নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ:
মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলায় চলতি মৌসুমে উত্তোলন করা আলু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকেরা। জমিতে ও বাড়িতে আলু স্তুপাকারে রাখা হলেও মিলছে না পাইকার। লাভ তো হচ্ছেই না বরং উৎপাদন খরচ তোলা নিয়েই সংশয়ে রয়েছেন হাজারও কৃষক। এ অবস্থায় অবিক্রিত আলু সংরক্ষন নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তারা। এছাড়া যারা সংরক্ষন করেছে এর মধ্যে অনেকের আলু পচন ধরেছে। এর ফলে কৃষকদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। গতকাল সোমবার সকাল ১০ টার দিকে সরেজমিনে উপজেলার বয়রাগাদী ইউনিয়নের বিভিন্ন বাড়িতে আলু সংরক্ষণের চিত্র দেখা গেছে। এছাড়াও উপজেলার কৃষি জমিতে একই চিত্র রয়েছে।
এবার মৌসুমের শুরুতেই উত্তরবঙ্গের আলুতে সিরাজদিখান উপজেলার হিমাগারগুলো ভরে যাওয়ায় এই উপজেলার বেশিরভাগ কৃষকের আলু হিমাগারে রাখতে পারেনি। এতে আলু সংরক্ষন করতে না পাড়ায় এবং এখন পচন ধরায় অনেক কৃষক হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। পাইকার না পাওয়ায় আলু বিক্রি করতে না পারায় কৃষকদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। কৃষকেরা সরকারের সহযোগিতা কামনা করছেন। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, গত বছর এ উপজেলায় ৯ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছিল। তবে এ বছর ৯ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। গত বছরের চেয়ে এবছর ২৫০ হেক্টর কম আবাদ হয়। আরও জানা যায়,সিরাজদিখান উপজেলার হিমাগার গুলোতে উত্তরবঙ্গের আলু মজুদ করায় এই উপজেলার উৎপাদিত আলু সংরক্ষণ করতে পারছেন না কৃষকরা।
মণ প্রতি আলু উৎপাদন খরচ ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা হলেও বর্তমানে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে না। আবার সংরক্ষণের আলু পাইকার না পাওয়ায় উৎপাদিত আলু এখন দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ বছর সিরাজদিখানে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৯ হাজার ৩৫০ হেক্টর। কিন্তু ঘূর্নিঝড় জাওয়াতের কারণে কাঙ্খিত লক্ষমাতা অর্জিত হয়নি। দ্বিতীয় বার যে আলু রোপণ করা হয়েছে সে বীজের মানও খারাপ ছিলো। এতেই বিপাকে পড়েন কৃষক। গোবরদী গ্রামের কৃষক মো. ইয়াসিন বলেন, আমি এবার ৩০ বিঘা জমিতে আলু রোপণ করছি। দুইবারে আমার খরচ হয়েছে ২১ লক্ষ টাকার মত। এবার যে পরিমাণ আলু হয়েছে তাতে আমার এই টাকা উঠবে না। গত কয়েকদিন ধরে তীব্র গরমে আলু পচন ধরেছে। এতে আমি ২২৫ বস্তা আলু ৩০০ টাকা দরে প্রতি মন (৪০ কেজি) বিক্রি করেছি। কিন্তু এতে আমার ২০০ টাকা করে লস হচ্ছে। এর কারণ হচ্ছে ৫০০ টাকার উপরে আমাদের খরচ হয়েছে। দুইবারে আলু রোপণ করতে হইছে। এতে করে এবারও অনেক টাকা লোকসানের মুখে পড়তে হবে আমাকে।
আরেক জন কৃষক মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, আমার পাশের রাখা আরেক কৃষকের আলু পচন ধরেছে, এই দেখে আমার আলু বিক্রি করে ফেলেছি। আমি ৩০০ টাকা দরে আলু বিক্রি করেছি। আমার অনেক টাকার লোকসান হল। এবার কী হবে আমাদের আল্লাহই ভালো জানেন। আরো কয়েকজন কৃষকরা জানান, মৌসুমের শুরুতে টানা বৃষ্টিতে আলুর নষ্ট হলে দ্বিতীয় দফায় ধারদেনা করে আলু আবাদ করেন। এতে উৎপাদন খরচ হয় দ্বিগুণ। উপরন্ত আলুর ফলন কম ও মান ভালো না হওয়ায় উভয় সংকটে পড়েন তারা। কাজেই আলু চাষাবাদ করে এবার লোকসানের শঙ্কায় রয়েছেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রোজিনা আক্তার বলেন, আলু যেহেতু আমাদের চাহিদার চেয়ে বেশি উৎপাদিত হয়। সেই ক্ষেত্রে কৃষকদের আমরা পরামর্শ দিচ্ছি বিকল্প লাভজনক ব্যবসা ভুট্টা চাষ, হাইব্রিড বোরো ধান, শাকসবজি চাষ করা। এছাড়াও ডাল ও তেল জাতীয় ফসল চাষ করার বিষয়ে প্রশিক্ষনের কথা আমরা বলি। কিন্তু আলু মুন্সীগঞ্জের একটি ঐতিহ্যবাহী ফসল। কৃষক লাভ-লোকসানটাকে কিছুই মনে করে না। তারা মনে করে তাদের ঐতিহ্যটা ধরে রাখবে।