মোঃ ইউসুফ মিয়া, রাজবাড়ী
রাজবাড়ী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ বাহাউদ্দিন শেখের বিরুদ্ধে পুষ্টি বাগান ও তেল জাতীয় ফসল সহ বিভিন্ন প্রদর্শনী খামারের নামে সরকারী বরাদ্দকৃত সার, বীজ, কীটনাশক সহ অন্যান্য উপকরণ আতœসাতের বিভাগীয় তদন্তে এসব অভিযোগের স্বাক্ষরিত পাওয়া পত্রে গুরুত্বপূর্ণ সত্যতা মিলেছে। অপরদিকে আরেক কৃষি কর্মকর্তা মতিয়ারের বিরুদ্ধে ডিলারদের ঘুষ বাণিজ্য ও ক্ষমতার দাপটে সার কীটনাশক ডিলারগণ নিরুপায়। জানাগেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে রাজবাড়ী সদর উপজেলায় ১৪টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার মধ্যে বিভিন্ন প্রদর্শনী খামারের কয়েক হাজার প্রকল্প রয়েছে। এর মধ্যে তেল জাতীয় ফসলের উদপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের আওতায় ১২৮ টি এবং বসতবাড়ীর আঙ্গিনায় পারিবারিক পুষ্টিবাগান প্রকল্পের আওতায় সহস্রাধিক প্রদর্শনী খামার স্থাপনের সরকারীভাবে বরাদ্দ দেওয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে, সাবেক এই রাজবাড়ী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ বাহাউদ্দিন সেখ নিজের ইচ্ছামত মুখ দেখে নিজের পছন্দের খামারীদের মধ্যে এসব বিতরণ করেন।
রাজবাড়ী সদর উপজেলায় সরিষা-বোরো-রোপা আমন ৪০ টি, সরিষা-বোরো পতিত ২০ টি, সরিষা-পাট-রোপা আমন ৬৫ টি, সরিষা-বোরো- রোপা আমন ব্লক প্রদর্শনী ১ টি, সরিষা-বোরো পতিত ব্লক প্রদর্শনী ২ টি এবছর বরাদ্দ হয়। সরিষা-বোরো-রোপা আমন (৩ একর) প্রতিটি ব্লক প্রদর্শনীর জন্য ইউরিয়া ২৫৮ কেজি, ডিএপি ২১০ কেজি,এমওপি ২১০ কেজি, বোরণ ৯ কেজি, জিপসাম ২৪০ কেজি, মেগনেসিয়াম সালফেট ৬০ কেজি, দস্তা ১২ কেজি এবং বালাইনাশক বাবদ ৩ হাজার টাকা বরাদ্দ রয়েছে। অথচ কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের উচ্চ পর্যায়ের পরিদর্শনে এসব প্রদর্শনী খামারে বিতরণের ক্ষেত্রে গুরুতর অনিয়ম লক্ষ্য করা গেছে। বিশ্বস্তসূত্রে জানাগেছে, গত ৯ নভেম্বর ওই প্রকল্পের কনসালটেন্ট মোঃ নজরুল ইসলাম রাজবাড়ী সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় স্থাপিত প্রদর্শনী খামার পরিদর্শন করেন।
এসময় রাজবাড়ী সদর উপজেলার রামকান্তপুর কৃষক গ্রুপের চাষী মোঃ ইউসুফ আলীর বাড়ীতে পরিদর্শনকালে জানা যায়, প্রকল্পের প্রকৃত বরাদ্দ অনুসরণ না করে কৃষি কর্মকর্তা ইউরিয়া ২০০ কেজি, ডিএপি ১৫০ কেজি, এমওপি ১৫০ কেজি, জিপসাম ৪০ কেজি, মেগনেসিয়াম সালফেট ১২ কেজি, দস্তা ৬ কেজি এবং বালাইনাশক বাবদ ৪শ টাকা প্রদান করেন। একইভাবে রামকান্তপুরের বেথুলিয়া ডাঙ্গীপাড়ার চাষী মোঃ জাহাঙ্গীর সেখের প্রদর্শনীতে এবং মাটিপাড়ার ইসহাক সরদারের প্রদর্শনীতে বরাদ্দের তুলনায় কম সার ও বালাইনাশক বিতরণ করা হয়েছে। এসব বিষয়ে উর্দ্ধতন কর্মকর্তা উপ-পরিচালকের কার্যালয়ের জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মোঃ মনিরুজ্জামান, তৎকালীন সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ বাহাউদ্দিন সেখ, কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মোঃ তোফাজ্জল হোসেন এবং উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সামসিয়া মুসতারী এবিষয়ে সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেননি। দায়িত্বশীল কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রদর্শনী খামারগুলোতে বরাদ্দ অনুযায়ী প্রয়োজন মাফিক সার ও কীটনাশক না দেওয়ায় সরকারের মূল উদ্দেশ্য যেমন ব্যাহত হচ্ছে। তেমনি উৎপাদন চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বিষয়টি স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছেন।
