মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি
মুন্সীগঞ্জে সদর উপজেলার মদিনাবাজার এলাকায় মদিনাতুল মনোয়ারা মহিলা মাদ্রাসার পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী মরিয়ম আক্তার (১২) হত্যার আসামিদের বিচারের দাবীতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী। গতকাল রোববার মুন্সীগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে বেলা ১১ হতে ১২টা পর্যন্ত ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন করে নিহতের স্বজন ও এলাকবাসী। পরে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে জেলা শহরের প্রধান সড়ক পদক্ষিণ করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে সড়কে এসে শেষ হয়। এ সময় প্রায় ২ শতাধিক নারী ও পুরুষ ওই মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলে অংশগ্রহণ করে। নিহত মাদ্রাসা ছাত্রীর মা ফিরোজা বেগম বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা তুমি আমার মা। তুমি স্বজন হারিয়েছো, তুমি জানো স্বজন হারানোর কি ব্যাথা। তুমি আমার পাশে দাঁড়াও আমার অনেক চাপ আইতাছে আমাকে অনেক পেরেসানি দিতাছে। আমি যাতে আজকে মানববন্ধন না করি। আমাকে বলতেছে এগুলো ভালো হইবো না। আমার পরিনতি খারাপ হইবো ।
তিনি কাঁদতে কাঁদতে আরও বলেন, আমার মেয়েকে হত্যা করছে বৃহস্পতিবার সাড়ে ১১টা হতে ১২ টার দিকে। সদর হাসপাতালে আইনা আমাকে ২ টা বাজে খবর দিছে আমার মেয়ে মরিয়ম অসুস্থ হাসপাতালে আসতে হবে। নিহতের প্রবাসী বাবা মোশাররফ হালদার বলেন, আমি গতকলা সিঙ্গাপুর থেকে দেশে আসছি আমার মেয়ের হত্যার খবর পেয়ে মাদ্রাসা বর্তমানে ব্যাবসা হইয়া গেছে। মাদ্রাসা দেখাইয়া বিদেশীদের থেইকা খালি টাকা আদায় করে। এগুলির অধিকাংশর লাইসেন্স নাই। লাইসেন্স ছাড়া যত মাদ্রাসা আছে এগুলো বন্ধ করার আহবান জানাই। আমি চাইনা আমার মেয়ের মতো আর কারো মেয়ে এ রকম হোক। নিহতের বড় মামা শহিদুল ইসলাম জন্টু বলেন, আমার বোন সকাল ৯ টায় ভাগ্নিকে খাবার দিয়ে আসছে। ১০টা বাজে ওর সাথে শেষ কথা বলছে। হুজুর নামের যে ভন্ডগুলো আছে এগুলোর প্রকাশ্যে আমরা ফাঁসি চাই, ফাঁসির চেয়েও বড় কিছু চাই। সারা বাংলাদেশে এমনকি বিশ্বে যেন এ রকম ঘটনা আর না হয়। কিছু কিছু ভন্ড হুজুররা আছে দুটা চারটা রুম ভাড়া নিয়া মাদ্রাসা তৈরী করে। এগুলো যে আর না হয়। মাদ্রাসা হলে যেন বড় আকারে হয় লাইসেন্স নিয়ে করা হয়। এই আসামীর নামে এর আগেও রিপোর্ট ছিলো। আরও ২ বছর আগে সেইম এভাবে আরেকটা মাদ্রাস ছাত্রী মাইরা ফেলছে পরে ওরা ৩ লাখ টাকা দিয়া মিট করছে। আমাদের মেয়েটাকে গলাটিপে হত্যা করছে। এ সময় মানববন্ধনকারীরা ১২ বছরে শিশু মরিয়ম আক্তার হত্যার আসামিদের দ্রæত গ্রেফতারের পাশাপাশি তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির দাবি করেন। উল্লেখ্য – মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার মহাকালী ইউনিয়নের পেলারপাড় গ্রামের মরিয়মকে গেলো বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টার দিকে সদর উপজেলার মদিনাবাজারস্থ মদিনাতুল মনোয়ারা মহিলা মাদ্রাসা থেকে কাজের কথা বলে বাসায় নিয়ে যান মামলার প্রধান আসামি মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল ইউনুস মিয়া। পরে দুপুর ২ টার দিকে মাদ্রাসার ওই প্রিন্সিপাল মরিয়ম হার্ট এ্যার্টাক করছে সদর হাসপাতালে আছে বলে মরিয়মের পরিবারের কাছে খবর দেন। পরিবারের কাউকে না জানিয়ে নিহতের মরদেহ হাসপাতালে নিয়ে আসেন মাদ্রাসার পরিচালক মুফতি জামাল ও তার ছোট বোন জামাই মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল ইউনুস মিয়া (৪০)। পরে নিহতের মা ফিরোজা বেগম বাদি হয়ে শুক্রবার মামলা করেন। এ ঘটনায় মামলার প্রধান আসামী মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল ইউনুস মিয়াকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে পুলিশ। এ ব্যাপারে মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইনচার্জ ( ওসি) তারিকুজ্জামান বলেন, এ ঘটনায় ৩ জনকে এজাহার নামীয় আসামী করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। প্রধান আসামীকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। বাকি ২ জন মহিলা আসামী রয়েছে তারা পালাতক রয়েছে।