খায়রুল আলম রফিক : গুটি কয়েক ডাক্তার সিন্ডিকেট চক্রের হাতে জিন্মি নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা। এই চক্রটিই দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালে নানা অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম-দূর্নীতি, জখমি সনদ বাণিজ্য,ঔষধ চোরাচালান, সিমিত সংখ্যক সিজার কার্যক্রম পরিচালনা করে নিজেদের ক্লিনিক এ রোগীদের কৌশলে হাসপাতালে নার্স-কর্মচারীদের দিয়ে নিজের প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করে সিজার করানো সহ নানা অনিয়ম সাধিত হয় এই চক্রটিকে দিয়ে।
যার মূল্য নেপথ্যে রয়েছে জেলার স্থানীয় বাসিন্দা আধুনিক সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার টিটু রায়। তিনিই মূলত এই সিন্টিকেট চক্রের মূল হোতা বলে অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে। কিন্তু হাসপাতালে তত্তাবধায়ক ও আরএমও তার এই অপকর্মেও অন্যতম সহযোগী। আরএমও নিজেই সপ্তাহে ২ দিন (শুক্র ও শনিবার) উপস্থিত থাকেন না। আর হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়ক নিজে এই পদে নতুন পদোন্নতি পাওয়ায় অনেকটা জিন্মি এই চক্রের কাছে তাই সকল অপকর্ম নিরবে সহ্য করেন তিনি। যদিও এসব অনিয়ম স্বীকার করতে নারাজ হাসপাতালে প্রশাসনিক কর্মকর্তাগণ।
সম্প্রতি করোনা কালিন সময়ে আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা না পাওয়া অনেক রোগী মৃত্যুবরণ করায় জেলার সুশিল সমাজ, সাধারণ মানুষ এই অনিয়ম ও চিকিৎসকদের শাস্তিমূলক বদলি চেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। কিন্তু এখনো এর প্রতিকার না মেলায় হতাশায় এ অঞ্চলের দরিদ্র রোগী ও তার স্বজনরা। অনুসন্ধানে জানা গেছে, নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালের ভিতরে দিনে ১/২টি সিজার করানো হয়।
তাও আবার জেলা শহরের বড় বড় রাজনৈতিক নেতার সুপারিশে তাদের স্বজন বা পরিচিত জনদের আর এর বাহিরে যদি কোনা ব্যাক্তি সিজার করায় তাহলে হাসপাতালে কর্মচারীদের গোপনে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে করাতে হয়। যদি এক দিনে ১০ জন গর্ভবতী নারীকে সিজার করানো প্রয়োজন পরে সেটি আর সম্ভব হয়না হাসপাতালটিতে। পরে ঔ রোগীদের নিয়ে যাওয়া হয় ডাক্তারদের নির্ধারিত ক্লিনিকে সেখানে চরামূল্য দিয়ে সিজার করাতে হয় রোগীদের। হাসপাতালে অনেক চিকিৎসকই আবার জেলা শহরের বিভিন্ন ক্লিনিক-ডায়গোনস্টিক ব্যবসার সাথে জড়িত রয়েছে বলেও জানা গেছে।
জেলা শহর বা দূর-দূরান্ত থেকে যদি রোগী আসে তাহলে তাদের অধিকাংশ রোগীকেই রেফাট করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। আর এই করোনা মহামারিতে করোনায় আক্তান্ত কোনো রোগীকে রাখতেই নারাজ এই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এমন অভিযোগ প্রায় প্রতিদিনই রয়েছে রোগীর স্বজনদের। নাম প্রকাশ না করার শর্তেও নেত্রকোনা শহরের একজন সাংস্কৃতিক কর্মী জানান, আমি আমার বাবাকে নিয়ে এখানে এসেছিলাম তার শ্বাসকষ্ট ছিল কিন্তু এখানের কোন ডাক্তার তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিতেই অনিহা জানায়। শুধু মাত্র একটি টিকেটে রেফার্ট টু ময়মনসিংহ লিখেই তাদের দায় সারলেন এমনকি এখানে একটু অক্সিজেন পর্যন্ত শান্তিতে দিতে পারিনি বাবাকে।
অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, প্রতি রবি থেকে বৃহস্পতিবার হাসপাতালের আউট ডোর সার্ভিসে সাধারন রোগীদের দেখার কথা সকাল ৯ টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত কিন্ত এখানে কর্মরত কোন ডাক্তারই সময় মতো চেম্বারে বসে রোগী দেখেন না। আড়াইটার আগেই শহরের বিভিন্ন ডায়গনস্টিক সেন্টারে চলে যান এবং তাদের মনোনীত দালালদের দিয়ে রোগীদের সেসব চেম্বার নিয়ে যেতে বলেন। জেলা শহরের অন্তত্য ১০ টি ডায়গনষ্টিকে চেম্বার করেন, হাসপাতালে আবাসিক চিকিৎসক ইকরামূল হাসান এবং তিনি প্রতি বৃহঃস্পতিবার বিকেলে কর্মস্থল ছেড়ে ঢাকায় চলে যান ও রোববার ১১/১২ টারমধ্যে হাসপাতালে উপস্থিত হন।
একজন আবাসিক মেডিকেল অফিসার কিভাবে এমন কাজ করতে পারেন? হাসপাতালে জখমি সনদ বাণিজ্যের রমরমা ব্যবসার সাথে জড়িত এই সিন্ডিকেট চক্র, কোনো মারামারি,কাটাকাটির রোগী আসলেই চক্রটি জখমি সনদ পজিটিভ- নেগেটিভ দেয়ার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়। এবং এই চুক্তি হাসপাতালে ম্যাট্স এর শিক্ষার্থীদের দিয়ে করানো হয়, যার মুল কারিগর মেডিকেল অফিসার টিটু রায় ও ডাক্তার শ্রদ্ধানন্দন নাথ। তারা বছরের পর বছর এই মেয়াদ উর্ত্তীণ শিক্ষার্থীদের হাসপাতালে রেখে নিজেরা চেয়ারে বসে থেকে ওদের দিয়ে রোগী দেখায় ও হাসপাতালের নানা অপকর্ম করায়। আর টিটু রায় তো নিজের ডিউটি রেখে জেলা শহরের অন্ত্যত ১০/১৫টি ক্লিনিকে সিজারের অ্যানেস্তিশিয়া (অজ্ঞান ) করায়।
আর এসকল রোগী টিটু রায়ের মনোনীত দালালরা সরকারি হাসপাতাল থেকে এসব বেসরকারি ক্লিনিকগুলোতে প্রেরণ করে। দীর্ঘদিন ধরে এই সিন্ডিকেটের কবলে জিন্মি এ অঞ্চলের সাধারণ রোগী ও তাদেও স্বজনরা। কেউ এসব অনিয়মের প্রতিবাদ করতে গেলেই তাদের নানা রাজনৈতিক দলের নেতাদের ভয় দেখানো হয় এবং টিটু রায়ের বাড়ি নেত্রকোনা জেলায় হওয়া তিনি একটু বেশি জোর খাটান এই অপর্কমের কেউ প্রতিবাদ করলে। যে কারণে অনেকটা ভয়ে কেউ মুখ-খুলতে রাজি হয়না। না প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালে এক কর্মচারী পরিচয়দানকারী ব্যাক্তি জানান, আরএমও বা তত্তাবধায়ক কি ওনারা এখানে আজ আছেন কাল নেই তারা লুটে-পুটে খেলে তো আমার জেলার ডাক্তারদের নিয়েই খায় শুলুতে তো কেউ সহস পায় না।
যখন জেলার স্থায়ী বাসিন্দা ডাক্তাররা তাদের নিয়ে এসব অনিয়ম করতে দল তৈরী করে তখই তো সাহস পায়। স্থানীয় ডাক্তারাই এর মূল হোতা। জেলা শহরের একজন গণমাধ্যম কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, জেলা হাসপাতালে অনেক চিকিৎসক নেত্রকোনার বাসিন্দা, তাই তারা এখানে চিকিৎসা সংক্রান্ত অনেক ব্যবসার সাথে জড়িত তাই তারা সরকারি হাসপাতালে রোগীদেও চিকিৎসা দিতে পছন্দ করেন না। চেম্বারে গেলে তাদের একটু বাড়তি সুবিধা হয় তাই তারা এসব করেন।
বলতে পারেন অনেকটা শিকড় গজিয়ে বসেছেন। এমন সমস্যার প্রতিকার হলো এসব অপকর্মেও সাথে জড়িত চিকিৎক ও স্থানীয় ডাক্তারদের শাস্তিমূলক বদলি। অনিয়মের বিষয়ে নেত্রকোনা সদর হাসপাতালে মেডিকেল অফিসার টিটু রায় কে দৈনিক আমাদের কন্ঠের পক্ষ থেকে ফোন করলে বন্ধ পাওয়া যায়। এ বিষয়ে নেত্রকোনা আধনিক সদর হাসপাতালে আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) ইকরাামুল হাসান দৈনিক আমাদের কন্ঠকে বলেন, জখমী সনদ দেয়ার কোনো বিষয় যদি থাকে আমাকে দিন,আমার মা অসুস্থ তাই ঢাকা চলে যাই, আমার কোন প্রাইভেট হাসপাতাল নেই।