মির্জা বদরুজ্জামান টুনু,যশোর
যশোর শহরের মণিহার-মুড়লি মহাসড়কের উপর রয়েছে দুই শতাধিক বৈদ্যুতিক খুঁটি। এই মহাসড়কটি দুই লেন থেকে চার লেনে উন্নীত করা হচ্ছে। কিন্তু কাজ শুরুর ৯ মাস পার হলেও সরানো হয়নি বৈদ্যুতিক খুঁটিগুলো। বৈদ্যুতিক খুঁটি রেখে মহাসড়ক নির্মাণের কারণে স্বাভাবিকভাবেই কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ বলছে, বৈদ্যুতিক খুঁটি অপসারণের কাজ শুরু হয়েছে, নির্ধারিত সময়ের আগেই শেষ হবে সড়ক নির্মাণকাজ। আর বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, বৈদ্যুতিক খুঁটি সরানোর চিঠি পেয়েছি, চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে। এদিকে ধীরগতিতে এই সড়ক স¤প্রসারণের কাজ হওয়ায় ক্ষুব্ধ গাড়িচালক ও সড়ক ব্যবহারকারী অন্যান্যরা। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, শিল্প-কারখানার ভারী যানবাহন চলার কারণে গত কয়েক বছর ধরেই যশোরের পালবাড়ি মোড় থেকে মুড়লি মোড় সড়কটির বেহাল অবস্থা। জনদুর্ভোগ লাঘবে যশোরের পালবাড়ি মোড় থেকে মুড়লি মোড় পর্যন্ত ২ দশমিক ৯ কিলোমিটার সড়ক স¤প্রসারণের কাজ শুরু হয় গেল বছরের ডিসেম্বরে। ১৩১ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়ক স¤প্রসারণের কাজ করছে মেসার্স মাহাবুব এন্ড ব্রাদার্স। যা চলতি বছরের ডিসেম্বরেই শেষ হওয়ার কথা। তবে করোনার কারণে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে এর সময়কাল। দীর্ঘদিন ধরে ধীরগতিতে সড়ক স¤প্রসারণে খোঁড়াখুঁড়ির কারণে যাতায়াতে বিঘœ ঘটছে। অনেক সময় দেখা দিচ্ছে যানজটও। এতে জনগণের দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। এদিকে, সড়ক থেকে বৈদ্যুতিক খুঁটি সরানোর জন্য যশোর ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিকে (ওজোপাডিকো) ১ কোটি ৭১ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তারপরেও সড়ক স¤প্রসারণের কাজ শুরুর ৯ মাস পার হলেও সরানো হয়নি দুই শতাধিক বৈদ্যুতিক খুঁটি। ওজোপাডিকোর এমন খামখেয়ালি কাজে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসীসহ নাম না প্রকাশে সড়ক ও জনপথ বিভাগের একাধিক কর্মকর্তারা। সালাম হোসেন নামে এক ট্রাকচালক বলেন, পালবাড়ি মোড় থেকে মুড়লি মোড় পর্যন্ত এই রাস্তার খুব বাজে অবস্থা। প্রায় বছর খানিক সময় ধরে জায়গায় জায়গায় খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। তারপরে বৈদ্যুতিক খুঁটি রাস্তার মাঝখানে রেখেই কাজ করছে। রাস্তার মাঝখানে বৈদ্যুতিক খুঁটি রেখে দেওয়ার কারণে প্রায়ই এই সড়কে চলাচলরত ট্রাক-পিকআপ খুুঁটিতে ধাক্কা মেরে দেয়। গত সপ্তাহেও এমনই দুটি দুর্ঘটনা ঘটেছে, যাতে একজন মারা যায়। জসিম হোসেন নামে আরেক ট্রাকচালক জানান, এই সড়কে দুর্ঘটনা হওয়ার মূল কারণ হিসেবে বৈদ্যুতিক খুঁটিকেই আমরা দেখছি। রাতে যারা ট্রাক বা বড় পরিবহন চালায়; এই বিদ্যুতিক খুঁটি’ই বড় সমস্যা করে। অসাবধানতার বসে প্রায়ই ড্রাইভার অন্য গাড়িকে সাইট দিতে যেয়ে খুঁটিতে ধাক্কা দেয়। তাই বৈদ্যুতিক খুঁটি সরিয়ে দ্রæত এই রাস্তার সংস্কারের দাবি জানাচ্ছি।
মোজাম্মেল হোসেন নামে স্থানীয় ব্যবসায়ী জানান, প্রতিটি কাজের আগে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রয়োজন। এই সড়কে যা হচ্ছে তা হলো পরিকল্পনাবিহীন। সরকারি দপ্তরগুলোর সমন্বয়হীনতার কারণেই সড়কে খুঁটি রেখে কাজ চলছে। এতে দুর্ঘটনার মাধ্যমে প্রাণহানির আশঙ্কার পাশাপাশি সড়ক প্রশস্তকরণেও ফাঁকিবাজি চলছে। নজরুল ইসলাম নামে আরেক ব্যবসায়ী বলেন, এ রকম অপরিকল্পিত উন্নয়ন আমরা চাই না। খুঁটি রেখে রাস্তার কাজ চলার কারণে প্রতিদিন ছোট বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। জনদুর্ভোগ লাঘবে সড়কটির সংস্কার কাজ শুরু হলেও নতুন করে জটিলতা তৈরি হয়েছে সড়কের উপরে থাকা বিদ্যুতের খুঁটি নিয়ে। এই বিষয়ে জানতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মাহাবুব এন্ড ব্রাদার্সে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেনি। জানতে চাইলে যশোরের সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এস. এম মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, বৃষ্টির কারণে কাজে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। ইতিমধ্যে বিদ্যুতের খুঁটি অপসারণের জন্য বিদ্যুৎবিভাগকে জানিয়েছি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সড়ক নির্মাণকাজ শেষ হবে। আর এই বিষয়ে যশোর ওজোপাডিকো-১ নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম বলেন, মণিহার-মুড়লি মহাসড়কে দুই শতাধিক বৈদ্যুতিক খুঁটি সরানোর কাজ চলমান রয়েছে। খুঁটি অপসারণের জন্য ১ কোটি ৭১ লক্ষ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। আশা করছি, চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে সব বিদ্যুতের খুঁটিগুলো অপসারণ করা যাবে।