নিজস্ব প্রতিবেদক
বিআইডবিøউটিএ’র ২০তম গ্রেডের কর্মচারী সঞ্জীব কুমার দাসের তদবির ও টেন্ডার বাণিজ্য, চাঁদাবাজী, দুর্নীতি, ঘুষ, নারী ও অর্থ পাচার, গণধর্ষণ এবং বø্যাকমেইলসহ নানা অপকর্ম তুলে ধরে মানববন্ধন করেছে ভুক্তভোগীরা। আজ শনিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ভুক্তভোগীরা মুখে কালো কাপর বেঁধে মানববন্ধনে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন দাবি জানান। সঞ্জীব ও তার বাহিনীর ভয়ে ভুক্তভোগীরা মুখে কালো কাপর বেঁধে মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করে। কারণ, প্রতারকরা চিনে ফেললে তাদের বড় ধরণের ক্ষতি করবে। লিখিত অভিযোগে ভুক্তভোগীরা বলেন, সঞ্জীব কুমার দাস এর বিরুদ্ধে রয়েছে অসংখ্য অভিযোগ। গণধর্ষণ, তদবির ও টেন্ডার বাণিজ্য, চাঁদাবাজী, দুর্নীতি, ঘুষ, নারী ও অর্থ পাচার, বø্যাকমেইলসহ এমন কোনো অপরাধমূলক কাজ নেই যা তিনি করেন না। সঞ্জীব কুমার দাস মাত্র ১৫ হাজার টাকা বেতনে বিআইডবিøউটিএ তে চাকরি করেন। কিন্তু তিনি একটি ৩০ লাখ টাকা দামের এলিয়েন গাড়িতে চলাচল করতেন। এই গাড়ি তাকে গোল্ডেন মনির কিনে দিয়েছেন বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে সঞ্জীব। বিআইডবিøউটিএ তে চাকরি করলেও সঞ্জীব কুমার মূলত গোল্ডেন মনিরের সোর্স হিসেবে কাজ করত। গোল্ডেন মনিরের যত দালালির কাজ ছিল, তার সবগুলোই দেখাশোনা করত সঞ্জীব । এছাড়াও সে বড় বড় কর্মকর্তার নাম ভাঙ্গিয়ে তদবির বাণিজ্য করে। এসব করে সঞ্জীব গাড়ি ও ফ্ল্যাটসহ নামে-বেনামে গড়ে তুলেছে বিপুল পরিমান অর্থ-সম্পদ। তার নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ডে আমরা অনেকেই নিঃস্ব হয়েছি। সঞ্জীব কুমার দাসের অপরাধগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো বিভিন্ন নারীদের ফাঁদে ফেলে ধর্ষণ করা ও বø্যাকমেইল করা। সে প্রথমে কোনো নারীর সঙ্গে পরিচয় হয়। এরপর বিভিন্ন দফতরে চাকরির প্রলোভন দেখায়। অতঃপর ভাল একটা সম্পর্ক গড়ে সুবিধামত কোনো জায়গায় নিয়ে ধর্ষণ ও গণধর্ষণ চালায়। তার চক্রের সাথে রয়েছে বেশ কয়েকজন সহযোগীও। জানা যায়, বেশিরভাগ ভুক্তভোগী নারী সমাজ ও মান-সম্মানের ভয়ে আইনের আশ্রয় না নিলেও কয়েকজন মামলা করেছেন। সেই মামলায় ইতোমধ্যে সঞ্জীব কুমার দাসকে গ্রেফতার করেছিল সবুজবাগ থানা পুলিশ। তখন ৫ দিন করে কয়েক দফা রিমান্ডেও ছিল সে। তারা বলেন, সঞ্জীব কুমার দাসসহ পাঁচজনকে আসামি করে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের এক নারী ২০২১ সালের ২৮ ফেব্রæয়ারি রাতে মামলার আবেদন করেন। এর পরের দিন ১ মার্চ মামলা হিসেবে রুজ্জু হওয়ার পর রাতেই দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়। তার মধ্যে সঞ্জীব একজন। জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় এটি একটি চক্র। এই চক্রের সদস্যরা আগেও গণধর্ষণের ঘটনা ঘটিয়েছে। ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে খিলগাঁও থানায়ও একটি গণধর্ষনের মামলা হয়। সেই মামলাতেও সঞ্জীব কুমার দাস অন্যতম আসামী। জানা গেছে, সঞ্জীব কুমার অসংখ্য নারীর সঙ্গে প্রতারণা করেছে। অনেকে সম্মানের ভয়ে মুখ খোলেন না। সঞ্জীব বেশ কয়েকজন নারীর সঙ্গে প্রতারণার কথা পুলিশের কাছে স্বীকারও করেছে। দুই মামলার এজাহার মতে, সবুজবাগ ও খিলগাঁও থানার থানার দুটি গণধর্ষণ মামলায় সনজিব কুমার মূল আসামী। এর বাইরেও বিভিন্ন দফতরে প্রতারণা ও ধর্ষণের শিকার একাধিক নারী সঞ্জীবের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। এছাড়াও উচ্চ পদে চাকরি দেওয়ার নাম করে এক যুবকের জমি বিক্রি করে ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। ওই যুবক এখনো টাকা ফেরত পাননি। আপনাদের আরো জানাচ্ছি যে, সঞ্জীব কুমার বিভিন্ন অভিযোগে বিআইডবিøউটিএ থেকে তিনবার বরখাস্ত হয়েছিলেন। সবশেষ শাস্তি হিসেবে তাকে খুলনায় বদলি করা হয়। এরপর সেখান থেকে মাদারীপুরে বদলি করা হয়। কিন্তু তিনি মাদারীপুরে না থেকে নানান অযুহাতে ঢাকায় থাকেন। মাদারীপুরে না থেকেও অন্য লোকের মাধ্যমে জাল স্বাক্ষর করে নিয়মিত হাজিরা দেয় এবং নিয়মিত বেতন তুলেন। লিখিত অভিযোগে ভুক্তভোগীরা বলেন, গণপূর্ত বিভাগ ও বিআইডবিøউটিএসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিভিন্ন লোকের নাম ভাঙ্গিয়ে ইতোমধ্যে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এই প্রতারক ও ভন্ড সঞ্জীব কুমার দাস। সেখানে সে বিভিন্ন লোকের নাম ভাঙ্গিয়ে তদবির ও টেন্ডার বাণিজ্য করে থাকে। অনেককে বø্যাকমেইল করেও হাতিয়ে নেয় বিপুল অঙ্কের টাকা। গোল্ডেন মনির র্যাবের হাতে গ্রেফতারের পর ঘটনা বেগতিক দেখে সনজিব কুমার কিছুদিনের জন্য নিরব হয়। এর কিছুদির পর থেকেই তার নতুন ফন্দি শুরু হয়। সনজিব কুমার এখন গণপূর্ত বিভাগের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলামের নাম ভাঙ্গিয়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে বিপুল অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। দুর্নীতি ও নানা অনিয়মের ফলে প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলামকে গণপূর্তের প্রধান প্রকৌশলী থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। বর্তমানে প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে শামীম আখতার। আশরাফুল ইসলাম আবার প্রধান প্রকৌশলী হওয়ার জন্য নানা তদবির ও লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন। পাশাপাশি বর্তমান প্রধান প্রকৌশলীকে হেয় করতে সঞ্জীব কুমার দাসবে ব্যবহার করছে আশরাফুল ইসলাম। এরই ধারাবাহিকতায় সঞ্জীব দাস গণপূর্তের প্রধান প্রকৌশলী শামীম আকখারের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালিয়ে বেড়াচ্ছে। ইতোমধ্যে ভুয়া নাম ও স্বাক্ষর ব্যবহার করে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও দুদকসহ বিভিন্ন দফতরে মনগড়া অভিযোগ দায়ের করে প্রতিনিয়ত হয়রানি করছে। এছাড়াও তার মূল কাজ হলো- বড় বড় কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মনগড়া অভিযোগ বানিয়ে তাকে বø্যাক মেইল করা। এসব অভিযোগ ভুয়া নাম ও স্বাক্ষর দিয়ে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, দুদকসহ বিভিন্ন দফতরে পাঠায়। সঞ্জীব কুমার দাস প্রথমে বড় বড় কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মনগড়া অভিযোগ বানিয়ে দুদকসহ বিভিন্ন দফতরে জমা দেয়। তারপর লবিং করে কিছু মিডিয়ায় নিউজ করিয়ে ওই কর্মকর্তাদের বø্যাকমেইল করে। তারা আরো বলেন, সঞ্জীব কুমার দাস সরকারের ভাবমূর্তি ও বিআইডবিøউটিএ কে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। এজন্য এই বø্যাকমেইল মাস্টার, ধর্ষক, প্রতারক ও দুর্নীতিবাজ সঞ্জীব কুমার দাসের প্রতারণায় আর কেউ যেনো ক্ষতিগ্রস্থ না হয় এজন্য তাকে পুনরায় গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী ও যথাযথ কর্তৃপক্ষসহ বিআইডবিøউটিএ’র চেয়ারম্যানের প্রতি আমরা আহŸান জানাবো যে, এই ধর্ষক, প্রতারক ও দুর্নীতিবাজ সনজিব কুমার দাসের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
এসময় ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- মো. অনিক, মামুন হোসেন, আলতাফ মন্ডল, আবুল হোসেন মিঠু প্রমুখ।