যশোর প্রতিনিধি :
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) সদ্য বিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আনোয়ার হোসেনকে নিয়ে মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে শিক্ষক-কর্মচারীদের দু’টি পক্ষ। গত বুধবার প্রেসক্লাব যশোরের সামনে ১০ গজ ব্যবধানে পক্ষে-বিপক্ষে মানববন্ধন হয়েছে। তবে পুলিশের তৎপরতায় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। সদ্য বিদায়ী উপাচার্যের পক্ষে যবিপ্রবি পরিবারের ব্যানারে মানববন্ধন শেষে প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন যবিপ্রবি’র রিজেন্ট বোর্ডের সদস্য ও শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. ইকবাল কবীর জাহিদ। এসময় তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালযের একটি স্বার্থন্বেষী মহল যে ৫৫টি অভিযোগ তুলেছেন, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা; অনেকগুলো তুচ্ছ ও হাস্যকর। ভুলে ভরা, মিথ্যা ও মনগড়া তথ্য দিয়ে যবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির ব্যানারে কতিপয় শিক্ষক সমিতির গঠনতন্ত্র লঙ্ঘণ করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনে (ইউজিসি) যবিপ্রবির সদ্য বিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে ৫৫টির মতো কল্পিত অভিযোগ দেন বলে জানতে পেরেছি। সেখানে আশানারূপ সাড়া না পাওয়ায় এ স্বার্থান্বেষী মহল সংবাদ সম্মেলনে সেই ৫৫টি কল্পিত অভিযোগ তুলে ধরেন। কতিপয় শিক্ষকের এমন কর্মকাÐে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার স্তম্ভিত। তিল তিল করে সারাদেশে যবিপ্রবির যে সম্মান অর্জিত হয়েছিল, তাদের কারণে তা আজ ভ‚লুণ্ঠিত। এ জন্য একদিন তাদের যবিপ্রবির শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারী সর্বোপরি মেহনতি জনতার কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। অধ্যাপক ড. মোঃ ইকবাল কবীর জাহিদ বলেন, মাত্র ৩৫ একর আয়তনের এ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয় ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষ হতে। আয়তনে ছোট আর বয়সে নবীন হলেও বিভিন্ন বাধা-বিঘ্ন অতিক্রম করে সেশনজট মুক্ত শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের গবেষণা ও উদ্ভাবনকে উৎসাহিতকরণ এবং কোভিড সংকটকালে দেশের প্রথম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে করোনা ভাইরাস পরীক্ষায় অগ্রণী ভ‚মিকা পালনসহ শিক্ষা ও গবেষণাক্ষেত্রে বহুবিধ অসাধারণ অর্জনের কারণে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি) এখন বাংলাদেশের এক অনুকরণীয় উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। যবিপ্রবিতে প্রায় ২৭২ জন শিক্ষক থাকলেও তাদের মানববন্ধনে ৭-৮ জন ছাড়া সাধারণ শিক্ষকরা উপস্থিত থাকেন না। সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সেলিনা আক্তার বলেন, সারা বিশ্ব যখন করোনা ভাইরাস অতিমারীতে ঘরবন্দী, বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম যখন বন্ধ, তখন স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে করোনা ভাইরাস পরীক্ষায় এগিয়ে আসে যবিপ্রবি কর্তৃপক্ষ। ওই স্বার্থান্বেষী মহল করোনা ভাইরাস পরীক্ষা বন্ধ করার জন্য মিথ্যা তথ্য দিয়ে এলাকাবাসীকে সংক্ষুব্ধ করাসহ বিভিন্ন ধরনের অপতৎপরতা চালাতে থাকে। তারা পরীক্ষণ দলের সদস্যদের তাদের আবাসস্থল থেকে উৎখাতের চেষ্টা করে। সকল বাধা উপেক্ষা করে শুধু করোনা ভাইরাসের পরীক্ষা নয়, করোনার জীবন রহস্য উন্মোচন, গতিপথ পরিবর্তনসহ নানা বিষয়ে এ জিনোম সেন্টারে গবেষণা চলমান রয়েছে। গত ৮ মে অধ্যাপক ড. মোঃ আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে যবিপ্রবির ল্যাবে প্রথমবারের মতো করোনার ভারতীয় ধরণ শনাক্ত করা হয়। এ ছাড়া তার নেতৃত্বে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক কম খরচে করোনা ভাইরাস শনাক্তে ‘সাইবারগ্রিন পদ্ধতি’ উদ্ভাবন করে। এ ধরনের গবেষণা অব্যাহত রাখতে প্রয়োজন বর্তমান নেতৃত্বের ধারাবাহিকতা। মানববন্ধন ও সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন যবিপ্রবির ডিন অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গালিব, ড. আব্দুল্লাহ আল মামুন, ড. মো. মেহেদী হাসান, চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. সিরাজুল ইসলাম, ড. মো. জাফিরুল ইসলাম, ড. জাভেদ হোসেন খান, ড. শিরিন নিগার, ড. মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান, ড. মো. হাফিজ উদ্দিন, ড. তানভীর ইসলাম, ড. মোহাম্মদ কামাল হোসেন, ড. হাসান মো. আল-ইমরান, ডা. ফিরোজ কবির, প্রভোস্ট ড. মো. নাজমুল হাসান, ড. সেলিনা আক্তার, সহযোগী অধ্যাপক ড. আশরাফুজ্জামান জাহিদ, সহকারী অধ্যাপক মো. মুনিবুর রহমান, ড. মো. সাখাওয়াত হোসেন, ফাতেমা-তুজ-জোহরা, আব্দুল্লাহ আল মামুন, প্রভাস চন্দ্র রায়, পূজা বৈদ্য, মো. আব্দুস সালামসহ ৫০ জনের অধিক শিক্ষক; কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি ড. মো. আব্দুর রউফ, সাধারণ সম্পাদক এ টি এম কামরুল হাসান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহেদ রেজা, উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) মো. হায়াতুজ্জামান মুকুল, কর্মচারী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রমিজ উদ্দিন, সাবেক সহসভাপতি আরিফুল ইসলাম শাহীন, সাবেক সদস্য আমিনুর রহমানসহ বিশ্ববিদ্যায় শাখা ছাত্রলীগের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির একাংশ একই সময়ে প্রেসক্লাবের সামনে পাল্টা মানববন্ধন করেছে। শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড, আমজাদ হোসেন এসময় মানববন্ধন থেকে উপাচার্যের অনিয়ম, দুর্নীতির তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি তার পুনঃনিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধের দাবি জানিয়েছেন।