খায়রুল আলম রফিক
২শ’৯২ কোটি ১১ লাখ ৫১২ টাকা দুর্নীতি অনিয়ম, সরকারি অর্থ অপচয় ও মাঠকর্মীদের ট্রেনিং এর নামে ভুয়া ভাউচারে টাকা আত্মসাৎ এবং ময়মনসিংহ জিলা স্কুলে ছেলেকে জালিয়াতি করে ভর্তি ঘটনায় ফেঁসে যাচ্ছেন ময়মনসিংহ যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সাবেক উপ-পরিচালক ফারজানা পারভিন। তিনি এর আগে ন্যাশানাল সার্ভিস কর্মসূচি প্রকল্প চলাকালীন সময়ে জামালপুর জেলায় কর্মরত ছিলেন। তিনি কাওকে তিনি পরোয়া করেন না। বলে বেড়ান, আমার স্বামীর বন্ধু যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব ডা. জহিরুল ইসলাম। ফারজানা পারভিনের স্বামী নান্টু ও যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব ডা. জহিরুল ইসলাম একই উপজেলার বাসিন্দা। জানা গেছে, ময়মনসিংহ যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের আওতায় ১০ উপজেলায় বরাদ্দকৃত ২শ’ ৯২ কোটি, ১১ লাখ ৫১২ টাকার মধ্যে বিপুল টাকা দুর্নীতি- অনিয়ম এবং অপচয় অভিযোগে ডিডি ফারজানা পারভিনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে। পরিচালক মফিজুল ইসলামসহ তিন সদস্য একটি টিম আজ ২৯-৩-২২ তারিখে সরেজমিনে তদন্ত করতে ময়মনসিংহ যাচ্ছেন বলে জানান ডিডি মোখলেছুর রহমান। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহা-পরিচালক আজহারুল ইসলামের নির্দেশে পরিচালক মফিজুল ইসলাম, ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসকের নির্দেশে ময়মনসিংহ যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রোকন উদ্দিন ভুইয়া, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ময়মনসিংহ জেলা শাখার কর্মকর্তারা সরেজমিনে তদন্ত শুরু করেছেন। ডিডি ফারজানা পারভীনের দূর্নীতি অনিয়মের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করলে তিনি স্বামীর বন্ধুদের দাপট দেখান এবং তাকে কেউ কিছু করতে পারবে না বলে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বিতর্ক ও বিভ্রান্তি ছড়ান। এদিকে তিনি আবারও ময়মনসিংহে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরে বদলী হয়ে আসতে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন। ইতিপূর্বেও তিনি তার স্বামীর বন্ধু যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ডা: জহিরুল ইসলামের যোগসাজশে এসব দুর্নীতি অনিয়ম ও সরকারি অর্থ অপচয় করেছেন বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। ফারজানা পারভিন উপ-পরিচালক পদকে পুঁজি করে নানা অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছেন। মালিক হয়েছেন অঢেল বিত্তের। কিন্তু অঢেল বিত্তের মালিক হওয়ার মেশিন পূর্বের কর্মস্থল ময়মনসিংহ ও জামালপুর। এখন তিনি কিশোরগঞ্জে বদলী হওয়ায় অনেকাংশে ভেস্তে গেছে। তাই ময়মনসিংহে আবারও বদলী হতে মড়িয়া হয়ে উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, ফারজানা পারভিন, ময়মনসিংহ সদরের উপজেলা কর্মকর্তা আবু আহসান মোহাম্মদ রেজাউল হকসহ কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ঘুষের বিনিময়ে ভূয়া জাতীয় পরিচয়পত্র সৃজনপূর্বক সুবিধাভোগী দেখিয়ে ন্যাশনাল সার্ভিস প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক,সমন্বিত জেলা কার্যালয়,ময়মনসিংহ অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য উদঘাটনে মাঠে নামায় দেশজুড়ে বেশ আলোচিত এই কর্মকর্তা। অভিযোগ উঠেছে, ন্যাশনাল সার্ভিস প্রকল্প ময়মনসিংহ যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের আওতায় বরাদ্দকৃত টাকার পারিমাণ ২শ’ ৯২ কোটি ১১ লাখ ৫১২ টাকা। এই বরাদ্দকৃত টাকা ফারজানা পারভিন নয় ছয় করেছেন মর্মে দৈনিক আমাদের কন্ঠসহ বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হয়। সংবাদের সূত্র ধরে দুদুকের টিম ত্রিশালের যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর ও ময়মনসিংহ জেলা কার্যালয়ে অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে প্রাথমিক সত্যতা পায় দুদুক টিম। ফারজানা পারভিন চাকুরি জীবনে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে ময়মনসিংহ অঞ্চলে ১৮ বছর চাকুরি করেছেন। ফারজানা পারভিনের ক্ষমতার প্রভাবে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারির প্রাত্যহিক সূচি এলোমেলো হয়ে গেছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ফারজানা পারভিনের বাড়ি সাতক্ষিরা জেলায়। বিয়ে করেছেন ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলায়। সেই সুবাদে ময়মনসিংহ জেলার ভোটার তিনি। ময়মনসিংহের নিজ বাসায় থেকে কিশোরগঞ্জে চাকুরি করছেন। যারা তার দুর্নীতি অনিয়মের প্রতিবাদ করেছেন তিনি তাদের অনেককেই বদলী করেছেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ডা: জহিরুল ইসলামের ক্ষমতার প্রভাবে। এদিকে ফারজানা পারভিন ময়মনসিংহ শহরের বাসায় থেকে কিশোরগঞ্জের মিঠামইনে গিয়ে কি করে ন্যাশনাল সার্ভিস প্রকল্পের কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেন ? না গিয়েই কি করে বিল উত্তোলন করলেন? এমন প্রশ্ন উঠেছে। দৈনিক আমাদের কন্ঠসহ বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশ, ফারজানা পারভিনের যোগসাজশেই প্রকল্পের বরাদ্দকৃত অনেক অর্থ নয়ছয়, অপচয়,আত্বসাত করা হয়েছে। ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলাসহ বৃহত্তর ময়মনসিংহের বিভিন্ন উপজেলায় কর্মসংস্থান বাড়ানোর লক্ষ্যে পাইলট হিসাবে সরকার ন্যাশনাল সার্ভিসের আওতায় প্রকল্প হাতে নেয়। এসএসসি পাশ বা ততোধিক পাস তরুন তরুনীরা এই কর্মসূচীর আওতায় প্রকল্পকালনি সময়ে কর্মসংস্থান ভাতায় কাজ করেছেন হিসাবে দেখানো হয়। অভিযোগ আছে, ময়মনসিংহ শহরের মাসকান্দা বাইপাসসহ শহরের কয়েকস্থানে কয়েক কোটি টাকার জমি ক্রয় করেছেন নামে-বেনামে। তিনি এহেন কর্মকান্ডে সরকারের পদস্থ কর্মকর্তারা বিব্রত করেছেন । জানা যায়, ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচির আওতায় তিন মাসের প্রশিক্ষনের পর সরকারের দেয়া বিভিন্ন কর্মসংস্থানে নিয়োজিত করা হয় মাঠকর্মীদের। দুর্নীতি অনিয়ম ও সঠিক নিয়োগ না হওয়ায় প্রকৃত তরুনদের হয়নি যথাযথ কর্মসংস্থান। বেকারদের কর্মসংস্থানে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার ভিত্তিক প্রকল্প ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচির অনিয়ম-দুর্নীতি ও জালিয়াতি দুদুকের অনুসন্ধানে ফেঁসে যাবেন ফারজানা পারভিনসহ সংশ্লিষ্ট অনেকেই। দুদকের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দুর্নীতিবাজদের হয়ে তদবির করলে হাতকড়া পরতে হবে তাদেরকেও। অভিযোগ রয়েছে, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপ- সচিব ডা. জহিরুল ইসলামের শেল্টারে ও যোগসাজশে তার সকল দুর্নীতি অনিয়ম ধামাচাপা দিতে অপতৎপরতা অব্যাহত আছে। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের পরিচালক মফিজুল ইসলাম দৈনিক আমাদের কন্ঠে জানান, আমি আগামীকাল সরেজমিনে তদন্তে যাবো।