শ্রীপুর, গাজীপুর প্রতিনিধি
গাজীপুরের শ্রীপুর থানাকে টাউট, বাটপার ও দালালমুক্ত ঘোষণা করে সাইনবোর্ড সাঁটিয়েছে পুলিশ। শ্রীপুর মডেল থানার পক্ষ থেকে বুধবার (১৭ মে) এ সাইনবোর্ডটি সাঁটানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়ররা। থানা এবং স্থানীয় বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে, কিছু কিছু ব্যাক্তি থানার দালালি করে আসছিল। তাদের মধ্যে মুখোশপড়া সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার গুটি কয়েক মানুষও রয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে থানা পুলিশের বাধা না দেওয়া বা সোর্সের নামে সহযোগিতা করায় দালাল শ্রেণীর লোকজনের সংখ্যাও সময়ভেদে কমবেশি হয়। ফলে সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকারও হয়। ইতোপূর্বে পুলিশের ওপর আক্রমণ ও হয়রানির ঘটনাও ঘটেছে। টাউট, বাটপার ও দালালমুক্ত করার ঘটনা পুরনো। এ উদ্যোগ নতুন করে শ্রীপুরবাসীর মনে আশার সঞ্চার ঘটিয়েছে বলে মন্তব্য অনেকের।
তবে কাজে প্রমাণ দেখতে চান বলেও মন্তব্য করেন অনেকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে সাইনবোর্ডের বিষয়টি ইতোমধ্যে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। শ্রীপুরের তেলিহাটী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলী মনসুর মানিক বলেন, উদ্যোগটি ভাল। পুলিশ আন্তরিক হলে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, মাদকসেবী নির্মুল করতে পারবে। এটি বাস্তবায়ন করতে হলে কাজে তার প্রতিফলন দেখাতে হবে। এরকম পরিবেশ সৃষ্টি হলে সমাজের সহজ, সরল, অসহায় মানুষ হয়রানি থেকে রক্ষা পাবে এবং ন্যায় বিচার পাবে। যারা টাউট-বাটপার-দালাল এটা চিহ্নিত করার দায়িত্বও পুলিশের। জাতীয় নদী রক্ষা কমিটির সদস্য ও শ্রীপুর থানার বাসিন্দা খোরশেদ আলম বলেন, যে সাইনবোর্ডটি পুলিশ ঝুলিয়েছে সে অনুযায়ী কাজ করে পুলিশকে তার প্রমাণ রাখতে হবে। এটিও তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।
যেসব সহজ, সরল মানুষ রয়েছে, যারা থানা পর্যন্ত যেতে পারে না বা যেতে সাহস পায়না তাদেরকেও পুলিশের দোরগোড়ায় যাওয়ার জন্য পুলিশকেই ভ‚মিকা রাখতে হবে। সবার জন্য ওসি’র দরজা খোলা এমন ঘোষণাও সকল স্তরের মানুষকে জানাতে হবে। শুধু ওসি নয়, উপ-পরিদর্শক এবং সহকারী উপ-পরিদর্শকদের (এসআই ও এএসআই) ক্ষেত্রে অনুরূপ ব্যবস্থা থাকতে হবে। তবেই লক্ষ্যে উপনীত হওয়া সম্ভব। বরমী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন বলেন, এতে বিভিন্ন ইউনিয়নের মানুষ উপকৃত হবে। হয়রানির শিকার থেকে রক্ষা পাবে অনেক অসহায় নির্যাতিত মানুষ। উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে কাওরাইদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আব্দুল আজিজ বলেন, উদ্যোগটা ভাল, তবে কাজে প্রমাণ দিতে হবে। শ্রীপুর পৌরসভার কেওয়া পূর্বখন্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহবুবুর রহমান বলেন, যেভাবে পুলিশ বিষয়টি নিয়ে