শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি
মুজিব শত বার্ষিকী উপলক্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের মধ্যে গৃহ নির্মাণ কর্মসূচীর আওতায় শ্রীমঙ্গল উপজেলায় আশ্রয়ণ-২ (২য় পর্যায়) প্রকল্পের ১শ’ ৫৮টি ঘরের মালিকানা হস্তান্তর করা হয়েছে। গতকাল রোববার (২০ জুন) সকালে উপজেলার কালাপুর ইউনিয়নের মাজদিহি এলাকায় আশ্রায়ণ প্রকল্প এলাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক এক ভিডিও কনফারেন্সে গৃহহীনদের মাঝে ২ শতাংশ জমিসহ এসব ঘরের দলিল বুঝিয়ে দেয়া হয়। নিজেদের একটি পাকা ঘর পাওয়ার স্বপ্ন পূরণ হওয়ায় শ্রীমঙ্গলের এসব দরিদ্র গৃহহীন পরিবারের মধ্যে আনন্দের বন্যা বয়ে চলেছে। নিরাশ্রয় এসব মানুষ কোনদিন ভাবেনি যে তারা একদিন নিজেরা জমির মালিক হবে আর পাকা ঘরে বসবাস করবে। অবশেষে স্বপ্নের ঠিকানার খোঁজ পেয়ে তারা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রী এসময় সরকারের ঘোষিত কর্মসূচী বাস্তবায়নে প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের প্রসংশা করে বলেন, জাতির জনকের স্বপ্ন ছিল নিরাশ্রয় মানুষের আশ্রয় দেয়ার। জাতির জনকের সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে সরকার গৃহহীনদের জমিসহ ঘর দেয়ার প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। তিনি বলেন, দেশের কোন মানুষ আর গৃহহীন থাকবে না। সরকারের গৃহীত এই কর্মসূচী বাস্তবায়ন হলে দেশে আর কোন দরিদ্র ও নিরাশ্রয় মানুষ থাকবে না। অনুষ্ঠানে স্থানীয় সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ, বিভাগীয় কমিশনার খলিলুর রহমান, সংরক্ষিত আসনের এমপি সৈয়দা জোহরা আলাউদ্দিন, জেলা প্রশাসক মীর নাহীদ আহসান, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মিজবাহুর রহমান, শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো, নজরুল ইসলাম, কালাপুর ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মুজুলসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, প্রশাসনিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী যখন দরিদ্রদের ঘরের মালিকানা হস্তান্তর অনুষ্ঠানে সংযুক্ত হন তখন তিনি উপকারভোগীদের সাথে সরাসরি কথা বলতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। সঞ্চালক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম এসময় উপকারভোগীদের মধ্যে মহান মুক্তিযুদ্ধের বীরঙ্গনা শীলাগুহকে কথা বলার আহবান জানান। এরপর বীরাঙ্গনা শীলাগুহ প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে মুক্তিযুদ্ধে তার জীবনের করুন কাহিনী তুলে ধরে বলেন ঘর পাওয়ার আগে পথের ভিখেরি ছিলাম। রেল ষ্টেশনে ঘুমাতে হতো। পথের ভিখেরি থেকে এখন আমি লাখপতি হয়েছি। এসময় আবেগপ্রবণ হওয়া প্রধানমন্ত্রীকে চোখ মুছতে দেখা যায়। শীলাগুহ আশ্রায়ণ প্রকল্পে পাওয়া বাড়িতে প্রধানমন্ত্রীকে সিলেটের ঐতিহ্য ’সাতকড়া’ তরকারীর খাবার গ্রহনের নিমন্ত্রন জানালে প্রধানমন্ত্রী সময় ও সুযোগ পেলে নিমন্ত্রণ রক্ষার প্রতিশ্রুতির কথা জানান। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো, নজরুল ইসলাম বলেন, আশ্রয়ণ-২ (২য় পর্যায়) প্রকল্পের আওতায় ২০ একর জমিতে নির্মিত মোট ৩শ’ ঘর নির্মাণের কাজ হাতে নেয়া হয়। এর মধ্যে আজ প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ১শ’ ৫৮টি পরিবারকে জমিসহ ঘরের দলিল বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ, দ্রুত গতির ইন্টারনেট সংযোগসহ দৈনন্দিন সুযোগ সুবিধা সম্বলিত এই প্রকল্পে প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ ও মন্দির বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে ৮টি গভীর নলকূপ বসানো হয়েছে। তিনি জানান, প্রতি ঘড় নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা। ১শ’ ৫৮ টি ঘর নির্মাণে ৩ কোটি ২০হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে বলে তিনি জানান।