কক্সবাজার প্রতিনিধি :
দেশের ভ্রমণপিপাসুদের প্রথম পছন্দ কক্সবাজার। বিশ্বের দীর্ঘতম এই সমুদ্রসৈকতে বছরে বেড়াতে আসেন ২০ থেকে ২৫ লাখ পর্যটক। তাদের সম্মিলিতভাবে নিরাপত্তা দেয় লাইফগার্ড, ট্যুরিস্ট পুলিশ এবং জেলা প্রশাসন। সব সময় থাকেন বিচকর্মীরাও।
তারপরও গত ১০ মাসে সাগরে গোসলে নেমেমারা গেছেন পাঁচজন পর্যটক এবং চারজন স্থানীয় বাসিন্দা। এর মধ্যে চলতি অক্টোবরেই একজন পর্যটকসহ চারজনের প্রাণহানি ঘটেছে। ৫৬ জনকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করেছেন লাইফগার্ড কর্মীরা।
সমুদ্রে গোসলে নামা পর্যটকদের নিরাপত্তায় ১৩ বছর ধরে কাজ করছেন লাইফগার্ড কর্মী জয়নাল আবেদিন ভুট্টু। তিনি ভিউজ বাংলাদেশকে বলছিলেন, সমুদ্রে চোরাখাল ও রিপ কারেন্ট থাকা এবং লাইফগার্ড না থাকা স্থানে পর্যটকদের গোসলে নামাসহ কিছু বিশেষ কারণে এ ধরনের দুর্ঘটনা বাড়ছে।
তিনি জানান, সমুদ্রের কোথায় রিপ কারেন্ট, চোরাখাল আছে, তা চিহ্নিত করতে পারেন লাইফগার্ড কর্মীরা। তবে সীমিত জায়গায় কম কর্মী নিয়ে লাইফগার্ড কাজ করায় পুরো সমুদ্রসৈকতে নিরাপত্তা দেয়া সম্ভব হয় না।
বার বার দুর্ঘটনা ঘটলেও পর্যটকদের মাঝে অসচেতনতা রয়েই গেছে। কেউ কেউ লাইফগার্ডের নির্দেশনাও মানতে চান না। নির্দিষ্ট স্থান ফেলে এবং বিপদসীমা না মেনে হুট করে সাগরে নেমেই ঝাঁপাঝাপি শুরু করে দেন। বিপদজনক স্থান না চিনে সে জায়গায় গোসল করতে গিয়েই বেশি বিপদে পড়েন পর্যটক ও স্থানীয়রা।
ভুট্টু বলেন, কেউ সমুদ্রের বেশি ভেতরে চলে গেলে অত্যাধুনিক সরঞ্জাম না থাকায় সেখান থেকে অনেক সময় উদ্ধার করাও সম্ভব হয় না।
সর্বশেষ গত শনিবার (২৬ অক্টোবর) সাগরজলে ডুবে মারা যায় স্থানীয় এক কিশোর। মূলত ভাটার শেষ এবং জোয়ারের শুরুতে সমুদ্রে জেগে ওঠা চোরাখাল পার হয়ে গোসলে নেমেছিল সে। পরে জোয়ার আসায় চোরাখাল ভরে ওঠায় সাঁতরে আর তীরে আসতে পারেনি বলে মন্তব্য করেন লাইফগার্ড ভুট্টু।
আরেক লাইফগার্ড কর্মী জানান, ভাসমান টিউবও বড় একটি মৃত্যুফাঁদ। সাঁতার না জেনেও সাগরে নামা পর্যটকদের অনেকে টিউবে ভরসা করেই ভাসতে ভাসতে দূরে চলে যান। স্রোতের টান ও ঢেউয়ের তোড়ে টিউব ছিঁড়ে গেলে পানিতে ডুবে গিয়ে মৃত্যু ঘটে তাদের। অনেক জেটস্কি চালক অদক্ষ, ট্রেনিংপ্রাপ্ত নন, ভালোভাবে সাঁতারও জানেন না তাদের কেউ কেউ। সমুদ্রে টিউব নিষিদ্ধ করা দরকার বলেও মনে করেন তিনি।
সিনিয়র লাইফগার্ড জয়নাল আবেদিন ভুট্টু বলেন, আনন্দ করতেই কক্সবাজারে বেড়াতে আসেন সবাই। সে আনন্দ ম্লান হয়ে যায় মুহূর্তের অসতর্কতায়।করণীয় সম্পর্কে ভুট্টু বলেন, প্রত্যেকের উচিত প্রশাসনের নির্দেশনা মেনে চলা এবং কেবলমাত্র লাইফগার্ড থাকা স্থানেই গোসলে নামা।
জেলা প্রশাসনের পর্যটন ম্যাজিস্ট্রেট তানভীর হোসেনের মতে, সৈকতের নিরাপত্তায় সম্মিলিতভাবে দায়িত্ব পালন করছেন ট্যুরিস্ট পুলিশ, বিচকর্মী এবং লাইফগার্ড। তবে পর্যটকদের আরও সচেতন হওয়া দরকার।
তিনি বলেন, বিপদসীমা থেকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টাকে স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ বলে মনে করেও বিপদে পড়েন পর্যটকরা।তবে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আরও কার্যকর পদক্ষেপ চান পর্যটন পেশাজীবীরা। তারা মনে করেন, অনাকাঙিক্ষত দুর্ঘটনা রোধে পর্যটকদেরও সচেতন থাকা এবং নিরাপত্তা নির্দেশিকা মেনে চলাও জরুরি।