শ্রীপুর, গাজীপুর প্রতিনিধি:
গাজীপুরের শ্রীপুরে সেনা সদস্যর বিরুদ্ধে মুদি ব্যবসায়ী জহিরুল ইসলামকে (৪৮) তুলে নিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। সে উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের আবদার গ্রামের বাসিন্দা। এ ঘটনায় অপহৃতার স্ত্রী মোছা: আয়েশা বাদী হয়ে শ্রীপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে। শুক্রবার (৬ মে) দিবাগত রাত সাড়ে ৮টায় উপজেলার আবদার গ্রামের স্থানীয় দাদা গ্রæপ কারখানার সামনে থেকে তাকে তুলে নেয় অভিযুক্তরা। পরে শ্রীপুর থানা পুলিশের হস্তক্ষেপে ১৫ ঘন্টা পর শনিবার (৭ মে) বেলা ১১টায় জহিরুলকে আহত অবস্থায় থানায় নিয়ে আসে অভিযুক্ত আশরাফুল ইসলাম। অভিযুক্তরা হলো পাশের কাওরাইদ ইউনিয়নের ধামলই গ্রামের মফিজ উদ্দিনের ছেলে সেনা সদস্য আশরাফুল ইসলাম, তেলিহাটি গ্রামের মো: বাচ্চু, জৈনা বাজার এলাকার আলম এবং আবদার গ্রামের হামেদ আলীর ছেলে নজরুল ইসলামসহ তাদের ৩/৪ জন সহযোগী। আয়েশা আক্তার জানান, রাত ৮টায় আমার স্বামী জহিরুল ইসলামকে অভিযুক্তরা একটি কালো রঙ্গের মাইক্রোতে (হায়েচ গাড়ি) জোরর্পূবক তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় দোকানদাররা দেখে ফেলে। খবর পেয়ে আমি বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করে জানতে পারি কাওরাইদ ইউনিয়নের ধামলই গ্রামের মফিজ উদ্দিনের ছেলে সেনা সদস্য আশরাফুল ইসলাম ও তার সহযোগীরা তাকে তুলে নিয়ে যায়।
আমার স্বামীর মোবাইলে একাধিকবার ফোন দিয়ে নাম্বার বন্ধ পাই। পরে প্রধান অভিযুক্ত আশরাফুল রাতে আমাকে ফোন দিয়ে জানায় সে ও তার সহযোগীরা আমার স্বামীকে টাঙ্গাইল জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) র্কাযালয়ে নিয়ে গেছে। সেখানে স্বামী জহিরুল ইসলামকে মাদক দ্রব্য আইনে মামলা দিবে। তাৎক্ষনিক আমি বিষয়টি শ্রীপুর থানায় অবহিত করি। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বিস্তারিত জানার পর প্রধান অভিযুক্ত আশরাফুল ইসলামের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে সে আমার স্বামীকে তুলে নিয়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করে। এসময় তারা আমার স্বামীকে নির্যাতন করে শরীরে বিভিন্ন স্থানে গুরুতর জখম করে। পরে শ্রীপুর থানা পুলিশের হস্তক্ষেপে ১৫ ঘন্টা পর শনিবার (৭ মে) বেলা ১১টায় স্বামীকে আহত অবস্থায় থানায় সোপর্দ করে।
স্বমীকে চিকিৎসার জন্য বললে অভিযুক্ত আশরাফুল ও তার সহযোগীরা বাধা দেয়। পরে থানা পুলিশের অনুমতি নিয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দিচ্ছি। অপহৃত ব্যবসায়ী জহিরুল ইসলাম জানান, অভিযুক্ত আশরাফুল ও তার সহযোগীরা আমাকে বাসার সামনে থেকে একটি কালো রঙ্গের মাইক্রোতে (হায়েচ গাড়ি) তুলে হাত-পা বেঁধে পিটিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম করে। এক পর্যায়ে তারা একাধিকবার আমার কাছ থেকে খালি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয়ার চেষ্টা করে। আমার মুখের ভিতরে লাঠি ঢুকিয়ে সামনের দুটি দাঁত ও ডান হাতের আঙ্গুল ভেঙ্গে ফেলে। আমি বর্তমানে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছি। অযিুক্ত সেনা সদস্য ঈদের ছুটিতে বাড়ীতে এসে তাকে তুলে নিয়ে এ ঘটনা ঘটায়। অভিযুক্ত সেনা সদস্য আশরাফুল ইসলাম জানান, তিনি ১৭ ইসিবি মাটিকাটা কালা পানি ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে কর্মরত রয়েছেন। গত প্রায় আড়াই বছর পূর্বে জহিরুলের কাছ থেকে সাড়ে ৩ শতাংশ জমি বায়না করলেও জহিরুল ইসলাম আমাকে জমি রেজিষ্ট্রি করে দেয়নি।
আমি নিরুপায় হয়ে আমার টাকা উদ্ধার করার জন্য তাকে ভয় দেখানোর জন্য এ ঘটনা ঘটিয়েছি। শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান ব্যবসায়ীকে তুলে নেয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, খবর পেয়ে তাৎক্ষনিক অপহরণকারীর মোবাইল নাম্বারে ফোন করলে সে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে। পরে শনিবার (৭ মে) বেলা ১১ টায় অভিযুক্ত আশরাফুল ইসলাম নিজে থানায় উপস্থিত হয়ে ব্যবসায়ী জহিরুল ইসলামকে তার স্ত্রীর কাছে বুঝিয়ে দেয়। তবে জমি সংক্রান্তের বিষয়ে ভিকটিমের কাছে অভিযুক্ত আশরাফুল ইসলামের টাকা-পয়সা নিয়ে লেনদেন রয়েছে। উভয় পক্ষকে বিষয়টি স্থানীয়ভাবে বসে মিমাংসার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তবে তিনি ভিকটিমের স্ত্রীর কাছ থেকে লিখিত কোনো অভিযোগ পাননি বলে জানান।