এইচ এম জালাল আহমেদ
ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক (এ্যাডিশনাল আইজিপি) মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বিপিএম বার কতটা সফল তার নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আলোচনার শুরেুতেই বলা হয়েছে, তিনি ব্যর্থ পুলিশ কমিনার তা বলা যাবে না। তবে পুরো সফল তাও বোধ হয় বলা মুশকিল। বলাবাহুল্য তিনি স্বাভাবিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারলে যেমনটি আলোচিত হয়েছে তেমনটি হয়ত হতো না। তিনি যদি নিজ যোগ্যতা বলে দায়িত্ব পালন করতেন তাহলে আজ বলার প্রয়োজন হতো না ডিএমপিতে বাঁশের চেয়ে কঞ্চি মোটায় পরিনত হয়েছে। এ কঞ্চির প্রভাব সীমাহীন তাও আলোচনায় স্থান পেত না। অবশ্য তিনি স্বীকার করবেন না যে তিনি স্বাভাবিকভাবে বিধি বিধান মতে ডিএমপি পরিচালনা করতে পারছেন না। তবে তিনি মুখে যাই বলেন না কেন সত্যিটা হলফ করে অস্বীকার করতে পারবেন বলেও মনে হয় না। ডিএমপির ৫০টি থানার মধ্যে বেশ কয়েকটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, পুলিশ পরিদর্শক তদন্ত, অপারেশন, উপ পুলিশ পরিদর্শক (এসআই), সহকারী উপ পুলিশ পরিদর্শক (এএসআই) ও কনস্টেবল রয়েছেন যারা বাঁশের চেয়ে কঞ্চি মোটার মত অবস্থানে ডিএমপিতে কর্মরত রয়েছেন। তাদের প্রভাব এতটাই বেশী যে সুশৃঙ্খল পুলিশ বাহিনীর চেইন অব কমান্ড ছিড়ে যাচ্ছে। তাদের নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা বোধ হয় কারো নেই।
পূর্বের আলোচনায় এরূপ ইঙ্গিত দিয়ে বলা হয়েছে, পোশাক যেমন ফ্রি স্টাইলে পড়েন। ঠিক তেমনিভাবে তাদের চলা ফেরাও ফ্রি স্টাইলে। চেইন অব কমান্ড মানছেন তেমনটি বোধ হয় আচরনে প্রমাণ মিলছে না। ডিএমপির পঞ্চাশটি থানার মধ্যে ৮ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রয়েছেন যারা বাহিনীর চেইন অব কমান্ড মানার কোন প্রয়োজন মনে করেন বলে ভাবার সুযোগ নেই। ডিএমপির ১১টি থানা পুলিশ পরিদর্শক তদন্ত ও ১৬ থানা পুলিশ পরিদর্শক অপারেশন, ৯ জন পিআই, ১৩ জন বিভিন্ন ফাড়ি ও বক্সের আইসি ১৯ জনের মত রয়েছেন সহকারী উপ পুলিশ পরিদর্শক (এএসআই) ও হাতে গোনা কয়েকজন কনস্টেবল রয়েছেন, তাদের আচরনগত বিষয়টি অবশ্যই সরেজমিনে তদারকির দাবি রাখে। তাদের অবৈধ প্রভাবের লাগাম টেনে ধরার সময় অতিক্রম করার পূর্বেই টেনে ধরার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। এগুলো খুব জরুরি ভাবে দেখার প্রয়োজন ছিল। বিশেষ করে কয়েকটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, পুলিশ পরিদর্শক তদন্ত ও অপারেশন রয়েছেন তাদের আচরনগত বিষয়টি অবশ্যই পুলিশ পরিপন্থি বলে অভিজ্ঞজনদের মতামত রয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকের নাম শোনা যাচ্ছে তারা অপরাধী চত্রের সাথে সুসম্পর্ক রেখে মোটা অংকের অবৈধ অর্থ উপর্জন করছেন। তাদের রয়েছে বড় ধরনের একটি অপরাধ চক্রের শক্তিশালী সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেটের সাথে নানা পেশা শ্রেণীর পরিচয় দেয়া কোন কোন ব্যক্তি জড়িয়ে রয়েছেন।
