নিজস্ব প্রতিবেদক
যৌতুকলোভী স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করে নির্মম নির্যাতনের স্বীকার হয়েছে এক গৃহবধূ। স্বামী ও তার পরিবারের সদস্যদের হাত থেকে বাচাঁর জন্য ভূক্তভোগী ওই নারী মিরপুর মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেন। মামলা নং ১৯/তাং ০৮/০৬/২০২১ইং। সূত্র জানায়, গৃহবধূর নাম শারমিন আফরোজ তুহিন। তিনি একজন পেশাদার সাংবাদিক। গ্রামের বাড়ী দিনাজপুর জেলা সদরের উত্তর বালুবাড়ী । বর্তমান: ৭৪০/এ মিরপুর শেওড়াপাড়া এলাকায় তার একমাত্র ১১ বছরের শিশু সন্তান ও স্বামী মাহমুদুজ্জামান উজ্জলকে নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন। শারমিন আফরোজ তুহিনের প্রথম স্বামীর সাথে বনিবনা না হওয়ায় কোন এক সময় তার সাথে ডিভোর্স হয়ে যায়। সে ঘরে তার আলী ইমাম রাকিব নামে একটি সন্তান রয়েছে, যার বর্তমান বয়স ২৪। প্রথম স্বামীর সাথে ডিভোর্স হওয়ার পর সন্তানকে নিয়ে ভালভাবেই জীবন-যাপন করে শারমিন তখনও সুপ্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর তার পরিবার মাহমুদুজ্জামান উজ্জল ভালোবেসে শারমিনকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর তাদের দাম্পত্য জীবন ভালোভাবে কাটলেও আস্তে আস্তে মাহমুদুজ্জামানের আসল রূপ বেরিয়ে আসে। উজ্জল কারণে অকারণে স্ত্রীর কাছে টাকা চাইতে থাকে। এরই মধ্যে শারমিন সন্তান সম্ভাবা হন। কন্যা সন্তান জন্মের পর প্রতিনিয়ত স্বামী উজ্জল তার উপর নির্যাতন করতে থাকে। সন্তানের কথা চিন্তা করে বাবার বাড়ী থেকে জমি বিক্রি করে উজ্জলকে বিভিন্ন মেয়াদে প্রায় ২২ লাখ টাকা এনে দেয়। এছাড়াও তিনি নিজে একটি পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেন ও দুটি বুটিক শপ ও একটি বিউটি পার্লারের দোকান দিয়ে অর্জিত টাকা স্বামীর হাতে তুলে দেন। অনেক কষ্ট করে সন্তানকে নিয়ে সুখের স্বপ্ন দেখার জন্য স্বামীর নির্যাতন সহ্য করেও তিনি ওই সংসারে বসবাস করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু যৌতুকলোভী উজ্জল তা নির্যাতনের মাত্রা এমন পর্যায়ে পৌছেছে যে, সেখানে আর বসবাস করা সম্ভব হয়নি। সর্বশেষ গত ৭ জুন উজ্জল আবারো শারমিনের কাছে ৩০ লাখ টাকা দাবি করেন। কিন্তু এতো পরিমাণ টাকা দিতে অপারোগতা প্রকাশ করায় উজ্জল ঐদিন শারমিনের উপর নির্যাতন চালান। এমনকি তাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে তার তলপেটে আঘাত করেন, লাথি ঘুষি মেরে রক্তাত্ব করে মাটিতে ফেলে দেন। তার গলা টিপে ধরেন এরপর শারমিন বাঁচার জন্য ডাক-চিৎকার করলে আশেপাশের লোকজন তাকে উদ্ধার করে মেডিকেলে নিয়ে চিকিৎসা দেন। শারমিন সুস্থ্য হওয়ার পরে উজ্জলের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেন। উক্ত মামলায় আসামী গ্রেফতার না হওয়ায় পুলিশ কমিশনারের হস্তক্ষেপে অবশেষ আসামী উজ্জল গ্রেফতার হন। বর্তমানে তিনি জেল হাজতে রয়েছেন। অপরদিকে আসামী উজ্জল গ্রেফতারের পর তার আত্মীয় স্বজন প্রতি নিয়ত শারমিনকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছেন। গত ২১ জুন শারমিন সিএমএম কোটে প্রবেশের আগে আসামী উজ্জলের বড়ভাই শরিফুজ্জামান শরিফ ও অজ্ঞাত কয়েকজন তাকে টেনে হেচড়ে শ্লীলতাহানীর চেষ্টা চালায়। এ ঘটনার পর শারমিন কোতয়ালী থানায় শরিফুজ্জামান শরিফের বিরুদ্ধে ঐ দিনই একটি জিডি করেন, জিডি নং-১০৭৮, তাং ২১ জুন ২০২১। এ ব্যাপারে শারমিন এ প্রতিবেদককে জানান, আসামীর ভাই- বোন ও অন্যান্য আত্মীয় স্বজনরা জানান, অনতিবিলম্বে মামলা তুলে না নিলে শারমিনকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করবে এমনকি প্রয়োজন হলে গুম করবে। আসামীরা এতই বেপরোয়া যে কোন সময় তার বড়ধরণের ক্ষতি করতে পারেন। এ ব্যাপারে তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর সহায়তা কামনা করছেন।