নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ:
মুন্সীগঞ্জ জেলায় এ বছর বিগত বছরের তুলনায় অধিক সব্জি উৎপাদন হয়েছে। এদিকে কৃষক হতাশায় রয়েছেন পাইকারি বাজারে অন্যান্য বছরের থেকে দাম কম থাকায়। আবার অন্য বছর তুলনায় এ বছর পানি আগাম আসায় কৃষকের মাথায় হাত পরেছে। জেলার পাইকারি বাজার গুলোতে অনেক সব্জি সরবরাহ থাকায় দাও বেশ কম। জানা যায়- অসময়ে সিলেটসহ দেশের উত্তরাঞ্চলের বন্যার পানিতে মুন্সীগঞ্জের কৃষি জমিগুলো প্লাবিত হতে শুরু করেছে। এতে কৃষকের অনেক সব্জি জমি তলিয়ে যাচ্ছে। তাই উৎকন্ঠায় রয়েছেন কৃষক। একদিকে বাজারে প্রচুর সব্জির সরবারাহ বাড়ায় দাম কমেছে অন্যদিকে বন্যার পানিতে কৃষি জামি প্লাবিত হতে শুরু করায় তারা অনেকে নিচু জমির অপরিপক্ক সব্জিও কেটে বিক্রির জন্য নিয়ে এসেছেন। সরেজমিনে- গতকাল (১ জুন) বুধবার সদর উপজেলার বজ্রযোগীনি বাজার ও বটতলা বাজরের সব্জির আড়ৎগুলোতে গিয়ে দেখা যায় আড়ৎগুলো সব্জিতে ভরে রয়েছে। পাইকারদের হাকডাকে মুখরিত ওই দুইটি পাইকারি বাজার। শত শত মন সব্জি রয়েছে আড়ৎগুলোতে। সকাল হতে দেশের বিভিন্নস্থানের পাইকাররা এখান থেকে সব্জি ক্রয় করছেন। এদিকে- মুন্সীগঞ্জে উৎপাদিত হাজারো মণ সবজি প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে ঢাকার কারওয়ান বাজার, যাত্রাবাড়ী, কুমিল্লা, নারায়ণগঞ্জ, ফরিদপুর, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, পিরোজপুর, বরিশালসহ অন্যান্য জেলায়। এখানকার সব্জি সোদি আরব, দুবাই সহ অনেকে দেশেও রপ্তানি হয়ে থাকে।
সদর উপজেলার – বজ্রযোগিনী, রামপাল, মহাকালী, টঙ্গীবাড়ি উপজেলার সোনারং-টঙ্গিবাড়ী, আবদুল্লাহপুর ইউনিয়ন ও তার আশপাশের জমিগুলোতে প্রতি বছর এ মৌসুমে প্রচুর পরিমান চাষ হয় করলা, কহি, ধুন্দল, লাউ, জালি, ঝিঙা, বেগুনসহ অন্যান্য সবজি। কৃষি অফিসের তত্ত¡াবধানে এখানকার বেশ কিছু কৃষক সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থার মাধ্যমে বিষমুক্ত সব্জি উৎপাদন করছেন। যার কারনে বেড়েছে এখানে উৎপাদিত সব্জির চাহিদা। সরেজমিনে দেখা যায়, বজ্রযোগীনি বাজার আড়তে করলা ট্রেতে ভরছেন গাজীপুর এলাকার পাইকার বিপ্লব। তিনি বলেন, এখান থেকে সকালে ৩০/৩২টাকা কেজি দরে করলা ক্রয় করেছেন তিনি। ঢাকার কাওরান বাজারে নিয়ে যাবেন রাতে। সেখানে বিক্রি করবেন। তবে ব্যাবসায় এ মুহুর্তে তেমন ভালো না সব্জির দাম বাজারে অন্যান্য সময়ের তুলনায় অনেক কম। সদর উপজেলার ধামধ গ্রামের সব্জি চাষী হাসান মাদবর বলেন, প্রায় ৩০০ শতাংশ জমিতে সব্জি চাষ করেছি। সব্জি ভালো হইছে। সবে মাত্র বিক্রি করা শুরু হইছে। কিন্তু সিলেটে বন্যার পানি আমাদের জেলায় আসতে শুরু করেছে। জমিতে যাতে পানি না উঠতে পারে সে জন্য খালের মুখে বাঁধ দিয়ে রাখছি। কৃষক সুমন বলেন, ৭ গন্ডা (৪৯) শতাংশ জমিতে সব্জি চাষ করছি। ৪০ হাজার টাকা খরচ হইছে। এ পর্যন্ত ১৭/১৮ হাজার টাকা বিক্রি করছি। কিন্তু সিলেটের বন্যায় জমি তলিয়ে যাচ্ছে।
এখোনতো সবই লচ হইবো। কৃষক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, সার, বীজ, কিটনাশকের দাম বাজারে বেশি কিন্তু সব্জির দাম নেই। তারপরে সিলেটের বন্যায় আমাদের সব্জি সব তলিয়ে যাচ্ছে। আমরা এখোন একেবারে নিরুপায় হয়ে পরেছি। সদর উপজেলার বিসমিল্লাহ বানিজ্যালয়ের মালিক দেলোয়ার হোসেন মেম্বার বলেন, সব কিছুর দাম বেশি কিন্তু কৃষক যেটা উৎপাদন করে সেটার দাম নেই। গতবছর করলা বেঁচছি ৫০ টাকা কেজি এবার তা ২৫ থেকে ২৬ টাকা কেজি। দুন্দল ১০ থেকে ১২ টাকা, লাউ বিক্রি করতেছি ২০ টাকা পিছ, জালি ২০ থেকে ২২ টাকা, জিংগা কহির দামও কম। কৃষক পয়সা পাইতাছে না। পাইতাছে খুচরা বিক্রেতারা। সিলেটের বন্যায় কৃষকে সব সব্জি তলায় যাইতেছে গা। কৃষকের হইছে মরন দশা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচারক মো. খোরশিদ আলম বলেন, আমাদের অফিসের তত্ত¡াবধানে একটি প্রকল্পের আওতায় জেলায় আমাদের বেশ কিছু কৃষক বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনে উদ্বুদ্ধ করছে। তবে এখোন পর্যন্ত শতভাগ বিষমুক্ত সব্জি উৎপাদন করতে সক্ষম হয়নি। তবে আমাদের পক্রিয়ার মাধ্যমে উৎপাদিত সব্জি দেশের অন্যান্যস্থানে উৎপাদিত সজ্বির তুলনায় অনেক গুনগতমান ভালো। কৃষকের জমি আগাম পানিতে তলিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে তিনি আরও বলেন, মানুষ খাল-বিল ভরাট করে পয়নিস্কাশন ব্যবস্থা বন্ধ করে যত্রতত্র হাউজিং প্লট তৈরী করছে। যার ফলে পানি নামতে পারছেনা একারনে অসময়ে কৃষকের জমি তলিয়ে যাচ্ছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যাবস্থা গ্রহণ করতে হবে।