এবিষয়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সামসিয়া মুসতারীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, উর্দ্ধতন কর্মকতাগণ পরিদর্শনকালে প্রদর্শনী খামারে চাষীদের মধ্যে বিতরণকৃত সারের কিছুটা কমতি ছিল। তিনি আরও বলেন, আমি শুধু সারের স্লিপ দিয়েছি। সার উপজেলা কৃষি অফিস থেকে সরবরাহ করা হয়েছে। এর বাইরে আমার কিছু জানা নেই। এছাড়া বসতবাড়ীর আঙ্গিনায় পারিবারিক পুষ্টি বাগান প্রকল্পের প্রদর্শনীতে আরও চমকপ্রদ তথ্যের সন্ধান মিলেছে। সরকারী বরাদ্দ লোপাট করে কোন প্রদর্শনী খামারই স্থাপন করা হয়নি। অভিযোগ পাওয়া গেছে, প্রকল্পের কনসালটেন্ট মোঃ নজরুল ইসলাম সরেজমিন পরিদর্শনকালে একজন চাষীর নিজ উদ্যোগে স্থাপনকৃত একটি প্রদর্শনী খামারে নিয়ে যাওয়া হয়। এ ঘটনা জানাজানি হলে পুরো কৃষি বিভাগ জুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এবিষয়ে রাজবাড়ী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এস.এম. সহীদ- নূর- আকবর এসব অভিযোগের বিষয়ে সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এ ধরণের প্রক্সি দেওয়ার বিষয়টি কোনভাবেই কাম্য নয়।
তিনি বলেন,মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা দিয়েছেন দেশের কোথাও এক ইঞ্চি জমি যেন পতিত না থাকে এই নির্দেশনা পালনে গাফলতি দেশের কৃষি উৎপাদনে চরম ক্ষতি হয়েছে। এদিকে রাজবাড়ীর সাবেক কৃষি কর্মকর্তা মোঃ বাহাউদ্দিন সেখের নানাবিধ অনিয়ম ও দুর্ণীতির পরও তাকে রক্ষার জন্য বর্তমানে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামার বাড়ীতে সিলেট অঞ্চলের প্রকল্প পরিচালক হিসেবে কর্মরত রাজবাড়ী সদর উপজেলার সাবেক কৃষি কর্মকর্তা মোঃ রকিব উদ্দিন জোর তদ্বির চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অপরদিকে রাজবাড়ী সদর উপজেলা উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষন কর্মকর্তা মোঃ মতিয়ার রহমানের বিরুদ্ধে ঘুষ বানিজ্য ও ক্ষমতার দাপট দেখানোর অভিযোগে রাজবাড়ী কৃষি অধিদপ্তর সহ সাতটি দপ্তরে অভিযোগের পত্র পাঠানো হয়েছে। কৃষি কর্মকর্তা মতিয়ারের বিরুদ্ধে ডিলারদের ঘুষ বাণিজ্য ও ক্ষমতার দাপটে সার কীটনাশক ডিলারগণ নিরুপায়।
রাজবাড়ীর সদর উপজেলার বিভিন্ন সার ও কীটনাশক ডিলারগনকে অসদুপায়ে নতুন লইসেন্স নিবন্ধন ও নবায়ন করতে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগে কীটনাশক বিক্রির মূসক সহ হোলসেল নতুন লাইসেন্স নিবন্ধন করতে যেখানে ১হাজার টাকা এবং নবায়ন করতে মূসক সহ থেকে ৫শত টাকা, কিন্ত এই কৃষি কর্মকর্তা মতিয়ার প্রতিটি লাইসেন্স বাবদ ৪ হাজার থেকে শুরু করপ ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ নিজের পকেটে। ডিলারগণ এ বিষয়ে অভিযোগ করলেও কোন প্রকার সদর কৃষি অফিসের সম্প্রসারন কর্মকর্তাগনেরা কোন পদক্ষেপ গ্রহন করে নাই। এই কর্মকর্তা প্রতি ডিলারের কাছ থেকে মাসিক হিসেবেও অর্থ মাসোহারা গ্রহন করেন। সার ও কীটনাশক বিক্রির ফি বাবদও নগদ ৩ হাজার টাকা করপ নেয়। সারের ডিলারদের মজুদ ও বিক্রয় অনুমতি কৃষি অফিসার বা সম্প্রসারন অফিসার দেয়ার কথা থাকলেও সেখানে নিয়ম বহির্ভুত ভাবে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে নিজেই বে-আইনী ভাবে