এইচ এম জালাল আহমেদ
সড়কে গণপরিবহন নেই বলতে বাস শুণ্য। মানুষের অবাধ চলাচল রয়েছে। পরিবহনও রয়েছে, রীতিমত সড়কে যানজট বিদ্যমান। তেমনটিই দেশের গণমাধ্যম বলছে। তবে প্রায় দেড়দিন নৌপথে লঞ্চ চলার পর গতকাল ২ আগস্ট সোমবার থেকে আবারো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। প্রতিরোধহীনভাবে সড়কে যেহারে মানুষ চলাচল করছে তাতে লকডাউন কঠোরভাবে পালিত হচ্ছে তা মেনে নেবার কোন সুযোগ নেই। বিভিন্ন পরিবহনে যেভাবে মানুষ যাতায়ত করছে তাতেও স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে তাও বলা মুশকিল। যদিও দু/চারজনের মখে মাস্ক পড়া দেখা যায়। সার্বিকভাবে বিশ্লেষণ করলে পরিস্কারভাবে বলা না গেলেও লঞ্চেই করোনা ছড়ায় বলে ধরে নিতে হচ্ছে। এটা হচ্ছে নৌপথের জন্য। সড়ক পথে শুধুমাত্র বাসের ভেতর করোনার প্রভাব বিস্তার ঘটে বলে বুঝে নিতে হবে। তাই কঠোর লকডাউন মানে লঞ্চ ও বাস চলবে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলবে না। মসজিদে স্বাভাবিক অবস্থায় নামাজ আদায় করা যাবে না। অনেকদিন তো হলো লঞ্চ বাস বন্ধ রয়েছে। তারপরও তো স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়র হিসেব বা পরিসংখ্যান মতে করোনায় আক্রান্ত ও প্রাণহানির সংখ্যা তেমন একটা কমছে না। বরং মাঝে মধ্যে আতঙ্কিত হবার মত পরিসংখ্যান দেখা যায়।
সরকারী বেসরকারী কোন পরিবহনই শুধু নিজস্ব সেবামূলক বা দাফতরিক কাজে নিয়োজিত নয়। সবগুলো না হলেও বেশীরভাগ পরিবহন যাত্রী বহনের সেবায় নিয়োজিত। এ কাজ করে প্রতিদিন ভালোই উপর্জন হয় করে তারা। আর্থিকভাবে তারা লাভবান হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গাড়ীচালক বলছেন, তার বসকে প্রতিদিন পনের’শ টাকা দিতে হবে। তার চাহিদা মেটার পর তেল গ্যাসের খরচ পুষিয়ে যা থাকে ততটুকুই তার। রাত ১২ টা পর্যন্ত সড়কে ঘুড়ে ৪/৫ হাজার টাকা পাওয়া যায়। গ্যাস তেল ও খাবার খরচ গিয়ে কমপক্ষে প্রতিদিন গড়ে ২৪/২৫ শত থাকে। বসকে দিয়ে সব খরচান্তে ৯ শ থেকে ১১ শ টাকা নিয়ে বাসায় ফিরেন। একই ভাবে প্রাইভেট গাড়ীর ক্ষেত্রেও তথ্য রয়েছে। এসব গাড়ীর বিরুদ্ধে সড়ক আইনের মামলা হয়না। তবে জরুরি কাজে বা প্রয়োজনে সিএনজি নিয়ে কেউ বের হলে সে গাড়ীর ওপর সড়ক আইনে মামলা ও জড়িমানা দু’টোই হয়। কি চমৎকার বিচার এবং অর্থ আদায়ের সহজ একটি পথ। বিভিন্ন সাইনর্বোড লাগানো গাড়িগুলো অবাধে যাত্রী বহন করছে অধিক অর্থের বিনিময়। যেমনটি আবদুল্লাহপুর থেকে মহখালী একশ টাকা। ফারগেট পর্যন্ত গেলে ২শ টাকা। একইভাবে মগবাজর গেলেও তাই। তবে এর বাইওে যেখানে ঢাকার মধ্যে সেখানে ভাড়া ৩শ টাকা জনপ্রতি। ভাল ব্যবসা।
