মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ
রাস্তার পাশে পতিত জমিতে সব্জি চাষ করে সারা ফেলেছেন মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার অর্ধ-শতাধিক কৃষক। কয়েক বছর ধরে উপজেলার আউটশাহী ও বেতকা ইউনিয়নের দু’টি রাস্তার পাশের ২ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে সবজি চাষ করে নজর কেড়েছেন তারা। স্থানীয় জাফর, আক্তার, সাইফুল, আবু তাহেরসহ অর্ধশতাধিক কৃষক রাস্তার পাশের পতিত জমিতে সিম, লাউ, কুমড়া চাষ করে নিজেদের সবজির যোগান দিচ্ছেন। পাশাপাশি উৎপাদিত সবজি গুলো বাজারে বিক্রি করে আর্থিক ভাবেও লাভবান হচ্ছেন। একজনের দেখাদেখি অন্যজন আগ্রহী হওয়ায় সেখানে সবজি চাষের পরিমান বারেই চলেছে। এতে মৌসুমি কর্মসংস্থানের সুযোগ হচ্ছে। ফলে কিছুটা হলেও কমছে বেকারত্ব, বাড়ছে কৃষি আয়। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার বেতকা ইউনিয়নের চাঙ্গুরীবাড়ি থেকে পাশের আউটশাহী ইউনিয়নের আউটশাহী গ্রাম পর্যন্ত সড়ক ও চাঙ্গুরী থেকে পাশের সুবুচনি সংযোগ সড়কে ২ কিলোমিটারের অধিক রাস্তার দু’পাশ জুড়ে চাষ করা হয়েছে সীম, লাউ, কুমড়া, টমেটো, ভরবটিসহ বিভিন্ন সবজির।
রাস্তার মধ্যে গাছ লাগিয়ে রাস্তার পাশে তৈরী করা হয়েছে বিশাল মাচা। গাছ গুলোতে এখন সবজিতে ভরপুর। সাধারনত: রাস্তার পাশে ফাঁকা জমি থাকায় এবং রাস্তার মাটি পাশের জমি হতে বেশ উচুঁ হওয়ায় আলো ও বাতাস প্রচুর থাকে বলে জানালেন চাষিরা। তাই রাস্তার পাশে সজি¦র বাম্পার ফলন হয়। অন্যদিকে, এ অঞ্চলের জমি গুলো সাধারনত প্রায় ৬ মাস পানির নিচে তলিয়ে থাকে। তাই কৃষক তলিয়ে থাকা জমিতে চাষাবাদ করতে পারেন না। কিন্তু রাস্তার পাশের জমি পানিতে না তলায় সারাবছরই রাস্তার পাশে সব্জি চাষ করা যায়।স্থাণীয়রা জানান, উপজেলার আউটশাহী গ্রামের জামাল শেখ ৪ বছর আগে সর্বপ্রথম ওই অঞ্চলে রাস্তার পাশে শুরু করেন সব্জি চাষ। তার সফলতা দেখার পর বাড়তে থাকে সব্জি চাষ। প্রতি বছরই বাড়তে থাকে সব্জি চাষ। বর্তমানে ওই এলাকার প্রায় অর্ধশতাধিক চাষি রাস্তার পাশের পরিত্যক্ত জমিতে চাষাবাদ করে সফলতা পেয়েছেন। চাঙ্গুরী গ্রামের জাফর সাইফুল, খোরশেদ হালদার ও আউটশাহী গ্রামের সাহাজ উদ্দিনদের দীর্ঘ রাস্তার পাশের সীম গাছের মাচা দৃষ্টিকারে এ পথে যাতায়াতকারীদের। চাঙ্গুরী গ্রামের আব্দুল মজিদ দেওয়ান বলেন, রাস্তার পাশে এই জমিগুলো ফাঁকাই পড়েছিল।
পরে এগুলোতে আমরা আবাদ শুরু করি। আরও বলেন, এখন শুধু আমাদের চাঙ্গুরী গ্রামের ২৫ থেকে ৩০ জন আবাদ করতেছে পাশের গ্রামের লোকজনও আবাদ করে। রাস্তার পাশে অনেক স্থান ফাকা থাকে ওই ফাকা স্থানে চাষাবাদ করাতে ফলন প্রচুর বেশি হয় সব্জি ভালো জন্মায়। আমারা নিজেরাও খাই আবার বাজারে বিক্রি করি। চাষী আবু তাহের বলেন, মানুষ কয়েক বছর ধরে রাস্তা পাশে খ্যাতি করতেছে। আমি এবছর শুরু করেছি। সীম, টমেটো বাঁধাকপি ,লাউ ,কুমড়া, ভরবটি লাগাইছি। বেশ ভালো হইছে। একদিকে নিজেরা খাচিছ অন্যদিকে আতœীয় স্বজনকেও দিচ্ছি আবার বিক্রিও করছি। অপর চাষী মজিদ দপ্তরী বলেন, আমি দির্ঘদিন মালয়শিয়া ছিলাম। দেশে এসে রাস্তার পাশের জমিতে লাও মিষ্টি কুমড়া, লুব্বা, টমেটো, কাঁচা কলা লাগাইছি। রাস্তার পাশে আলো বাতাশ ভালো পাই নিজেরা খাই আত্মীয় স্বজনদের দেই আবার বিক্রিও করি। এভাবে সংসার চালাইতেছি। রাস্তার পাশের উচু জমি হওয়ায় ক্ষেতি ভালো হয় আলো বাতাস ভালো পায়। নিচু জমিতে পানি উঠে যায় উচু রাস্তার পাশে পানি না ওঠায় একের পর এক চেঞ্চ করে সব্জি চাষ করা যায়। জেলা ভারপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা ওয়াহেদুর রহমান বলেন, এটি নি:সন্দেহে একটি ভালো উদ্যোগ। তাদের যদি সহযোগিতার প্রয়োজন হয়। তারা আমাদের সাথে যোগাযোগ করলে, অবশ্যই তাদের সকল প্রকার সহযোগিতা করা হবে।