মির্জা বদরুজ্জামান টুনু, যশোর
যশোরে চাল, চিনি ও তেলের বাজার উত্যপ্ত। ব্যবসায়ীরা সরকারি ঘোষণাও মানছে না। তারা মানুষকে জিম্মি করে ইচ্ছামত দর হেঁকে মুনাফা লুটে নিচ্ছে। এ কাজে তাদের লাগাম ধরার কেউ নেই। দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দামে বর্তমানে চিনি বিক্রি হচ্ছে। সয়াবিন তেলের দামেও রেকর্ড। যশোরের বাজার ঘুরে দেখা যায়, করোনায় লকডাউনের আগে বাজারে নিত্যপণ্যের যে দাম ছিল, বর্তমান দামে তার বিস্তর ফারাক। হেন কোন জিনিষ নেই, যার দাম বাড়েনি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, কোম্পানির মালিকরা করোনায় তাদের ব্যবসায়িক ক্ষতি পূষিয়ে নিতে সমস্ত পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এ কারণে তাদেরকেও বেশি দামে পণ্য বিক্রি করতে হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বড় বড় কোম্পানির মালিকরা জনগনকে গিনিপিগ হিসেবে ব্যবহার করছে। তাদের অর্থনৈতিক ক্ষতি গরীব মানুষের রক্তে ভেজা শ্রমের টাকায় আদায় করছে। তাদের এ কাজে সাধারণ মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে। তাদের সবকিছু দেখে, শুনে, বুঝে চুপ করে থাকতে হচ্ছে। কোনকিছুই বলার থাকছে না। এখানে যাদের কথা বলার প্রয়োজন বাজারে তাদের কেউ খুজে পাচ্ছে না। সরকারের কোন বিভাগেরই বাজারে নেই কোন পদক্ষেপ। ফলে অনেকেই বর্তমান বাজারদর নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করছে।
# দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দাম চিনির
# সয়াবিন তেলের দামেও রেকর্ড
# মূল্য বাড়িয়ে পণ্যের আকারও ছোট
# শোষণ করা হচ্ছে সাধারণ মানুষকে
এদিকে, ব্যবসায়ীরা শুধুমাত্র দাম বাড়িয়েই ক্ষান্ত হননি, বিভিন্ন পণ্যের আকারও ছোট করে দিয়েছে। যা বাজারে মরার উপরে খাড়ার ঘাঁর মত অবস্থা বিরাজ করছে। বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, চাল, চিনি ও তেলের বাজার ব্যাপক উত্যপ্ত। যার লাগাম ধরার কেউ নেই। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে এসব নিত্যপণ্যের দাম। যদিও চালের বাজার গত দু’মাস যাবৎ একই অবস্থা বিরাজ করছে। বর্তমান ভরা মৌসুমে চালের দাম কমার কথা থাকলেও ব্যবসায়ীরা অনড় হয়ে বসে রয়েছে। তারা কোনভাবেই চালের দাম কমাচ্ছে না। গত মৌসুমে দেশে বিপুল পরিমান ধান-চাল উৎপাদন হলেও এর প্রভাব পড়ছে না বাজারে। জনগনকে অতিরিক্ত দামে চাল কিনে খেতে হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কারসাজি করছে অটো রাইসমিল সিন্ডিকেট বলে অভিযোগ উঠেছে। গত শুক্রবার বাজারে প্রতিকেজি মোটা স্বর্ণা চাল বিক্রি হয়েছে ৪২ থেকে ৪৪ টাকা, বি আর-২৮ প্রতিকেজি ৪৮ থেকে ৪৯ টাকা, কাজললতা ৫০ থেকে ৫২ টাকা, মিনিকেট ৫২ থেকে ৫৪ টাকা ও বাসমতি ৬০ থেকে ৬২ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। একইসাথে তেলের বাজারেও ব্যাপক অস্থিরতা বিরাজ করছে। বর্তমানে রেকর্ড দামে প্রতিকেজি খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে দেড়শ’ টাকা দরে।
এছাড়া সুপার সয়াবিন প্রতিকেজি ১৪৪ থেকে ১৪৫ টাকা, পামওয়েল ১৩৫ থেকে ১৩৮ টাকা ও সরিষার তেল ১৯০ থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। যা এর আগে এসব তেল এই দামে বাজারে কখনো বিক্রি হয়নি। কী কারণে তেলের এ মূল্য বৃদ্ধি সেটা ব্যবসায়ীরা জানাতে পারছে না। তারা বলছেন, বেশি দামে কিনে, তাদের বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। এর বেশি কিছু তারা জানেন না। এদিকে, বাজারে চিনির মূল্য অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমান মূল্য দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। দেড় মাস আগে ৬০ থেকে ৬২ টাকা কেজি দরের চিনি বর্তমানে একলাফে ৮০ থেকে ৮২ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। যা নিয়ে মানুষের মাঝে রীতিমত ক্ষোভ বিরাজ করছে। যদিও গত দশদিন আগে সরকার দেশে প্রথমবারের মত চিনির মূল্য প্রতিকেজি ৭৫ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু বাজারে এ মূল্যের কোন প্রভাব পড়েনি। সরকার নির্ধারিত মূল্যের চাইতে কেজিপ্রতি ৫ থেকে ৭ টাকা বেশিদামে বাজারে চিনি বিক্রি করছে ব্যবসায়ীরা। যা দেশের বাজারে রেকর্ড মূল্য। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে সাধারণ মানুষ। তারা বলেছেন, হঠাৎ করে কী কারণে দেশে চিনির মূল্য বৃদ্ধি হলো সেটা কেউ জানাতে পারছে না। অথচ দু’বছর আগেও দেশে ৫০ টাকা কেজি দরে চিনি মাইকিং করে বিক্রি হয়েছে।
এ ব্যাপারে বড়বাজারের হাটচান্নির চাল ব্যবসায়ী উত্তম কুমার সাহা বলেন, অটো রাইসমিল মালিকরা চালের দাম নির্ধারণ করে তাদের কাছে বিক্রি করে থাকে। বাজারে এনে তারা নির্ধারিত দামেই চাল বিক্রি করে থাকেন। এ নিয়ে তাদের করার কিছুই থাকে না। এ ব্যাপারে যশোরের বাজার কর্মকর্তা সুজাত হোসেন খান বলেন, বিশ্ব বাজারে তেল, চিনিসহ অন্যান্য জিনিষপত্রের দাম বেড়েছে। এছাড়া, তেল ও চিনির ওপর সরকারের শুল্ক রয়েছে ২৫ থেকে ২৭ শতাংশ। এ কারণে সারাদেশেই এ দুটি পণ্য বেশিদামে বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে তারা ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠিয়েছেন।