আলোচনার মাঝে সবার নাম উল্লেখ না করাই ভাল বলে বিবেচ্য। তাই উদাহরন হিসেবে ডিএমপির যাত্রাবাড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও একই থানার পুলিশ পরিদর্শক অপারেশন এর আচরনগত দিকটা সরেজমিনে যারা দেখেন তাদের সবার কাছেই প্রশ্নবিদ্ধ। তাদের মধ্যে জানার আগ্রহটা জাগে তারা এতপ্রভাবশালীতে পরিনত হলো কিভাবে? তারা কি পুলিশ বাহিনী তথা ডিএমপির শৃঙ্খলার বাইরে বা উর্ধ্বে? যদি না হয় তাহলে তাদের এ প্রভাবের উৎস কোথায়? প্রসঙ্গক্রমে বলতে হয়, যারা বিদ্যালয় পার হয়ে কলেজে পা রেখেছেন তাদের অধিকাংশই রাজনীতির বাইরে থাকতে পারছেন বলে মনে করার কোন সুযোগ নেই। তবে হয়ত সবাই প্রকাশ্যে রাজনীতি করে নেতাবনে যাবার প্রতিযোগীতায় সামিল হননি বা হননা। তার মানে এই নয় যে, তারা কোন রাজনৈতিক দলের আদর্শ লালন করেন না। অবশ্যই রাজনৈতিক আদর্শ লালন করেন। ডিএমপির যাত্রাবাড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও একই থানার পুলিশ পরিদর্শক অপারেশনও তার ব্যতিক্রম নন। পুলিশ বাহিনীতে যারা চাকরি করেন তারা কেউই ছাত্রলীগ করে পেশায় নিয়োগ পাননি। তারা কেউই শুধু আওয়ামীলীগের শাসনামলে চাকরি করবেন সে ভাবনায় নিয়োগ নেননি। তাদের বেতন ভাতা আওয়ামীলীগ দলীয়ভাবে পরিশোধ করে বলেও জানা নেই। তাদের বেতন ভাতা অবশ্যই রাষ্ট্র ও জনগণের ট্যাক্সের টাকায় সরকার পরিশোধ করে যাচ্ছে। পেশাজীবনে ছাত্রজীবনের রাজনৈতিক পরিচয়ে প্রতিষ্ঠিত হবার পেছনে কারন কি? এ পরিচয়ে প্রতিষ্ঠিত হবার সুযোগ রয়েছে বলেও জানা নেই। যেমনটি পরিচয়ে প্রভাব বিস্তার করছেন।
স্বাভাবিক কারনেই প্রশ্ন জাগতে পারে ছাত্রলীগ করে আসলে কি তাকে একটি সুশৃঙ্খল বাহিনীর বিধি বিধান মানতে হবে না? তাদেরকে কি চেইন অব কমান্ডের উর্ধ্বে রাখতে হবে? তাদের কি পেশার দায় দায়িত্ব নেই? তারা কি আইনেরও উর্ধ্বে? তাদের কি নিয়োগের সময় অমন বলে দেয়া হয়েছে, যে তারা যাকে পছন্দ করবেন তাদের বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নেয়া যাবে না? তাদের পছন্দের লোকেরা যা খুশি তাই করবেন। তারা অবৈধ বেআইনি কর্মকান্ডে জড়িত থেকে কোটি কোটি টাকা দুর্নীতি করার পরও যারা টাকা পাবেন বা যাদের থেকে টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করে প্রতারনা করছে তাদের বিরুদ্ধে উল্টো মিথ্যা মামলা করতে পারবেন। যদি তেমনটি নিয়োগ বিধিতে বলা না থাকে তাহলে যাত্রাবাড়ি থানায় একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করে পাওনাদারকে গ্রেফতার করে হয়রানি করলেন কিভাবে? যে নারীকে দিয়ে মামলা করিয়েছেন সে নারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে সত্যটা বেরিয়ে আসবে। সে নারীর সাথে যাত্রাবাড়ি থানার পুলিশ পরিদর্শক অপারেশন ও একজন জগন্নাৎ বিশ্ববিদ্যালয়র শিক্ষক পরিচয় দেয়া ব্যক্তির বন্ধু ভূয়া ব্যবসায়ীর কি সম্পর্ক তা প্রকাশ পাবে। সে মামলাটির নেপথ্য জানলে জানতে পারবে মামলাটি অসত্য বুঝতে পারছেন বলেই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা থানায় উপস্থিত থাকার পরও মামলার নথিতে স্বাক্ষর করেননি। সে মামলার নথিতে স্বাক্ষর করিয়েছেন পুলিশ পরিদর্শক তদন্তকে দিয়ে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বিভাগের উপ পুলিশ কমিশনার (ডিসি)ও জানেন।
