মো.সাইফুল ইসলাম, মুন্সিগঞ্জ
মুন্সিগঞ্জের চরাঞ্চলের মোল্লাকান্দি ইউনিয়নে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে কয়েক দফা গুলিবিনিময়, ককটেল বিস্ফোরণ ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের অন্তত ৩০ থেকে ৪০ জন আহত হয়েছে। শনিবার ভোর ছয়টার দিকে ইউনিয়নটির নোয়াদ্দা ও চর বেশনাল গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এই ঘটনার পর থেকে ওই গ্রামে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। ইউনিয়নটির সাবেক চেয়ারম্যান মহসিনা হক পক্ষের আহতরা হলেন, মোহাম্মদ রহমতউল্লাহ(২২), রানা ব্যাপারে(১৮),মো. শরিফ খান(২৫)।সারোয়ার হোসেন(২৫), রিফাত হোসেন(৯) হনুফা বেগম(৬০) রিপন হোসেন পাটোয়ারী পক্ষের আহতরা হলেন,তাসলিমা বেগম (৩৬), লালন মিয়া, মানিক শিকদার। স্থানীয়রা জানান, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্রকরে ২০১৬ সালে থেকে সদর উপজেলা আ.লীগের যুগ্ম সম্পাদক রিপন হোসেন পাটোয়ারী ও আ.লীগ নেত্রী মহসিনা পক্ষের সাথে বিরোধ চলে আসছে। গত কয়েক বছরে পক্ষ দুটির মধ্যে শতাধিকবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ২০২১সালের ইউপি নির্বাচনের রিপন পাটোয়ারী বিজয়ী হলে মহাসিন হকের লোকজনকে এলাকা ছাঙা করে দেয়।সম্প্রতি মহাসিনা হকের লোকজন এলাকায় ফিরে আসলে আবা দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। এঘটনায় দুই পক্ষের অনেক মানুষ আহত হয়েছে। এ ঘটনায় আহত গুলিবিদ্ধ আহত মাদ্রাসা ছাত্র রিফাতের মা বলেন, আমি আমার ছেলেকে বাড়িতে রেখে মরিচ তোলার জন্য জমিতে গিয়েছিলাম। আমার ছেলে আমার বাড়ির উঠানে খেলা করছিল এসময় রিপন পাটোয়ারী লোকজন এসে এলোপাতাড়ি গুলি করে। আমার ছেলে হাতে ও পায়ে গুলি লাগে। আহত হনুফা বেগম বলেন, সকালে রিপন পাটোয়ারীর ২৫- ৩০ জন লোক আমাদের বাড়িতে আসে। এসময় আমি বলি রোজার দিন তোমরা কেউ ঝগড়া কইরো না। একথা বলার সাথে সাথে ওরা আমার পায়ে ছড়া গুলি করে। নোয়াদ্দা গ্রামের আহত তাসলিমা বেগম বলেন, কল্পনার লোকজন বৃহস্পতি ২০-২৫ জন সকালে আমাদের বাড়িতে হামলা চালায়। তারা আমার বাড়িঘরে ভাঙচুর লুটপাট করে। আমার ঘর হতে তিন ভরি স্বর্ণালংকার ও নগদ ৮০হাজার টাকা নিয়ে যায়। আমার ঘরে টিভি ফ্রীজ সব ভেঙে ফেলে। আমি বাধা দিলে আমার হাত পিটিয়ে ভেঙে ফেলে। ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মহসিনা হক বলেন, গত ইউপি নির্বাচনের পর থেকেই আমার লোকজন গ্রামছাঙা ছিল। কিছুদিন আগে তাদেরকে সভার মাধ্যমে গ্রামে উঠানো হয়।তবে তার একদিন পরে আবারও আমাদের লোকজনদেরকে হামলা করে পিটিয়ে গ্রামছাঙা করে দেয় রিপনের লোকজন। যে কয়েকজন ছিল আজকে ভোরে বেছে বেছে তাদের উপর হামলা করা হলো।আমাদের বেশ কয়েকজনকে গুলিবিদ্ধ করে আহত করেছে। প্রশাসনকে বলে আমরা কোনো সুরাহা পাচ্ছিনা। নোয়াদ্দা গ্রামের বাবু গাজী বলেন, আমরা মহসিনা হকের নির্বাচন করেছিলাম। এটাই ছিল আমাদের বড় দোষ। এ কারণে আজকে সকালে রিপন পাটোয়ারির আমঘাটা, কংশপুরা লোকজন এসে আমাদের গ্রামে হামলা করে। বাড়িঘরে লুটপাট চালায়। গরু- বাছুর,ছাগল নিয়ে যায়। ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। গুলি করে আমাদের ২০ থেকে ২৫ জনকে আহত করে। আহতরা পুলিশের ভয়ে লুকিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। মোল্লাকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান রিপন হোসেন পাটোয়ারী বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা।তিনি বলেন, গত নির্বাচনের পর থেকে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মহসিনা হকের অনেক লোকজন গ্রামের বাইরে ছিলেন। কয়েকদিন আগে একটি সভার মাধ্যমে তার লোকজনকে গ্রামে আনা হয়। গ্রামে আসার পর থেকেই তারা আবার ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হয়েছে। গত ২৮ শে মার্চ থেকে আজকে পর্যন্ত পরপর তিনটি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনা গুলোতে তার অন্তত ১০ থেকে ১৫ জন গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছে। মুন্সিগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মো. আবু বক্কর সিদ্দিক শনিবার সকালে গণমাধ্যমকে জানান, এ ঘটনার খবর পাওয়ার পরপরই পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। যারা গ্রামকে উত্ত্যক্ত করার চেষ্টা করছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।