নিজস্ব প্রতিবেদক
বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশ নামের একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাস্ট্রের নামের শুভ প্রকাশ। একটি লাল সবুজ পতাকার পত পত করে দখিনা হাওয়ায় ওড়া আর এর সাথে একটি জাতীয় সংগীত “আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি।” এত প্রাপ্তি বাঙালি রাখে কোথায়? এ যেন একসাথে পাওয়া বিধাতার দেয়া সর্বশ্রেষ্ঠ উপহার। কিন্তু এ প্রাপ্তি অত সহজে আসেনি। ৩০ লক্ষ শহীদকে দিতে হয়েছে রক্ত, আড়াই লক্ষ মা বোনকে দিতে হয়েছে সম্ভ্রম। বাঙালির এই গৌরবগাথা বিজয়ে প্রতিটি ধাপে ধাপে ছিল হায়নার দল শত্রু সেনাদের বাধার প্রাচীর। এই বাধার প্রাচীরের দুর্গ ধাপে ধাপে ভাঙতে হয়েছে বাঙালিকে। ২০০ বছরের ব্রিটিশের পরাধীনতার গ্লানি থেকে মুক্তি পাওয়ার পরও ২৪ বছর পরাধীনতার গ্লানি টানতে হয়েছে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানবাসী অর্থাৎ বাঙালির। ২৪ বছরের পরাধীনতার গ্লানি থেকে রক্ষা পাওয়ার একটি ধাপ স্বাধীনতা অর্জনের একটি মাইলফলক ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান।আজ ২৪ জানুয়ারি, ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থান দিবস।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান এক তাৎপর্যপূর্ণ সূচনা। মহান স্বাধীনতা অর্জনের মাইলফলক। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, বাঙালির মুক্তির সনদ ৬ দফা, পরবর্তীতে ১১ দফা ও ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের পথ বেয়ে রক্তাক্ত সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালি জাতি অর্জন করে মহান স্বাধীনতা।বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালে ঔপনিবেশিক পাকিস্তানী শাসন, শোষণ ও বঞ্চনা থেকে বাঙালি জাতিকে মুক্ত করতে ঐতিহাসিক ৬ দফা ঘোষণা করেন।যার সাথে ছিল তৎকালীন সাত কোটি মানুষের মৌলিক অধিকার সুনিশ্চিৎ হওয়া প্রসঙ্গ। পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী আন্দোলনকে নস্যাৎ করার হীন উদ্দেশ্যে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করে বঙ্গবন্ধুকে বন্দী করে। এ মামলার বিরুদ্ধে দেশব্যাপী ছাত্র-শ্রমিক-জনতা দুর্বার ও স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন গড়ে তোলে। পাকিস্তানি সামরিক শাসন উৎখাতের লক্ষ্যে ১৯৬৯ সালের ১৯ জানুয়ারি সংগ্রামী জনতা স্বৈরাচারী আইয়ুব দমন-পীড়নের ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল বের করে।
২০ জানুয়ারি পাক পুলিশের গুলিতে শহীদ হন গণঅভ্যুত্থানের নায়ক শহীদ আমানুল্লাহ আসাদুজ্জামান (শহীদ আসাদ)। আসাদের আত্মদানের পর তার রক্তামাখা শার্ট নিয়ে তাৎক্ষণিক মিছিলে বের করে ঢাকা বিশ্ব্যবিদ্যালয়ের ছাত্ররা। শুরু তীব্র আন্দোলন। ২১, ২২, ২৩ জানুয়ারি শোক পালন করে সারা দেশ। ২৩ ফেব্রুয়ারীর বঙ্গবন্ধুকে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করা ২৪ জানুয়ারি ঢাকায় সচিবালয়ের সামনের রাজপথে নবকুমার ইনস্টিটিউটের নবম শ্রেণির ছাত্র কিশোর মতিউরসহ অন্য একজন শহীদ হন। আন্দোলন পরিপূর্ণ গণঅভ্যুত্থানে রুপ নেয়। তুমুল প্রতিবাদে সংগ্রামী জনতা সেদিন সচিবালয়ের দেয়াল ভেঙে আগুন ধরিয়ে দেয়। বিক্ষুব্ধ জনগণ আইয়ুব মোনায়েম চক্রের দালাল, মন্ত্রী, এমপিদের বাড়িতে এবং তাদের মুখপত্র হিসেবে পরিচিত তৎকালীন দৈনিক পাকিস্তান ও পাকিস্তান মর্নিং নিউজে আগুন লাগিয়ে দেয়। জনগণ আইয়ুব গেটের নাম পরিবর্তন করে আসাদ গেট নামকরণ করে। বাঙালি তার অধিকার ফিরে পেতে ছয় দফাকে কেন্দ্র করে অর্থাৎ বাঙলার মানুষের জন্য বঙ্গবন্ধুর দেয়া ছয় দফা দ্বাবি মানাতে না পারায় ধাপে ধাপে পুরো পাকিস্তানিদের প্রতি পাকিস্তানিদের অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় একসময় মুক্তিকামী জাতি বাঙালিকে ৯ মাস সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অর্জন করতে হয় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীনতা।
ইতিহাসবেত্তারা বলেছেন, উনসত্তরের গণএগণঅভ্যুত্থান বাঙালি জাতিকে মুক্ত করার প্রধান মাইলফলক হয়ে পূর্ণ একটি স্বত্বন্ত্র জাতি হিসেবে স্বীকৃতি পেতে প্রধান অন্তরায় হিসেবে ভূমিকা পালন করেছে। বাঙালি স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে বাঙালি জাতির প্রতি বঙ্গবন্ধুর আত্মত্যাগ ও ৩০ লক্ষ শহীদ ও ও আড়াই লক্ষ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার মান এ প্রজন্ম অক্ষুন্ন রাখবে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকী।, তিনি আরো যোগ করেন, গণঅভ্যুত্থানের সাথে সাড়ে ৭ কোটি মানুষের স্বার্থ রক্ষার মূল লক্ষ্য জড়িয়ে ছিলো,যার ফলে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমরা স্বাধীন সার্বভৌম একটি রাস্ট্র পেয়েছিলাম। আজ সে বাংলায় মানুষের সংখ্যা সাড়ে ১৬ কোটি সাড়ে ১৬ কোটি।মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করলে বাঙালি জাতি একতাবদ্ধ থাকে বাঙালি জাতি একতাবদ্ধভাবে এ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে বলে মনে করেণ তিনি।
নতুন প্রজন্ম আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে গণঅভ্যুত্থানকে লক্ষ্য হিসেবে নিতে পারে অর্থাৎ গণঅভ্যুত্থান যেমন স্বাধীনতা এনে দিয়েছিল গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্বে থাকা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, একতা শান্তি শৃঙ্খলা, দেশ ও মানুষের সার্থে নতুন প্রজন্মের বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী হয়ে একতাবদ্ধ হবে স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তির পক্ষে কাজ করে আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করেন এই শিক্ষাবিদ,ইতিহাসবিদ ও বঙ্গবন্ধু পরিষদ নেতা ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থান দিবসটি পালনে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। দিবসটি পালন উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।