রাজশাহী ব্যুরো
অবৈধ মজুতের মাধ্যমে বাজারে কৃত্রিম সংকট যাতে সৃষ্টি করতে না পারে, সে জন্য অভিযানের ঘোষণা দিয়েছে রাজশাহী জেলা প্রশাসন। এ ছাড়া রাজশাহীতে বিভিন্ন কোম্পানির নামে চাল মোড়কজাত করার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেলে রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ‘চালের উৎপাদন-বিপণন জোরদারকরণথ শীর্ষক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে এসব বিষয় আলোচিত হয়। রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আবদুল জলিলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় চালকল মালিক, ব্যবসায়ী, জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। সভায় প্রথমে চালকলের মালিকদের বক্তব্য শোনা হয়। তাঁরা ব্যাখ্যা দেন কেন এবং কীভাবে চালের দাম বাড়ছে। ব্যবসায়ীরা বলেন, চিকন চালের দাম বাড়ার কারণে মোটা চালের ওপরে চাপ পড়ছে। এ জন্য মোটা চালেরও দাম বাড়ছে। এ ছাড়া ধান ও শ্রমিকের দাম বেশির প্রভাবও চালের বাজারের ওপর পড়ছে বলে ব্যবসায়ীরা জানান। সভায় রাজশাহীর চালকল মালিক ও চাল ব্যবসায়ী জসীম উদ্দিন বলেন, রাজশাহীতে মোটা চালের দাম বাড়তি দেখে তিনি আজ পার্শ^বর্তী চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ৪৭ টাকা কেজিতে মোটা চাল কিনেছেন। ব্যবসায়ী হিসেবে তাঁর একটা কমিশন আছে। একটা পরিবহন খরচ আছে। এগুলো যোগ করেই তাকে ৪৮ টাকা কেজি হিসেবে চালটা পাইকারি বিক্রি করতে হবে। খুচরা দোকানে বিক্রি হবে ৫০ টাকা কেজিতে। তিনি আরও বলেন, রাজশাহীর অনেক ব্যবসায়ীই নওগাঁর সাবাইহাট ও দেলুয়াবাড়ী বাজার থেকে ধান কেনেন। এই বাজারে এখন ধানের দাম ১ হাজার ৫১০ টাকা মণ। এই দামের চাল দিয়ে ৮৪ কেজির এক বস্তা চাল তৈরি করতে তাঁদের খরচ পড়ছে ৫ হাজার থেকে ৫ হাজার ১০০ টাকা। প্রতি কেজিতে উৎপাদন খরচ পড়ছে ৫৮-৫৯ টাকা। এই চাল থেকে মরা চাল, খুদ বাছাই করলে চালের দাম প্রতি কেজি ৬১ টাকা পড়ে যাচ্ছে। রাজশাহী জেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, কুচ্ছি া ও চুয়াডাঙ্গার ব্যবসায়ীরা চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করেন। রাজশাহীর মিলমালিকেরা গরিব। তাঁরা দেউলিয়া হওয়ার পথে। ছয় বছর আগে জেলায় ৩৪০টি চালকল ছিল। এখন এ সংখ্যা ২০০-এর নিচে নেমে এসেছে। তিনি বলেন, বিশ্বের অন্যতম চাল উৎপাদনকারী দেশ ভিয়েতনামেই মোটা চালের কেজি ৫০ টাকার নিচে নয়। অথচ কালোবাজারির বদনাম হচ্ছে চালকলের মালিকদের। শাহ মখদুম অটো রাইস মিলের প্রতিনিধি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ১০০ কেজি ধান মাড়াই করলে ৫২ থেকে ৫৮ কেজি চাল পাওয়া যায়। অটো রাইস মিলে ভাঙানোর জন্য এক মণ ধান কিনে পরিষ্কার করলে তা থেকে তিন কেজি চলে যায়। চাল থেকে পাথর, খুদ, ছোট চাল ইত্যাদি সাত-আট ধরনের জিনিস বেছে বাদ দিতে হয়। এতে করে এক মণ ধান থেকে কোনোভাবেই ২২ কেজির বেশি চাল হয় না। বাজারে ৮০০-৯০০ টাকা শ্রমিকের দাম। এসব মিটিয়ে কৃষককেও ধানটা লাভেই তো বিক্রি করতে হবে। তিনি বলেন, কৃষকেরা এই ধান বেচেই সার-কীটনাশক থেকে শুরু করে সবকিছুর খরচ মেটান। অনুষ্ঠানে রাজশাহীর পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেন বলেন, অভিযান চালিয়ে কোনো চালকলমালিকের গুদামে যদি অবৈধ চালের মজুত পাওয়া যায়, তাহলে সেই চাল বাজারে সরকারি ৪০ টাকা কেজি হিসাবে বিক্রি করে দেওয়া হবে। এর আগে তেল মজুতদাররাও এ রকম চেষ্টা করেছিলেন। তাঁরা লাখ লাখ লিটার তেল জব্দ করেছেন। সেগুলো টিসিবির দরে বিক্রি করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এখন তেলের বাজারটা স্থিতিশীল হয়েছে। রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল সভার সিদ্ধান্ত ঘোষণার সময় বলেন, ‘চালের দাম নিয়ে আমরা চিন্তিত নই। কারণ, বাজারে চাহিদা ও জোগানের ভিত্তিতে চালের দাম নির্ধারিত হয়। তবে কেউ যাতে গুদামে অযাচিত মজুত করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করতে না পারে, সে ব্যাপারেই আমরা ব্যবস্থা নেব। তিনি বলেন, রাজশাহীতে চাহিদার চেয়ে ২ লাখ ৭৩ হাজার মেট্রিক টন বেশি ধান উৎপাদিত হয়েছে। ১৪৮টি চালকলের সঙ্গে সরকারের চুক্তি হয়েছে। তারা আগামী ৩০ জুনের মধ্যে ১০ হাজার মেট্রিক টন চাল সরবরাহ করবে। কেউ চাল সরবরাহ করতে ব্যর্থ হলে এবার আর কালোতালিকা করা হবে না। ভ্রাম্যমাণ আদালত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আগামীকালই অভিযান শুরু হবে।