একইভাবে যাত্রাবাড়ি ফাড়ির বা এলাকার প্যাট্রোল পুলিশ পরিদর্শক কতটা প্রভাবশালী তা এলাকার ফূটপাতে গেলে প্রমাণ মিলবে প্রকাশ্যে। সেখানে প্রমাণ মিলবে যাত্রাবাড়ি পুলিশ ফাড়ির আইসির প্রভাবের বিষয়টিও। ডিএমপি কমিশনার বিষয়টি জানলে তাদের প্রভাবের অবৈধতা জানতে পারলে নিজেই লজ্জাবোধ করবেন। তাদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন তা সরেজমিনে গেলে এবং জানলে প্রমাণই বলে দিবে। প্রশ্ন হচ্ছে ডিএমপি কমিশনার এ বিষয়টি সরেজমিনে জানবেন কিনা এবং তাদের বিরুদ্ধে তার ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ রয়েছে কিনা? তিনি কেন? যে কোন কর্তৃপক্ষ জানলে যথার্থ ব্যবস্থা না নিয়ে পারবেন বলে মনে হয় না। কারন তাদের অবৈধ প্রভাব ও বেআইনি কর্মকান্ড এতটা বেসামাল যে তা সচেতন মহলেই নয় সাধারণ মানুষের মধ্যেও প্রশ্নবিদ্ধ। প্রত্যেক আলোচনা একটা কথা বলছি এটা নিছক আলোচনা কারো বিরুদ্ধে সমালোচনা নয়। কাউকে কারো খাটো বা ছোট করার জন্য আলোচনাটি নয়। ডিএমপি কমিশনার চাইলে বিষয়গুলো যাচাই করে নিলেই েিনত পারেন এবং নেয়া উচিৎ বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন। জানবেন কি জানবেন না তা ডিএমপি কমিশনারের ইচ্ছের ওপর নির্ভর করছে। এটা তার একান্তই নিজস্ব ব্যাপার। তবে একজন দায়িত্বশীল উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে বোধ হয় এড়িয়ে যাবার সুযোগ তার নেই। তিনিও নিজের কর্তব্যের দায় এড়াতে পারেন বলে জানা নেই। তিনি এড়িয়ে যাবেন কিনা তাও জানা নেই।
অন্যের দায় থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার ওপর বর্তিয়ে শাস্তির ব্যবস্থা করলে সত্যিকার অর্থে যারা অনৈতিক ও বেআইনি কর্মকান্ডে জড়িয়ে লাখ লাখ নয় কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া কি খুবই কঠিন? ডিএমপি কমিশনার আমার চেয়ে বেশী জানেন এবং বোঝেন কয়েকদিন পূর্বে ডিএমপির উত্তরা পূর্ব থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্ত কে। তাকে যে বিষয়ে ওপর প্রত্যাহার করা হয়েছে তা ও সে পুলিশ পরিদর্শকের বিষয়টি। থানা থেকে প্রত্যাহার হওয়া সে পুলিশ পরিদর্শক ভাল কি মন্দ সে বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক তুলব না। তবে শোনা ও লোক মুখে জানা বিষয়টির অপরাধে যদি জননন্দিত একজন পুলিশ পরিদর্শক কে ওভাবে প্রত্যাহার করা হয়। তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থায় নেয়া হয়, তাহলে যারা সে কাজটি করতে বাধ্য করছিলেন তারা দুধে ধোয়া তুলশি পাতা হন কিভাবে? অথচ যারা কয়েকমাস পূর্বে থানা ফাড়িতে পোষ্টিং পেয়ে কোন কোন কর্মকর্তা, মন্ত্রীর বডিগার্ড পরিচয়ে এবং মন্ত্রীর ভাগ্নে বা ভাইর পরিচয়ে বেআইনি প্রভাব খাটিয়ে ফুটপাত থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন কিভাবে? অনেক বিষয় রয়েছে সেগুলোর ওপর ডিএমপি কমিশনারের দৃষ্টি দেয়া জরুরি। যথার্থতা প্রমাণের পর বিভাগীয়সহ প্রকৃত ঘটনা জানার পর প্রাপ্য আইনি ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। প্রভাব কাকে বলে তা ডিএমপির যাত্রাবাড়ি থানা গেলে প্রমাণ মিলে। বিষয়টি ডিএমপি কমিশনার জেনে বা যাচাই করে নিলেই নিতে পারেন। দেখার বিষয় এ ব্যাপারে ডিএমপি কমিশনার জানার ও যাচাই করার চেষ্টা করেন কিনা। তিনি জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন কিনা? সে অপেক্ষায় রইলেন ঢাকা মহানগরবাসী।