অনলাইন ডেস্ক: বাজেট ঘাটতি মেটাতে আগামী ২০২১-২০২২ অর্থবছরে বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হচ্ছে। নতুন বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৩২ হাজার কোটি টাকা।করোনা মহামাররি মাঝে মানুষের আয় কমলেও বাড়ছে সঞ্চয় প্রবণতা। গ্রাহকরা সঞ্চয়ের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করেন সঞ্চয়পত্রকে। ফলে সঞ্চয়পত্র বিক্রি বাড়ছে, আর সে কারণে বাজেট ঘাটতি মেটাতে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়াও বাড়বে।অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘সরকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমাতে চায়। এই খাত থেকে প্রতি অর্থবছরইে বড় অঙ্কের ঋণ নিতে হচ্ছে। করোনার কারণে আগামী অর্থবছরের বাজেটে বৈদেশিক ঋণ সহায়তা কতোটা পাওয়া যাবে তা অনেকটা অনিশ্চিত। আর এ কারণে আগামী বাজেটেও ঘাটতি মেটাতে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নিতে হবে।’
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা এবং অর্থনীতিবিদ ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘করোনায় মানুষের সঞ্চয়ের আগ্রহ বেড়েছে। কিন্তু ব্যাংকে সুদের হার কম। শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে ঝুঁকি আছে। তাই নিরাপদ বিবেচনায় মানুষ সঞ্চয়পত্রে ঝুঁকছে। আবার সরকারেরও ঘাটতি মেটাতে অর্থের প্রয়োজন। রাজস্ব আহরণ কম। ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক ও সঞ্চয়পত্রই ভরসা। এ কারণে হয়তো আগামী বাজেটে সরকার এ খাত থেকে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা বাড়াচ্ছে।’
সূত্র জানায়, চলতি ২০২০-২০২১ অর্থবছরে সরকার সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে ৮৬ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকা। আর ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে ২০ হাজার কোটি টাকা। তবে চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসেই (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৭৫ হাজার ১০৩ কোটি টাকা। যা বিগত পুরো অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রির চেয়েও সাত হাজার ৯৭৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকা বা ১২ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ ছিল ৬৭ হাজার ১২৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সঞ্চয়পত্র বেশি বিক্রি হলে সরকারের ঋণও এই খাত থেকে বাড়ে। কারণ বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধের পর প্রতি মাসে যে অর্থ অবশিষ্ট থাকে তাকে নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি বলা হয়। অর্থনীতির পরিভাষায় নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রিকে সরকারের ঋণ হিসেবে ধরা হয়। ধারণা করা হয়েছিলো, করোনার কারণে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমবে। সেই সঙ্গে এই খাত থেকে সরকারের ঋণের বোঝাও কমে আসবে। কিন্তু হয়েছে উল্টো।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, ব্যাংকগুলোতে আমানতের বিপরীতে সুদের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমছে। ফলে দীর্ঘ মেয়াদে ব্যাংকে টাকা রাখার পরিবর্তে সঞ্চয়পত্রে ঝুঁকছে মানুষ। এসব বিষয় আমলে নিয়ে আগামী অর্থবছরে এ খাত থেকে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা বাড়াচ্ছে সরকার। আগামী বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৩২ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থ বছরের মূল বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা আছে ২০ হাজার কোটি টাকা।তবে সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে ৩০ হাজার কোটি টাকা করা হয়। সংশোধিত হিসাবে আগামী বাজেটে এ খাত থেকে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ছে দুই হাজার কোটি টাকা।