বগুড়া প্রতিনিধি
জয়পুরহাটের কালাই উপজেলায় মসজিদের এক ইমামকে খুনের রহস্য উন্মোচন করেছে বগুড়া পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেষ্টিগেশন (পিবিআই)। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে পিবিআই এর বগুড়া পুলিশ সুপার আকরামুল হোসেন তার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের এসব তথ্য জানায়। তিনি বলেন ঘাতক শাহীনুর রহমানের স্ত্রী, স্বামীকে তালাক দিয়ে মহাসীন আলী নামের এক মসজিদের ইমামকে বিয়ে করে। বিয়ের পর থেকেই প্রতিশোধ নিতে বিভিন্ন পথ খুজতে থাকে ঘাতক। পরে মহাসীনের সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তুলে জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার মোলামগাড়ী বাজারে স্বাক্ষাত করে চা পান করে। এর পর বেড়ানোর কথা বলে মোটর সাইকেল যোগে নির্জন এক ধান ক্ষেতে নিয়ে লোহার পাত দিয়ে মাথায় আঘাত করে হত্যা করে। এঘটনার পর থেকেই ঘাতক পলাতক ছিল পরে তথ্য প্রযুক্তি ও পিবিআইএর নানামূখী পদক্ষেপে গাজীপুরের গাছা থানার ছয়দানা হাজীরপুকুর এলাকা থেকে ঘাতককে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর প্রথমে পিবিআইএর কাছে ও পরে আদালতে ৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে হত্যার স্বীকার করে। ঘাতক শাহীনুর রহমান শাহীন (৩৩), নওগাঁ জেলার, বদলগাছি থানার চাকরাইল গ্রামের নঈম উদ্দীনের পুত্র।
পুলিশ সুপার আরো বলেন বিগত প্রায় ১২ বছর পূর্বে শাহীনুর রহমান শাহীন ও শারমীন সুলতানা শাকিলার মধ্যে বিয়ে হয়। তাদের ঘরে ওয়াজিফা নামের একটি কন্য সন্তান রয়েছে সে ২য় শ্রেণীতে পড়ালেখা করে এবং পিতা শাহীনুর রহমানের নিকট থাকে। বিয়ের পর থেকেই তাদের সংসারে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারিবারিক জটিলতার কারনে প্রায় এক যুগ পর, স্ত্রী শারমীন স্বামীকে তালাক দেয়। তালাকের প্রায় ১বছর পার হলে গত ৩ মাস পূর্বে মহাসীন আলী নামের এক মসজিদের ইমামকে বিয়ে করে শারমীন। বিয়ের খবর পেয়ে একদিকে শাহীনের মধ্যে তীব্র ক্ষোবের সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে মেয়ের উপবৃত্তির জন্য পিতা-মাতার এনআইডি কার্ড ও জন্ম নিবন্ধন কার্ডের প্রয়োজন হয়। একারনে সাবেক স্ত্রী শারমীন ও শশুর শাশুরীর সাথে যোগাযোগ করে এসব কাগজ পত্র চাইলে তারা দিতে অস্বীকার করে। এসব নানা কারনে আরো ক্ষোভের সৃষ্টি হওয়ায় শাহীনের মধ্যে হিংস্রতার রুপ নেয়। এক পর্যায়ে প্রতিশোধ নিতে বিভিন্ন পথ খুজতে থাকে শাহীন। সে অনুযায়ী কৌশল অবলম্বন করে মহাসীনের ফোন নম্বর সংগ্রহ করে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তোলে। এর পর গত ৭ জুন বিকেলে জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার মোলামগাড়ী বাজারে স্বাক্ষাত করে চা পান শেষে বেড়ানোর কথা বলে মোটর সাইকেল যোগে মোলামগাড়ী বাজার হইতে করিমপুর গামী রাস্তার পাশে নির্জন এক ধান ক্ষেতে নিয়ে যায়। সেখানে শাহীন তার নিজের পরিচয় দিয়ে বলে আমার স্ত্রীর সাথে অবৈধ সম্পর্ক করে এক পর্যায়ে বিয়ে করেছিস এতে আমার সন্তান মাতা হারা হয়েছে। আমার সন্তানের উপবৃত্তির জন্য যেসব কাগজ লাগবে সেগুলো এখন দিয়ে যাবি। এর জবাবে মহাসীন বলে এই মুহুর্তে আমার কাছে কোন কাগজ পত্র নেই। এ কথা বলা মাত্র হত্যার উদ্দেশ্যে সাথে নিয়ে আসা লোহার পাত দিয়ে মাথার পেছনে আঘাত করলে মাটিতে লুটে পরে মহাসীন। হত্যা নিশ্চিত করতে আরো পরপর আরো কয়েক বার আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে চলে যায়। কিছুদুর যাওয়ার পর মহসীন আলীর সাথে গোপনে যোগাযোগ করার জন্য ব্যবহৃত সিমসহ ফোনটি রাস্তার পাশের্ব ফেলে দেয় ঘাতক। আরও কিছুদুর যাওয়ার পর ব্রীজের উপর হতে মহসীনকে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত লোহার পাতটি নদীর মাঝখানে ফেলে দেয়। গ্রেফতারের পর এসব কথা স্বীকার করেছে ঘাতক। পর দিন ৮ তারিখ সকালে মাঠের মধ্যে মহাসীনের মড়দেহ পরে থাকার খবর পায় পরিবার। এঘটনায় নিহতের বাবা একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তভার বগুড়া পিবিআইকে দিলে ১৩ দিন পর রহস্য উদঘাটন ও আসামীকে গ্রেফতার করে। পিবিআই বলেন এঘটনার অন্যকেউ সম্পৃক্ত আছে বলে কোন তথ্য খুজে পাওয়া যায়নী। পিবিআই এর এই মামলাটি তদন্ত করেছেন উপ-পুলিশ পরিদর্শক মোঃ সবুজ আলী।