অনুসন্ধান করতে গিয়ে। প্রকাশ পেয়েছে ডিএমপিতে বাঁশের চেয়ে কিছু কঞ্চি মোটা রয়েছে। বাঁশ রক্ষার্থে সে কঞ্চিগুলো অপসারন করা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু ডিএমপি কমিশনার তা করতে পারেননি। বরং দিন দিন আরো কিছু কঞ্চি তরতাজা হয়ে মোটা হচ্ছে। যা একেবারে ভয়ঙ্কাররূপ নিতে পারে। সেদিকে এগুচ্ছে বলেই বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
যে কথা পূর্বের আলোচনায় কিছুটা তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে ডিএমপিতে চিহ্নি কিছু পুলিশ পরিদর্শক, উপ পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) সহকারী উপ পুলিশ পরিদর্শক (এএসআই) ও কনস্টেবল রয়েছেন। তারা বাঁশের চেয়ে কঞ্চি মোটার মত তরতাজা হচ্ছে। তাদের প্রভাব দিনদিন বাড়ছে এবং পুলিশ বাহিনীর চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে যাচ্ছে। যদিও তাদের শৃঙ্খলা এবং কাজের তদারকির জন্য বেশ কয়েখটি পদস্থ পুলিশ কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেয়া রয়েছে। কিন্তু তারা কতটা তদারকি করছেন তা এখানে লিখে বলার প্রয়োজন নেই। কারন সরেজমিনে গেলে দেখা যায় তাদের বিদ্যমান পরিস্থিতি। যে কথা গত আলোচনায় বলা হয়েছে এবং উদাহরন হিসেবে রাজধানীর উত্তরার এক পিআইর বিদ্যমান পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে। তার পুলিশ পরিদর্শকের পোশাক পড়ায় যথেষ্ট অনীহা রয়েছে বলেই তিনি সব সময় টি শার্ট ও ফাইলপত্র নিয়ে চলা ফেরা করেন। অর্থশালী ব্যক্তি বলে নিজ গাড়ীতেই চলাফেরা করে থাকেন। কিন্তু প্রভাব বিস্তারের সময় রাষ্ট্রের দেয়া পুলিশ বাহিনীর নির্ধারিত গাড়ি ব্যবহার করেন। কারন প্রভাব বিস্তার না করলে তো তিনি আবাসিক প্রজেক্ট করতে স্থানীয় কিছু তরুণদের চাঁদা দিতে হয়। এগুলো প্রতিহত করতে পুলিশের পরিচয়টি বহন করেন। শুধু তাই নয় ফাড়ির পিআই হিসেবে পদায়ণ নিয়েছেন। যেমন নিয়েছেন ঠিক সেভাবেই প্রভাব বিস্তার করে যাচ্ছেন।
রাজধানীর উত্তরার সে পিআই অর্থশালী বলে যেমনটি করছেন তেমনটি হতে পারে। তার বিষয়টি আমার দেখার নয় এবং দেখবও না। তবে পুলিশ বাহিনীর পোশাক একটি নির্দিষ্ট পরিমাপের এবং শৃঙ্খলার মধ্যে। কিন্তু ইদানিং ডিএমপির অধিকাংশ পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যরা যে বিভাগীয় পোশাক পড়ছেন দায়িত্ব পালনের জন্য সে পোশাকটি পুলিশ বাহিনীর নির্ধারিত পরিমাপের কিনা তা কেউ দেখবাল করার নেই। যদি থাকত তাহলে বিদ্যমান পোশাক তারা পরিধান করে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতে পারতেন না। সবাই শৃঙ্খলায় ফিরে আসত। সে কারনেই বলছি কুইনানে জ্বর সারে কুইনান ক্ষতি করলে তা সারবে কে? আজ পুলিশ বাহিনীর মধ্যে যদি শৃঙ্খল শতভাগ বাস্তবায়ন না হলে জাতির সেবা শতভাগ প্রত্যাশা করা কি সম্ভব হতে পারে?
ডিএমপি কমিশনার বিষয়টি সহজভাবে নিলে কয়েক বছরের মধ্যে পুলিশের পোশাক আর বাহিনী পোশাক থাকবে বলে মনে হয় না। পোশাকের রং থাকলেই বিভাগীয় পোশাক দাবি করা বোধ হয় সম্ভব নয়। যেমনটি বিদ্যমান রয়েছে ডিএমপির অনেক কর্মকর্তা ও সদস্যের পোশাকে। দেখলে মনে হয় পুলিশের পোশাকের রং এর সিনেমার পুলিশ। ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি পুলিশের বিভাগীয় পোশাকটি রাস্্রীয় ও মহত পেশার পোশাক। এ পোশাকটি কারো ইচ্ছে মাফিক বানানো ও পড়া স¤ভব নয়। যদি কেউ পড়ে থাকে তা অবশ্যই পুলিশ পরিপন্থি নয়? যদিও আজকে আলোচনাটি করার কথা ছিল ডিএমপির বাঁশের চেয়ে কঞ্চি মোটাদের নিয়ে। কিন্তু ডিএমপির কয়েক পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যের পোশাক দেখে উপরোক্ত আলোচনা করা হয়েছে। পূর্বের আলোচনার শেষাংশ আগামী আলোচনায় তুলে ধরার চেষ্টা করব।