রেজাউল করিম খান, সিরাজগঞ্জ
টানা বর্ষণ,প্রবল স্রোত ও প্রচন্ড ঘূর্নাবর্তের কারনে সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধ হার্টপয়েন্টের ১০০ মিটার এলাকা যমুনা নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। হার্টপয়েন্টে ভাঙ্গন দেখা দেয়ায় শহরবাসীর মধ্যে আতংক বিরাজ করছে। ভাঙ্গন পরিস্থিতি মোকাবেলায় জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। হার্টপয়েন্টের নিরাপত্তায় এবং ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটার দিকে ভাঙ্গন শুরু হয়। তাৎক্ষনিক সংবাদ পেয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তরা, জেলা প্রশাসন, র্যাব, পুলিশ, জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক দলের নেতারা ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। এ সময় হাজারো উৎসুক মানুষ ভিড় করে যমুনার পাড়ে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার দুপুর দেড়টার দিকে সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধ হার্ড পয়েন্টের পুরাতন জেলখানা ঘাট সংলগ্ন পাউবোর রেস্ট হাউস যমুনা বিলাস-এর সামনে যমুনা নদীর পানিতে বুদবুুদ শুরু হয়। এর কিছুক্ষনের মধ্যেই দুপুর আড়াইটার দিকে বিকট শব্দে বাঁধে ধ্বস নামে। তাৎক্ষনিক খবর পেয়ে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম পাউেবোর কর্মকর্তরা সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও জনপ্রতিনিধিগণ ঘটনাস্থলে ছুটে যান। ধস ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন জিওটেক্স বালির বস্তা ফেলা শুরু করে। স্থানীয় সেচ্ছাসেবকরাও যোগ দেন এই কাজে। কিন্তু এক ঘন্টার মধ্যে হার্ডপয়েন্টের প্রায় ১০০ মিটার এলাকা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। দুপুর তিনটার দিকে জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহাম্মদ, পুলিশ সুপার হাসিবুল আলম বিপিএম, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আনোয়ার পারভেজসহ র্যাব ও পুলিশের উর্র্ধতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম মোবাইল ফোনে জানান, যমুনার তলদেশে প্রবল স্্েরাত ও ঘূর্ণাবাতের কারণে জুন-জুলাই মাসে বাঁধ এলাকা ঝুকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। যার কারনে হার্টপয়েন্ট এলাকায় এ সময় বাড়তি নজর দেয়া হয়। নিয়মিত ব্যাথেমেটিক সার্ভে করা হয়। দুদিন আগেও অবস্থা ভাল ছিল। কিন্তু যমুনা নদীর চরিত্র আনপ্রেডিকটেবল। কোথায় কখন কি হয় বলা মুশকিল। মঙ্গলবার দুপুরে হঠাৎ করেই হার্টপয়েন্টে ধ্বস দেখা দেয়। মূহুর্তের মধ্যে প্রায় ১০০ মিটার এলাকা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। তবে প্রটেকশন কাজ শুরু করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহাম্মদ জানিয়েছেন, ধ্বস নিয়ন্ত্রনে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে আতংকিত হওয়ার কিছু নেই। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ধ্বস এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সিরাজগঞ্জে যমুনায় বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণের পাশাপাশি যমুনা নদীর ভাঙ্গনের হাত থেকে সিরাজগঞ্জ শহরকে রক্ষায় বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্বাবধানে নদী তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় ১৯৯৫-২০০০ অর্থবছরে ৩৬৪ কোটি টাকা ব্যয়ে আড়াই কিলোমিটার দীর্ঘ শহর রক্ষা বাধঁটি নির্মাণ করে কোরিয়ার হুন্দাই কোম্পানী। কিন্তু দশ বছর যেতে না যেতেই ২০১০ সাল থেকে বেশ কয়েক বছর এই বাঁধে ধ্বস দেখা দেয়। ভাঙ্গনের কারনে দফায় দফায় বাঁধ রক্ষায় প্রায় দুইশ কোটি টাকার সংস্কার কাজ করা হয়েছে। এরপরেও এ বছর আবারও নতুন করে ভাঙ্গন দেখা দেয়ায় আতংকিত হয়ে পড়েছে সিরাজগঞ্জ বাসী।