শওকত হোসেন, ধামরাই, ঢাকা
ঢাকার ধামরাইয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এক স্কুল থেকে অন্য স্কুলে বদলির বিষয়ে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে ঘুষ গ্রহন ও টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তাজমুন্নাহারের বিরুদ্ধে। সরজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, তাজমুন্নাহার ধামরাই উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার দায়িত্বে বসার পর থেকেই বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষকদের বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করছে, এক স্কুল থেকে অন্য স্কুলে বদলিতে ঘুষ, বই বিতরণে ঘুষ,ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষা ফিতে অতিরিক্ত টাকা আাদায় সহ নানান অভিযোগ, এসব বিষয়ে তার কথা না শুনলেই শিক্ষকদের হয়রানি শুরু করেন। জানা যায় বেশকিছু শিক্ষকের কাছ থেকে বদলির বিষয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পরও তাদের পছন্দসই স্কুলে বদলি করতে পারেনি,পরে কিছু লোকে টাকা ফেরত দিলেও অনেকের টাকা এখনও দেই দিচ্ছি বলে ঘুরাচ্ছে। ফেরত চাওয়ায় তাদের নানাভাবে হুমকি দিয়ে আসছে।
তবে তিনি ঘুষ নেওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন। ভুক্তভোগী ভাবনহাটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা ফরিদা ইয়াসমিন বলেন আমি হুজুরিটোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলির জন্য আবেদন করেছি অনলাইনে, এর সাথে তাজমুন্নাহার স্যার কে ২০২০ সালে ৯০ হাজার টাকা ঘুষও দিয়েছি,অথচ আমার আবেদন অগ্রগামী করেননি, এরপরও আমাকে ওই বিদ্যালয়ে বদলি করেননি। ফলে সেই টাকা কয়েক কিস্তিতে ফেরত নিয়েছেন। এছাড়াও বাইশাকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা মনোয়ারা আক্তার ও গোয়ালদি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক জাহাঙ্গীর হোসেনকে পারস্পরিক বদলি করে দেওয়ার শর্তে তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা করে মোট ৪০ হাজার টাকা ঘুষ গ্রহন করেন তিনি। অথচ তাদের বদলি করেননি এমন কি তাদের টাকাও ফেরত দেননি। চৌটাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলির জন্য আবেদন করেন বৈন্যা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা শামীমা নাসরীন, সাইদপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা মৌসুমী জাহান, খরারচড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা প্রীতি রাণী দেবনাথ, ফরিঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মাসুদুর রহমান। এরমধ্যে শামীমা নাসরিনের স্থায়ী ঠিকানা থেকে তার পূর্বের কর্মস্থল বৈন্যা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দূরত্ব প্রায় দুই কিলোমিটার। অথচ তিনি তথ্য গোপন করে বদলির কারণ ও প্রমাণকের ঘরে লিখেছেন বাসস্থান থেকে দুরত্ব ৩০ কিলোমিটার, এর পিছনেও রয়েছে ঘুষ বানিজ্য।
এছাড়া তিনি চাকরিতে যোগদান করেছেন ১৯/৯/২০১০ সনে। তাঁকে বদলির জন্য সুপারিশ করে অগ্রগ্রামী করেছেন প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তাজমুন্নাহার এবং তাকে বদলিও করা হয়েছে তাঁর কাঙ্খিত চৌটাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। শামীমা নাসরিন থাকেন সাভারে । সাভার থেকে চৌটাইলের দূরত্ব প্রায় পাঁচ কিলোমিটার। অথচ শামীমা নাসরিনের চেয়ে জ্যেষ্ঠ শিক্ষক মাসুদুর রহমানসহ একাধিক শিক্ষক রয়েছে তাঁদের বদলি করা হয়নি। এক্ষেত্রে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ‘সমন্বিত অনলাইন বদলি নির্দেশিকা- ২০২২’ এর ‘বদলির সাধারন শর্তাবলী’ মানা কিংবা অনুসরণ করা হয়নি। তবে অভিযোগ উঠেছে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তাজমুন্নাহার শামীমা নাসরিনের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে বদলির আবেদনে সুপারিশ করেন। এছাড়া জলসিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বোরহান উদ্দিন ও মতিয়ার রহমানসহ একাধিক সহকারী শিক্ষক আবেদন করেছিলেন হুজুরীটোলসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলির জন্য। এঁদের প্রত্যেকেই চাকরিতে যোগদান ২০০৬ সালে। কিন্তু ওই বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়েছে ২০১৬ সালে যোগদানকৃত শিক্ষক সুমি আক্তারকে। ফরিদা ইয়াসমিন, মাসুদুর রহমানসহ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক বলেন, শিক্ষাকর্মকর্তার দুর্নীতি ও অনিয়মের শেষ নেই। টাকা ছাড়া কোন কাজই করতে চান না তিনি। ঘুষ বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির কথা অস্বীকার করে শিক্ষা কর্মকর্তা তাজমুন্নাহার বলেন, আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ সত্য নয়। আমার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করা হচ্ছে। আমি কোন অনিয়মের সাথে জড়িত নই। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল আজিজ বলেন, শিক্ষা কর্মকর্তা তাজমুন্নাহারের বিরুদ্ধে কোন অনিয়ম দুর্নীতি পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।