সরেজমিনে আরো যা দেখা গেছে একটি প্রাইভেটকারে চালক ছাড়া সাধারণত তিনজন চলতে পারে। কিন্তু প্রায় প্রাইভেটকারে চালকের সাথে একজন এবং পেছনে ৩ থেকে চারজন বসে যাতায়ত করছে। রিকশা বা ভ্যান গাড়িতে তিন থেকে দশ জন করে মানুষ বহন করছে। রিকশায় তিনজন ভ্যানে দশজন। অন্যান্য পরিবহন তো রয়েছে তাতে কিভাবে মানুষ বহন করছে তা বলাবাহুল্য। অনেক পরিবহনের ছবি ইতিমধ্যেই গণমাধ্যমে স্থান পেয়েছে। সোজা কথা সড়কে লোকারোণ্য। মানুষ ও যানবাহনের যথেষ্ট ভির রয়েছে। নেই শুধু গণপরিবহন হিসেবে সাধারণ মানুষের চলাচলের বাস। বন্ধ রয়েছে নৌপথে মানুষ চলাচলের বাহন লঞ্চ। হাট বাজার নিয়মিতভাবে দুপুর তিনটা পর্যন্ত জটলার মাঝেই বসে আসছে। তিনটার পর পুলিশ অধিকাংশ দোকান বন্ধ করতে পারলেও সন্ধ্যা থেকে পাড়া মহল্লায় অবাধ দোকান খোলা থাকে। সেখানে মানুষের সমাগম যে নেই তা নয়। রাত ১২ টা পর্যন্ত মোটামুটি ভালো মানুষের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। জানি না রাষ্ট্র দেখতে পায় কিনা। এগুলো দেখা প্রয়োজন ছিল কিন্তু কেউ দেখার নেই বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। জানিনা লকডাউন বা কঠোর লকডাউন এর চরিত্র ও মেজাজ কি ধরনের হতে হয়। তবে যতটুকু বোঝা যায় তাতে বিদ্যমান রিস্থিতিতে মনে করার কিছু নেই।
পরিশেষে যে কথা বলতে চাই তা হচ্ছে উপরে সংক্ষিপ্তভাবে যে বিষয়গুলো বর্ণনা দেয়া হয়েছে তা যদি সত্য হয় তাহলে সড়ক পাড়া মহল্লায় কঠোর লকডাউন বাস্তবায়ন হয়েছে বলে দাবি করা সম্ভব? অর্ধাৎ ওভাবে মানুষ স্বাস্থ্যবিধিনিষেধ উপেক্ষা করে চলাচল করলে যদি করোনা ভাইরাসের প্রভাব বিস্তার না ঘটে তাহলে লঞ্চে সাড়িবদ্ধভাবে স্বাস্থ্যবিধিতে চলাচল করলে করোনা ছড়াবে কিভাবে। লঞ্চে তো সারা দিন মানুষ বসে থাকবে না। কয়েক ঘন্টার বিষয়। অপরদিকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহন চলাচল করলে সমস্যাটা কোথায়। যেভাবে দুরদুরান্ত থেকে মানুষ নানা পরিবহনে কষ্ট ও ভোগান্তিতে চলাচল করছে তাতে করোনা বিস্তারের সম্ভবনা অনেক বেশী লঞ্চ গণপরিবহনের চেয়ে। তারপরও রাষ্ট্র যখন এ দু’টো যানবাহন বন্ধ রেখেছে তখন নিশ্চিত করেই ধওে নিতে হবে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিত, গণপরিবহন ও লঞ্চে করোনা ভাইরাস বিরাজ করছে। এ সব স্থানে জনসমাগম ঘটলে করোনা আরো বেশী মহামারি হিসেবে বিস্তার লাভ করবে। বিশেষ করে সড়কের চেয়েও নৌপথে করোনা সহজে বিস্তার ঘটে বলেই বোধ হয় লঞ্চ বন্ধ রাখা হয়েছে। সে কারনেই বলা হয়েছে তাইলে সড়কে নয় করোনা লঞ্চে। এ ব্যাপারে রাষ্ট্রের নজর দেয়া প্রয়োজন এবং দিবে বলে জাতির প্রত্যাশা।