নুরুল হুদা, মেহেরপুর
মেহেরপুরে বেশ কয়েকদিন কখনো মাঝারি, কখনো ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। কৃষকেরা ক্ষেত থেকে বোরো ধান কাটা মাড়াই শুরু করেছেন। বাড়তি মজুরি দিয়েও শ্রমিকের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে বাধ্য হয়েই অনেক কৃষক স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বোরো ধান ঘরে তোলার কাজ করছেন। আবার অনেকেই আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি দিয়ে কাটা মাড়াই করছেন। তবে গেল বছরের তুলনায় বাড়তি খরচ গুনতে হচ্ছে কৃষকদের। গত শুক্রবার ও শনিবার জেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে কৃষকদের ধান নিয়ে ভোগান্তি পোহাতে দেখা গেছে। যুগিরগোফা গ্রামের আবু বক্কর বলেন, অন্যান্য বছর এক বিঘা ধান কাটার পর, মাড়াই করে ঘরে তুলতে সর্বোচ্চ পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা খরচ হতো।
কিন্তু বৃষ্টিপাতের কারণে এবার খরচ প্রায় তিন গুণ বেড়েছে। তিনি বলেন, এখন এক বিঘা জমির ধান কাটতেই লাগছে ছয় হাজার টাকা। পানি কাদার জন্য বাড়তি গাড়ি ভাড়াও লাগছে। ধান মাড়াই করে ঘরে তুলতে আরো বাড়তি তিন হাজার টাকা লাগছে। জেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, মেহেরপুরের তিন উপজেলায় এ বছর বোরো ধানের আবাদ হয়েছে ২০ হাজার হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে মুজিবনগর উপজেলায় ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩ হাজার ৩৩০ হেক্টর। চাষ হয়েছে ৩ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৮৫ হেক্টর জমিতে বেশি ধান চাষ হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৩০ থেকে ৪০ ভাগ ধান কেটে বাড়িতে আনতে সক্ষম হয়েছেন কৃষকরা। বাকি ৬০ থেকে ৭০ ভাগ ধান বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে আছে।বৃষ্টির কারণে বাকিরা সমস্যায় পড়েছেন। অশনির প্রভাবে বৃষ্টিপাতের কারণে অন্তত দুই হাজার হেক্টর জমির ধান ক্ষতির মুখে পড়েছে। দুই বিঘা জমিতে এ বছর বোরো আবাদ করেছেন জেলার কামারখালি গ্রামের কৃষক আনারুল ইসলাম। মাঝারি ও ভারী বৃষ্টির কারণে তাঁর পুরো জমির ধান পানির নিচে চলে গেছে।
হতাশার সুরে আনারুল বলেন, খেতের ধান ঘরে তুলতে যা খরচ হবে ধান বিক্রি করেও সে খরচ উঠবে না। তাই ভাবছি, ধান ঘরে তুলা দরকার নেই। পানি শুকালে ট্রাক্টর দিয়ে চষে দেব। রাইপুরের কৃষক আল আমিন জানান, তিনি চলতি মৌসুমে পাঁচ বিঘা জমিতে খাটোবাবু জাতের ধান এবং দুই কাঠা জমিতে বাংলামতি (ব্রি-৫০) জাতের ধান আবাদ করেছেন। এক বিঘা জমি এক ফসলি বন্দোবস্ত নিতে লাগে ছয় হাজার টাকা। জমি চাষ, ধানের চারা, সার, সেচ ও নিড়ানির জন্য শ্রমিক খরচ বাবদ আরও পাঁচ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।
তিনি বলেন, গেল বছর ধান কেটে মাড়াই করে ঘরে তুলতে চার হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এবার আর সেটা হবে না। ৭/৮ হাজার টাকা খরচ হবে। ধানের দাম দেড় হাজার টাকার নিচে হলে চাষি বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কুঞ্জনগর গ্রামের চাষি আক্কাচ আলী জানান, গেল বছর ধানকাটা লেবারদের হাজিরে ছিল ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। এ বছর এক লাফে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা দাবি করছে তারা। তাই বাড়ির লোকজন নিয়েই কাজ শুরু করেছি। মেহেরপুর কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. সামসুল আলম বলেন, বর্তমানে কৃষকরা বেশ সচেতন। প্রযুক্তির দিক দিয়েও মেহেরপুরের কৃষকরা পিছিয়ে নেই। অশনির আঘাতে অন্যান্য জেলার চেয়ে কম ক্ষতি হয়েছে মেহেপুরে। উঁচু জমিতে ধানের তেমন ক্ষতি না হলেও নিচু জমিতে চাষ করা বোরো নিয়ে কষ্টে পড়েছেন চাষিরা। তিনি আরও বলেন, যারা সরকারি ভর্তুকি মূল্যে হার্ভেস্টার মেশিন নিয়েছেন তারা তাদের জেলার মধ্যে ব্যবহার করবেন এমন নির্দেশনা দিচ্ছি। শ্রমিক সংকট এড়িয়ে চাষিরা যাতে সময়মতো উৎপাদিত ফসল ঘরে তুলতে পারেন সে জন্যই সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে।