সৈয়দ ফজলে রাব্বী ডলার
বগুড়া শহর থেকে ৫ কিলোমিটার দক্ষিণে শহরতলীর বনানী-বেতগাড়ী এলাকায় নিরিবিলি মনোরম পরিবেশে চক্ষু চিকিৎসার ক্ষেত্রে অনন্য নজির স্থাপন করে চলেছে ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ জিসি চক্ষু হাসপাতাল। মূলত: সামাজিক বাণিজ্যিক উদ্যোগ হিসেবে গ্রামীণ হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস লি: এবং যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক গ্রীণ চিলড্রেন ফাউন্ডেশন’র অংশগ্রহণে ২০০৭ সালের পহেলা নভেম্বর বগুড়ার জলেশ্বরীতলায় গ্রামীণ জিসি হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হলেও পরবর্তী ২০০৮ সালের ১২ মে বনানীর বেতগাড়ীতে নিজস্ব ভবনে স্থানান্তরের মধ্য দিয়ে কার্যত: চিকিৎসা সেবার ক্ষেত্রে গ্রামীণ জিসি চক্ষু হাসপাতালের বিকাশ ঘটে। মূলত: দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের দারিদ্র-পীড়িত জনগোষ্ঠীকে আই ক্যাম্পের মাধ্যমে বিনামূল্যে ও স্বল্প আয়ের মানুষের কাছে তাদের সামর্থ অনুযায়ী উন্নত মানের স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়ার মানসে চক্ষু চিকিৎসা সেবায় আমরা আছি আপনার পাশে- সেবা ধর্মী এই শ্লোগানকে সামনে নিয়ে আর্তমানবতার সেবায় এগিয়ে চলেছে গ্রামীণ জিসি চক্ষু হাসপাতাল। পাশাপাশি নিরাময়যোগ্য অন্ধত্ব কমিয়ে দারিদ্র বিমোচনে অবদান রাখতে স্বনির্ভর চিকিৎসা সেবা ধর্মী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলে চক্ষু চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম সম্প্রসারণ এবং চক্ষু চিকিৎসা সেবাকে সাধারণের নিকট সহজলভ্য করার মানসে গ্রামীণ জিসি চক্ষু হাসাপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এমনটাই জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। শহরতলীর বেতগাড়ীর নিভৃত পল্লীতে পাশ্চাত্যধাচে নির্মিত দৃষ্টি নন্দন ৪র্থ তলা বিশিষ্ট বহুতল হাসপাতাল কমপাউন্ডে সকাল সাড়ে ৮টা হতে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বগুড়া সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত চক্ষু রোগীরা মাত্র ১০০ টাকা রেজিস্ট্রেশন ফি ও বিশেষায়িত ভাবে চিকিৎসা সেবা পেতে আগ্রহীরা ৫০০ টাকা ফি প্রদান করে আন্তরিকতা পূর্ণ মনোরম পরিবেশে চক্ষু বিশেষজ্ঞের দ্বারা নিবির পর্যবেক্ষণ ও চিকিৎসা সেবা লাভ করছেন উত্তর জনপদে তার নজির বিরল। এখানেই শেষ নয়, গ্রামীণ জিসি চক্ষু হাসপাতালে রয়েছে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির সাহায্যে চোখ পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসার সু ব্যবস্থা। এখানে জাপান ও ইংল্যান্ড থেকে আমদানী করা ¯িøট ল্যাম্প, চোখের প্রেসার মাপার সাধারণ যন্ত্র ছাড়াও রয়েছে ঘড়হ-পড়হঃধপঃ ঞড়হড়সবঃবৎ ও অঢ়ঢ়ষধহধঃরড়হ ঞড়হড়সঃবৎ। অপরদেিক আমেরিকার অ-ঝপধহ মেশিন ও কবৎধষঃড়সবঃবৎ দিয়ে ছানি রোগীদের লেন্সের পাওয়ার নির্ণয়ের ব্যবস্থা। গ্রামীণ জিসি চক্ষু হাসাপাতাল একটি তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর হাসপাতাল হওয়ার কারণে এখানে রোগীদের সার্বিক তথ্য সংরক্ষণের জন্য বিখ্যাত এন্টি গ্রেটেড হসপিটাল ম্যানেজমেন্ট সিসটেম (আইএইচএমএস) এর সহায়তা নেয়া হয়। ফলশ্রæতিতে যে কোন রোগীর রোগ ও চিকিৎসায় যে কোন তথ্য পরবর্তী সময়ে চিকিৎসা প্রদানের ক্ষেত্রে ভীষণভাবে চিকিৎসক ও রোগীদের উপকারে আসে। আধুনিক চক্ষু চিকিৎসা সেবার মান উন্নয়নের লক্ষে সাম্প্রতিক সময়ে অত্র হাসপাতালে জেনারেল ইউনিটের পাশাপাশি স্থাপন করা হয়েছে ফাষ্টট্র্যাক ইউনিট, বিশেষায়িত শিশু বিভাগ, গøুকোমা ইউনিট ও মেডিক্যাল রেটিনা। বিগত ২০২০ সাল পর্যন্ত অত্র হাসপাতালে সেবা গ্রহণ করেছে মোট ৯ লক্ষ ৫৮ হাজার ৮১৯ জন চক্ষু রোগী। এর পাশাপাশি ৪৬ হাজার ২৪৮ জন রোগীর ছানি অপারেশন করা হয়েছে। তন্মধ্যে ফ্যাকো অপারেশন করা হয়েছে ৬ হাজার ৯৭৬ জন রোগী ও অন্যান্য অপারেশন করা হয়েছে ১০ হাজার ৯১ জন রোগীর। উত্তর জনপদের মধ্যে একমাত্র বগুড়ায় স্থাপিত বেসরকারী পর্যায়ে আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন এই চক্ষু হাসপাতালে রোগীদের সেবায় নিয়োজিত ১০৫ জন স্টাফ থাকলেও বর্তমানে হাসপাতালে বিশেষায়িত চিকিৎসক রয়েছে ১০ জন। এরমধ্যে পরিচালক পদে রয়েছেন ডাঃ মোঃ রেজাউন্নবী মন্ডল, কনসালট্যান্ট রয়েছেন ডাঃ মোঃ মাহ্মুদ কবীর, জুনিয়র কনসালট্যান্ট ডাঃ লুৎফুল্লাহিল খবির, ডাঃ সত্যব্রত মজুমদার, ডাঃ হুমায়ন কবির, ডাঃ মোঃ জাকির হোসেন, ডাঃ কামরান, সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ডাঃ কয়েছ মিয়া, ডাঃ রেশমা সুলতানা, ডাঃ মোঃ রায়হান রাব্বি। দেশের আর্থ সামাজিক অর্থনৈতিক অবস্থার কথা চিন্তা করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিনামূল্যে হত-দারিদ্র মানুষের চক্ষু চিকিৎসা সেবা দিতে এ পর্যন্ত বগুড়াসহ উত্তরাঞ্চলের নওগাঁ, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, জয়পুরহাট ও নাটোর জেলার প্রত্যন্ত এলাকায় দুই শতাধিক চক্ষু শিবির আয়োজনের মাধ্যমে বিনামূল্যে প্রায় ৩ হাজার রোগীকে চিকিৎসা সেবা প্রদান করেছে। চক্ষু শিবিরে বাছাইকৃত ১৫শ রোগীর ছানি অপারেশন করা হয়েছে। অনুরূপভাবে শুরু থেকে অদ্যাবধি এই হাসপাতালে বিনা মূল্যে ২৫ হাজারের বেশি রোগীর চিকিৎসা করা হয়েছে। নিজস্ব নীতিমালার মাধ্যমে পরিচালিত গ্রামীণ জিসি চক্ষু হাসাপাতালে দরিদ্র রোগী সাধারণের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতকল্পে নিজস্ব পদ্ধতিতে রোগী সনাক্তকরণ করার পরই চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়। প্রয়োজন বোধে স্বল্পমূল্যে চশমা প্রদান করা হয়। গ্রামীণ জিসি চক্ষু হাসপাতালে আনুসঙ্গিক সুবিধাদির কথা বলতে গিয়ে হাসপাতালের ম্যানেজার মো: মিরাজুর রহমান বলেন, আমাদের হাসপাতালে স্বল্পমূল্যে উন্নত চিকিৎসা সেবার প্রদানের পাশাপাশি হত-দারিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য উন্নতমানের বিশেষ সেবা কার্যক্রম (সাবসিডি মূল্যে) অব্যাহত রয়েছে। তিনি আরও বলেন, দেশ-বিদেশে আমাদের চক্ষু হাসপাতালের ব্যাপক সুনাম ও পরিচিতি ছড়িয়ে পড়ায় প্রতিনিয়ত এখানে দেশী-বিদেশী পরিদর্শকরা হাসপাতাল পরিদর্শন করছেন। ইতোমধ্যেই আমাদের হাসপাতালে এসেছেন যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড, জার্মানী, স্পেন, সুইডেন, কানাডা, অস্ট্রিয়া, ফ্রান্স, জাপান, চীন, কোরিয়া, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, অস্ট্রেলিয়াসহ ১৬টি দেশের প্রায় আড়াই শতাধিক পরিদর্শক। তিনি আরও বলেন, গ্রামীণ হতদরিদ্র মানুষের চোখের রোগ নিরাময় সহ অন্ধত্ব নিবারনের অঙ্গীকার নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা। এক্ষেত্রে আমরা আপামর বগুড়াবাসীর সার্বিক সহযোগিতা কামনা করি।
শুক্রবার, জানুয়ারি ২৭
সংবাদ শিরোনাম
- বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তিতে ২১ ক্রিকেটার
- হাতের আঙুল নেই, কনুই দিয়ে লিখে সব ক্লাসে প্রথম আরাফাত
- আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা
- বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ সৃষ্টির পূর্বাভাস
- রাজধানীতে বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচি ঘোষণা
- মেট্রোরেলের আরও দুই স্টেশন চালু হচ্ছে ফেব্রুয়ারিতে
- পাইকগাছায় পরিবেশ বিপর্যয়কারী টালির পাঁজা উচ্ছেদ
- শিলিগুড়িতে খেলতে গিয়ে লাশ হওয়া ডাবলুর মরদেহ হস্তান্তর