রাজাপুর (ঝালকাঠি) প্রতিনিধিঃ
ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলা পরিষদের সরকারি জমিতে রোপণ করা অন্তত পাঁচটি মূল্যবান গাছ কেটে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা পরিচালন ও উন্নয়ন প্রকল্প (ইউজিডিপি)-এর কর্মকর্তা ও ডেভেলপমেন্ট ফেসিলিটেটর (ইউডিএফ) মো. ইমরান আলী’র বিরুদ্ধে। বিষয়টি ধীরে ধীরে প্রকাশ্যে আসতে শুরু করলেও, প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো কোনো দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। যা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
স্থানীয় সূত্র ও একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার পেছনের খালের পাড়ের রাস্তার পাশে সরকারি জমিতে রোপণকৃত চারটি মেহগনি ও একটি রেইন্ট্রি গাছ কেটে ফেলে রাখা হয়। ২০২৪ সালের জুলাই মাসে দেশজুড়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলায় প্রশাসন নানা চাপের মুখে থাকার সুযোগে গাছগুলো স্থানীয় এক ভ্যান চালকের মাধ্যমে উপজেলার শহরের একটি স্ব-মিলে নিয়ে রেখে দেয় ইমরান আলী। ইমরান আলী আওয়ামী পন্থী হওয়ায় ৫ আগস্টের সময় পরিস্থিতি গরম হলে তিনি কর্মস্থল ছেড়ে পালিয়ে যান। পরে দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় তিনি পুনরায় কর্মস্থলে ফিরে আসেন। অভিযোগ রয়েছে, তখনই গাছগুলো স্ব-মিল থেকে কেটে কিছু কাঠ ব্যক্তিগত ফার্নিচার তৈরির জন্য স্থানীয় একটি দোকানে নিয়ে আসেন, কিছু কাঠ পার্শ্ববর্তী কাউখালী উপজেলায় নিয়ে ভ্যান চালক’কে দিয়ে কিছু কাঠ বিক্রি করান ইমরান আলী এবং কিছু কাঠ স্থানীয় ফার্নিচারের দোকানেই বিক্রি করে দেন তিনি। সেই সময়ে রাজাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন ফারহানা ইয়াসমিন।
স্থানীয় স্ব-মিল মালিক মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ৩৫ “কিউবিক ফিট” মেহগনি ও রেইন্ট্রি গাছ আমার স্ব-মিলে নিয়ে আসে স্থানীয় এক ভ্যান চালক। আমার স্ব-মিলে প্রায় দুই-তিন মাস ফেলে রেখে দেন। পরবর্তীতে জানতে পারি এগুলো সরকারি গাছ এবং আমাদের উপজেলা পরিষদের। কিছুদিন পরে স্থানীয় সরকার বিভাগের কর্মকর্তা ইমরান আলী এসে বলেন, অফিসের ফার্নিচার বানাতে হবে, দ্রæত এই গাছগুলো কেটে দিতে। আমরা তো সরকারি অফিসের জন্যই ভাবছিলাম। আমরা তো জানতাম না তিনি ব্যক্তিগত কাজে নেবেন। পরে শুনি উনি নিজের জন্যই গাছগুলো ব্যবহার করছেন।
স্থানীয় ফার্নিচার দোকানদারও একই কথা বলছেন। তার দাবি, “উপজেলার কর্মকর্তা ইমরান আলী তার বাড়ির জন্য ফার্নিচার বানাতে আমার দোকানে কিছু কাঠ এনেছিলেন। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে ফার্নিচার না বানিয়ে তিনি কিছু কাঠ আমার কাছেই বিক্রি করেন, আর কিছু কাঠ কাউখালী নিয়ে গিয়ে বিক্রি করা সহ বিভিন্ন যায়গায় সড়িয়ে করেন।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাহুল চন্দ অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন বলেও স্থানীয়রা জানান, তবে এ পর্যন্ত কোনো ধরনের প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ আরও ঘনীভূত হয়েছে।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত ইউডিএফ কর্মকর্তা মো. ইমরান আলী সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো মিথ্যা। আমি কোনো গাছ কাটি নাই বা নেইও নি।
এ বিষয়ে জানতে রাজাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাহুল চন্দের অফিসে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে তার ব্যবহৃত মুঠোফোনে গনমাধ্যম কর্মীরা দুইদিনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।এমনকি তার হোয়াটসঅ্যাপে ক্ষুদে বার্তা পাঠালে মেসেজটি দেখেও দুই দিন পর্যন্ত কোনো উত্তর দেয়নি। ফলে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
স্থানীয়দের দাবি দ্রæত এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত, দোষীদের শাস্তি, এবং গাছ বিক্রির অর্থ সরকারের রাজস্ব তহবিলে ফেরতের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসনের হস্পক্ষেপ কামনা করেছেন।