সাতক্ষীরা প্রতিনিধিঃ
সাতক্ষীরা জেলার চার উপজেলায় সাবস্ক্রাইনেবল কোস্টাল এন্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্পের অধীনে ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্যচাষীদের মাঝে সরকারের দেয়া প্রনোদনার টাকা কৌশলে আত্মসাৎ করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। স্থানীয় ইউপি মেম্বার কর্তৃক প্রকৃত মৎস্যচাষীদের কাছ থেকে তাদের আইডি কার্ড, ছবি ও মোবাইল নাম্বার নিলেও অধিকাংশের কপালেই জুটেনি সেই প্রনোদনার টাকা। আবার মৎস্য চাষের সাথে সম্পৃক্ত নয় এমন শতশত লোকজনকে এসব প্রনোদনার টাকা দেয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী মৎস্য চাষীরা। তথ্যঅনুসন্ধানে জানা গেছে , সাতক্ষীরার তালা , শ্যামনগর , কালীগঞ্জ ও দেবহাটা উপজেলায় মৎস্যচাষীদের মাঝে প্রনোদনার টাকা বিতরণের তালিকায় ভুয়া নাম ও মোবাইল নাম্বার বসিয়ে টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে তালিকায় থাকা সাড়ে ৬শ জন মৎস্যচাষীর সাথে কথা বলা হয় । এসময় তালিকায় থাকা অনেকেই জানান, স্থানীয় ইউপি মেম্বাররা তাদের নিকট থেকে ভোটার আইডি কার্ড, ছবি ও মোবাইল নাম্বার নিলেও তারা কোন টাকা পাননি । তালিকায় তাদের নাম উঠলেও তাদের ফোনে টাকা পৌঁছেনি । তালিকায় উল্লেখিত মৎস্য চাষীদের ফোন নাম্বারে কল করলে তারা বেশীরভাগই মৎস্যচাষী নয় বলে জানান। দেবহাটা উপজেলার চর গ্রামের সাফিয়ার স্বামী মসজিদুল ইসলাম জানান , তার গ্রামের মেম্বার তার কাছ থেকে জাতীয় পরিচয় পত্র ও ছবি নিয়েছে ।
কিন্তু তিনি কোন টাকা পয়সা পাননি । তার মতো একই ঘটনা ঘটেছে কার্তিক চন্দ্র সরকার ও চায়না খাতুনের কপালে । তাদের অভিযোগ তারা কোন টাকা পাননি । অন্যদিকে তালিকায় উল্লেখিত একই গ্রামের সকলে টাকা পেলেও পাশের গ্রামের একজনও টাকা পায়নি । কিন্তু তালিকা তাদের নাম উঠেছে যতœ সহকারে। কালিগঞ্জ উপজেলার মুকুন্দপুর গ্রামের মৎস্য চাষী আবু মুসা , নুর আলম , প্রশান্ত সরকার , রবীন্দ্রনাথ মৃধা , শ্রীকান্ত , গিয়াস উদ্দিন ছাড়াও নারায়ণপুরের রবিউল মিন্টু ও আবু সিদ্দিক টাকা না পাওয়ায় একই অভিযোগ করেন । আবার এই উপজেলার মৎস্য চাষী মিন্টু সরকার জানান , তার গ্রামের প্রকৃত মৎস্য চাষীদের কেউ কেউ টাকা পেলেও তা পরিমাণে ছিলো খুবই নগন্য। টাকার পাওয়ার আশায় তিনিও অন্যদের সাথে ভোটার আইডি কার্ড, ছবি ও মোবাইল নাম্বার জমা দিয়েছিলেন।কিন্তু টাকা না পাওয়ায় তার সেই আশাটুকু পূরন হয়নি। পলাশ কাজী নামের একজনকে উপজেলার মৌতলা এলাকার মৎস্যচাষী হিসেবে দেখানো হলেও প্রকৃতপক্ষে তিনি সেই এলাকার কেউ না। শ্যামনগর উপজেলার খোঁজ নিয়ে জানা গেছে , উপজেলার যাওয়া খালি গ্রামের ৪ মৎস্য চাষীর নাম তালিকায় উঠলেও তাদের মধ্যে একজনও টাকা পাননি । এদের একজন রবীন্দ্রনাথ বৃথার মোবাইলে ফোন করা হলে কল রিসিভকারী ব্যক্তি জানান তার নাম হৃদয়,তিনি মৎস চাষী নন, তার গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জে। উপজেলার বেতাগী গ্রামের বাসিন্দা নিরঞ্জন হালদার জানান, তার গ্রামের মেম্বার তার কাছ থেকে জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি নিয়েছিল।
তার মতো আসলাম হোসেনও কাগজপত্র জমা দিয়েছেন কিন্তু টাকা পাননি । অন্যদিকে তাদের গ্রামের আলমগীর নামে এক ব্যক্তি যিনি বর্তমানে ঢাকা বসবাস করেন । তাকেও মৎস্য চাষী দেখিয়ে টাকা পাঠানো হয়েছে । এছাড়া মৎস্য চাষী না হয়ে রথীকান্ত মিস্ত্রি নামে এক ব্যক্তি টাকা পেয়েছেন বলে তালিকায় নাম উঠেছে । তালিকায় যাদবপুর গ্রামের বাসিন্দা মুহাম্মদ রমিছা বেগম , সাবিনা আক্তার সহ অনেকেরই নাম ঠিকানার সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি । ভুক্তভোগীরা জানান, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তারা তাদের নামের তালিকা নিয়ে ঢাকাস্থ প্রধান কার্যালয়ে পাঠিয়েছেন । কিন্তু ঢাকা থেকে টাকা পাঠানোর সময় তাদের মোবাইলে কোন টাকা পাঠানো হয়নি অথচ তাদের নাম ও মোবাইল নাম্বার তালিকায় প্রকাশিত হয়েছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, বিষয়টি কেন্দ্র থেকে নিয়ন্ত্রিত হয়েছে । এ কারণে প্রকৃত মৎস্য চাষিরা টাকা পেয়েছেন কিনা বিষয়টি যাচাই বাছাই করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি । তারা আরো জানান , ঢাকা থেকে টাকা পাঠানোর আগে তালিকায় ব্যক্তিদের নাম মোবাইল নাম্বার যাচাই করা হয়েছে ।
সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ আনিছুর রহমান জানান, যখন তালিকা করা হয়েছিল তখন আমি যশোর জেলায় দায়িত্বে ছিলাম,তবে আমার জানা মতে তালিকায় কোন অনিয়ম হয়নি। যদি তালিকা অনুযায়ি কোন মৎস্যচাষির নিকট থেকে বিকাশ অথবা নগদ নাংম্বার নেওয়া হয়ে থাকে তিনি অবশ্যই টাকা পাবেন। তারপরেও কেউ টাকা না পেলে অভিযোগ করতে পারেন, কিন্তু এমন কেউ অভিযোগ করেনি ।
।