সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
বই না পেয়ে হতাশ সুনামগঞ্জের শিক্ষার্থী অভিভাবকরা। মক্তব বা এবতেদায়ী মাদ্রাসার বই যথা সময়ে চলে আসায় কোন কোন অভিভাবক তাদের সন্তানকে মক্তব বা মাদ্রাসায় নিয়ে যাবারও চিন্তা করছেন। সুনামগঞ্জের নয়টি উপজেলায় প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির কোন বই আসে নি। দুটি উপজেলায় অর্ধেকেরও কম বই এসেছে। পাঁচটি উপজেলায় তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির বই আসে নি। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও ৩০ ভাগ বই পায় নি। নতুন বইয়ের মান নিয়েও হতাশা আছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে।সুনামগঞ্জ শহর বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী তাঞ্জিলা আক্তার বই না পেয়ে হতাশা ব্যক্ত করে বললো, ‘ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষার বই ছাড়া অন্য কোন বই পাই নি। পড়াশুনা করবো কি দিয়ে, জানুয়ারি মাস তো চলেই যাচ্ছে। দ্রæত বই দেবার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাল সে। কেবল তাঞ্জিলা নয়, জেলাজুড়েই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বই না পেয়ে হতাশায়। শহর বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী খাদিজা আক্তার বললো, বই না দিলে আমরা পড়বো কিভাবে। বই না থাকায় স্কুলে ক্লাস করতেও সমস্যা হচ্ছে। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সদরগড় সরকারি প্রথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি হারুন অর রশিদ বললেন, প্রথম শ্রেণির বই না পেয়ে অনেক অভিভাবক হতাশায় পড়েছেন, নিজের সন্তানকে মক্তবে নিয়ে ভর্তি করানোর কথাও ভাবছেন কেউ কেউ। আমরা বলছি শীঘ্রই বই পাওয়া যাবে, হতাশার কিছু নেই। সুনামগঞ্জ পৌর এলাকার একটি বিদ্যালয়ে কর্মরত একজন প্রধান শিক্ষক বললেন, সত্য কথা বললে ডিপার্টমেন্ট থেকে জবাব চাওয়া হবে। প্রাথমিক শিক্ষার বেহাল অবস্থা এখন। প্রায় দুই বছর বিদ্যালয়ে করোনার জন্য ক্লাস হয় নি। পড়াশুনার গতি হারিয়েছে সকলেই, এখন বই নেই। এ কারণে আবারও ছন্দপতন ঘটেছে। এই পিছিয়ে যাওয়া রুখতে সময় লাগবে। সুনামগঞ্জ শহরের এইচএমপি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সৌমিক ও অনুভব সাহা জানালো, বাংলা, গণিত, ইংরেজি, বিশ^ পরিচয় ও ধর্ম বই এখনো পাওয়া যায় নি। বিদ্যালয়ে ক্লাস কিভাবে করা যায় প্রশ্ন রেখে বললো, সরকার দ্রæত বই দেবার ব্যবস্থা না করলে, আমাদের ক্ষতি হবে। এই দুই শিক্ষার্থী জানালো, বই যেগুলো পাওয়া গেছে, কয়েকদিন ব্যবহার করলেই, আর পড়া যাবে না। ছবিও অস্পষ্ট। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের দায়িত্বশীলরা জানান, জেলার দোয়ারাবাজার ও সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় ৪৫ থেকে ৪৬ শতাংশ শিক্ষার্থীকে প্রথম শ্রেণির বই এবং সুনামগঞ্জ সদরে ৩৩ এবং দোয়ারাবাজারে ৬৬ শতাংশ শিক্ষার্থীর মধ্যে দ্বিতীয় শ্রেণির বই বিতরণ করা হয়েছে। অন্য ১০ উপজেলায় প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির কোন বই আসে নি। সুনামগঞ্জ সদর, দোয়ারাবাজার, বিশ^ম্ভরপুর, ছাতক ও তাহিরপুর উপজেলায় তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির কোন বই আসে নি। মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোরও ৩০ ভাগ শিক্ষার্থী এখনো বই পায় নি। কেবল এবতেদায়ী মাদ্রাসাগুলোতে শতভাগ বই এসেছে।জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রহমান বইয়ের মানের অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে বললেন, বেশিরভাগ বই সময়মত না পৌঁছানোয় অভ্যন্তরীণ সমন্বয়ের মাধ্যমে বই উৎসব করা হয়েছে। বইয়ের বিষয়ে ছাপাখানার সঙ্গে কথা বলেছি আমরা। তারা শীঘ্রই বই পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছে।জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বললেন, মাধ্যমিক স্কুলগুলোর ৭৫ ভাগ নতুন বই এসেছে, বিতরণও হয়েছে। ইংলিশ ভার্সনের ৮৫ ভাগ বই এসেছে। এবতেদায়ী মাদ্রাসার বই শতভাগ পৌঁছেছে। স্কুলের বাকী বইও দ্রতই।