মো.শহিদুল ইসলাম : দীর্ঘ অপেক্ষার পালা শেষ। ৫৪৩ দিন বা এক বছর পাঁচ মাস ২৪ দিন বন্ধের পর আজ খুলছে স্কুল-কলেজ। । তবে আজ পুরোদমে খুলছে না । চলতি ও পরবর্তী বছরের এসএসসি-এইচএসসি ও সমমানের এবং পঞ্চম শ্রেণী শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন ক্লাস করবে আর বাকিরা করবে সপ্তাহে একদিন। কর্তৃপক্ষ চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ও খুলতে পারতেন কিন্তু তারা খুলবেন অক্টোবারে। করোনায় লন্ডভন্ড শিক্ষাসেক্টর এবার ঘুরে দাড়াঁনোর পালা । প্রাণঘাতী করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার তিনবারের পরিকল্পনা ভেস্তে যাবার পর দেশে আজ খুলছে স্কুল -কলেজ। দ্রুত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে অনুযায়ী গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী এবং সচিবালয় থেকে মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের নিয়ে বৈঠক শেষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দ্রুত খুলে দিতে নির্দেশনা রয়েছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে গত বৃহস্পতিবার বৈঠকে বসে করোনা সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। এই বৈঠকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে মত দেয়া হয়। পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লা বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। কারণ, করোনা সংক্রমণের হার অনেকটাই কমে এসেছে। টিকাও দেয়া হচ্ছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে এবং জনস্বাস্থ্যবিষয়ক কিছু ব্যবস্থা নেয়া সাপেক্ষে এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা উচিৎ। এছাড়াও দেশে করোনার সংক্রমণ নিম্নগামী হওয়ায় আজ থেকে খুলছে দেশের স্কুল-কলেজ।
এ বছরের এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ক্লাস কিছুদিন পরেই শেষ হয়ে গেলে নবম ও একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন ক্লাস হবে, পঞ্চম শ্রেণির প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী ও অষ্টম শ্রেণির জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষার প্রস্তুতি থাকবে। পরিস্থিতি অনুকুল হলে পরীক্ষা নেওয়া হবে। প্রাক-প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের সশীর ক্লাস আপাতত বন্ধ থাকবে
বিদ্যালয়ে শ্রেণি কক্ষগুলোতে ধোয়া-মোছার কাজ আগেই শেষ হয়েছে। পরিস্কর পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে অভিভাবকদের জন্য বসার স্থানও।অফিস কক্ষে মজুত করা হয়েছে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, স্যাভলন, স্প্রে-মেশিন ও মাস্ক। স্বাস্থ্যবিধি মেনে পাঠদান কার্যক্রমের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে। নতুন করে সব বিদ্যাপীঠ সাজছে নতুন সাজে।
গতকাল মতিঝিল শাখার,আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ঘুরে দেখা যায়, অনেক ছাত্রছাত্রীরা স্কুলে এসেছে তাদের ইউনিফম ও জুতা নিতে, কারন প্রায় দেড় বছর আগের সেই পোষক এখন ছোট হয়ে গেছে। এই জন্য আবার নতুন করে নিতে এসেছে। তাই ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে কিছুটা উৎসেব আমেজ বিরাজ করছে।বেঞ্চগুলো এরই মধ্যে পরিষ্কার করা হয়েছে। দূরত্ব বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় বেঞ্চ ও নির্মিত ভবনে সংযোজন করা হচ্ছে। বিভিন্ন সচেতনতা ও নির্দেশনামূলক লেখা টানানো হয়েছে। শিক্ষার্থীরাও একে অন্যের সঙ্গে কুশল বিনিময় করছে। চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ছোট-বড় শিক্ষার্থীর দল। অনেকে মেতে উঠেছে গল্প-আড্ডায়।
মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারি প্রধান শিক্ষক মো.মোফাজ্জেল হোসেন বলেন, সরকারে দেয়া নির্দেশনা অনুযায়ী আমাদের সব রকমের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। তবে স্কুলে আমরা কোন রকমের জটলা বাঁধতে দিব না সেই অনুযায়ী ক্লাস সাজানো হয়েছে।মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারি প্রধান(দিবা) শিক্ষক মো. আঃ ছালাম খান বলেন, আমাদের স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রায় ২৬ হাজার ছাত্রছাত্রী আছে আমরা সবার জন্য মাস্ক তৈরি করা হয়েছে। যারা মাস্ক পরে না আসবে তাদেরকে দেয়া হবে। আমাদের প্রতিটা গেটে চার জন করে তাপমাত্রা মাপার যন্ত্র নিয়ে সিকিউরিটি গার্ড থাকবে সবাইকে তাপমাত্র মেপে ভিতরে প্রবেশ করানো হবে। প্রাথমিক অবস্থায় আমরা এসএসসি-এইচএসসি ও পঞ্চম শ্রেণী এবং প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের আসতে বলা হয়েছে বাকিরা আসবে সপ্তাহে একদিন।