প্রচার দিয়েছে সেভাবে কাজ করতে হবে। তাহলে মানুষ উপকৃত হবে। অ্যাডভোকেট ফরিদ হোসেন আকন্দ বলেন, নতুন ওসি হিসেবে যোগদানের পর কয়েকটি ঘটনা প্রত্যক্ষ করে কিছু নমুনা পাওয়া গেছে। ওসি ইচ্ছা করলেই তার পুলিশ সদস্যদেরকে নিয়ে মানুষকে উন্নত সেবা দিতে পারবেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাইনবোর্ড বিষয়ের প্রেক্ষিতে অনেকে মন্তব্য করেছেন চাঁদাবাজ, ঘুষমুক্ত ঘোষণাটা থাকলে ভালো হতো। তবে কাজে প্রমাণ চেয়েছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মন্তব্যকারীরাও। মাওনা চৌরাস্তা বণিক সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট আশরাফুল ইসলাম রতন বলেন, একজন ভালো অফিসার পারে না এরকম কোনো কাজ নেই। তবে ওই অফিসারের অব্যশ্যই সদিচ্ছা থাকতে হবে। যদি ঘোষনা অনুযায়ী উনি এ সেবা শ্রীপুরবাসীকে দিতে পারে তাহলে ভালো। আমরা আশা করি এ ঘোষনার বাস্তবায়র হোক এবং ব্যাবসায়ীদের পক্ষ থেকে এ ঘোষনা বাস্তবায়নে শতভাগ সহযোগীতা থাকবে। শ্রীপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট কামাল ফকির বলেন, একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আমি অবশ্যই চাই শ্রীপুর মডেল থানা টাউট, বাটপার ও দালাল মুক্ত হোক। অতীতে শ্রীপুর থানা কখনো এসব মুক্ত ছিল না, এটা যেন বলার জন্য বলা না হয়। নি:সন্দেহে এটি উনার ভালো উদ্যোগ। আমরা সচেতন মহল থানা কর্মকর্তার এ ঘোষনার বাস্তবায়না দেখতে চাই। সচেতন নাগরিক হিসেবে উনার এ ঘোষনায় শতভাগ সহযোগীতা থাকবে। শ্রীপুরের মাওনা পিয়ার আলী কলেজের বাংলা বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক আহাম্মাদুল কবির বলেন, থানায় আলাদাভাবে এরকম ঘোষনা দেওয়ার কিছু নাই। থানা টাউট, দালাল ও বাটপার মুক্ত থাকবে এটাই স্বাভাবিক। আমার মনে হয় জনগনকে এটা নিশ্চিত করতে চাচ্ছে তারা (পুলিশ) আরো বেশি দায়িত্বশীল হতে। পুলিশ জনগনের বন্ধু হবে এটা যেন তাদের আচরনে আমরা পাই। একজন মানুষ থানায় যাওয়ার সময় কাউকে যেন সাথে করে নিয়ে যেতে প্রয়োজন না হয়। সাধারণ মানুষ যেন থানায় সহজে প্রবেশ করতে পারে এবং তাদের মধ্যে পুলিশের ভীতি কাজ না সেটি আগে নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই এ ঘোষনাটি বাস্তবে রূপ দিতে সহজ হবে। একজন সাধারণ মানুষ তখন একজন সহযোগীকে সাথে নিয়ে যায় যখন তার মধ্যে পুলিশী ভীতি কাজ করে। শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল ফজল মো: নাসিম বলেন, দেড় মাসের বেশি সময় হয়েছে আমি এ থানায় যোগদান করেছি। সকল কমিউনিটিগন নিজেই তাদের জিডি বা অভিযোগ সরাসরি থানায় এসে জমা দিতে পারবে। তাদের সুনির্দিষ্ট তথ্যর ভিত্তিতে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ছোটখাটো যে কোন সমস্যা এলাকার গণ্যমান্য ব্যাক্তি, জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে সমাধান করার চেষ্টা করবে পুলিশ। আমি বদলী হয়ে গেলে নতুন কোন অফিসার আসলে শুধু ধারাবাহিকতাই নয়, শ্রীপুরবাসীকে আরো ভালো কিছু দিবেন বলে আশা করি।