মো.শহিদুল ইসলাম
কৃষি তথ্য সার্ভিস আধুনিকায়ন, ডিজিটাল কৃষি ও তথ্য যোগাযোগ শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের পরিচালক ড. সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্নীতির করার জন্য প্রশাসনিক ভাবে ফাইল রেডি করছে কৃষি মন্ত্রণালয়ে। ওই প্রকল্পে তিনি বিভিন্ন রকম অনিয়ম-দুর্নীতি করায় কৃষি মন্ত্রণালয় ১১ ফা চিঠি পাঠালেও প্রকল্পের পরিচালক জবাব নেনি। সবশেষে তাকে মন্ত্রণালয়ে থেকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বিভাগীয় ভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে মন্ত্রণালয়ে সূত্রে জানা গেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ওই প্রকল্প অফিসে মালামালের খবর নেই অথচ ঠিকাদারদের বিল পরিশোধ । কোনো কোনো মাল না কিনেই ঐ পরিচালক নিজেই টাকা তুলে নিয়েছেন। ডিজিটাল কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ মালামাল বুঝে না নিয়েই অনিয়ম ও দুৃর্নীতির আশ্রয় নিয়ে সংশ্লিষ্ট ঠিকাার প্রতিষ্ঠানকে পুরো টাকাই পরিশোধ করা হয়েছে। আর যেসব মালামাল কেনা হয়েছে তাও অত্যন্ত নিম্নমানের। ক্রয়ের ক্ষেত্রে কোনো নিয়মই মানা হয়নি। আবার কোনো কোনো পণ্য না কিনেই প্রকল্প পরিচালক নিজেই টাকা তুলে নিয়েছেন এসব অভিযোগের প্রমাণ মিলেছে কৃষি তথ্য সার্ভিস আধুনিকায়ন, ডিজিটাল কৃষি ও তথ্য যোগাযোগ শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের পরিচালকের বিরুদ্ধে।
ঐ প্রকল্প পরিচালকের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়েছে। এর অংশ হিসেবে প্রকল্পের কাজে প্রতিবন্ধকতার অভিযোগ এনে কারণ র্শানোর নোটিশও দিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। আর মালামাল ক্রয়ের ক্ষেত্রে আইনি জটিলতা তৈরি হওয়ায় বর্তমানে প্রকল্পের অন্যান্য মামামাল না কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। । কৃষি তথ্যের আধুনিকায়নের জন্য নেওয়া এই প্রকল্পে শুরুতে পরিচালক ছিলেন ড. সাইফুল ইসলাম। প্রকল্পের বিভিন্ন কাজের ব্যর্থতায় গত আগস্টে তাকে প্রকল্প থেকে সরিয়ে ওেয়া হয়। তাকে কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ করা হয়। সাইফুল ইসলামকে প্রকল্প থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরপরই তার অনিয়মের প্রমাণ মেলে।
বর্তমানে ঐ প্রকল্পের মনিটরিং অফিসার তাপস কুমার ঘোষকে পরিচালকের দায়িত্ব ওেয়া হয়েছে। তিনি দৈনিক আমাদের কন্ঠ‘কে বলেন, ইতিমধ্যে ঐ প্রকল্প পরিচালকের কাছে ১১ ফা চিঠি ওেয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি মালামাল বুঝিয়ে দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। এখন মন্ত্রণালয় তার বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নেবে । কার্যকর, মানসম্মত তথ্য সেবা প্রদানের লক্ষ্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে কৃষি তথ্য। সার্ভিসের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং গণমাধ্যমের সহায়তায় কৃষির আধুনিক তথ্য সহজলভ্য করে কৃষিজীবীদের সচেতনতা সৃষ্টি করে লাগসই প্রযুক্তি গ্রহণে উৎসাহিত করার জন্য এই প্রকল্প নেওয়া হয় ২০১৮ সালে। ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ৬৮ কোটি ৭০ লাখ টাকা। ২০২০ সালের জুনে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু প্রকল্পের কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় সংশোধন করে দুই বছর মেয়া বাড়ানো হয় । কিন্তু তাতেও অগ্রগতি নেই। ফলে মেয়াদ আবারও বাড়ানোর চিন্তাভাবনা চলছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্প এগিয়ে নিতে না পারলেও ড. সাইফুল ইসলাম ব্যক্তিগত সুবিধা নিয়েছেন শতভাগ। প্রকল্পের সব ক্ষেত্রেই অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছিলেন ঐ কর্মকর্তা। কেনাকাটা থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রেই করেছেন অনিয়ম ও দুর্নীতি। সবচেয়ে বড় অনিয়ম করেছেন মামামাল বুঝে না পেয়ে ঠিকাারকে টাকা পরিশোধ করেছেন।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের চিঠি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ড. সাইফুল ইসলাম ২১টি। এসি/এয়ারকুলারের মূল্য ঠিকাদারদের ঠিকই পরিশোধ করেছেন। কিন্তু এসি/এয়ারকুলারের কোনো খবর নেই। এছাড়া বিভিন্ন কম্পিউটার সামগ্রীসহ কয়েক কোটি টাকা মূল্যের মাল না বুঝে নিয়েই টাকা পরিশোধ করেছেন। প্রকল্প অফিস থেকে জানানো হয়েছে, এই মালামালের মূল্যমান ২ কোটি টাকার বেশি হবে। এছাড়া কনফারেন্স সিস্টেম, প্রিন্টার, বিভিন্ন ধরনের সফটওয়্যার, সাউন্ড সিস্টেম ক্যাবিনেটও রয়েছে এই তালিকায় । টাকা পরিশোধ করলেও মেলেনি সাড়ে ৩ লাখ কল সেন্টার স্টিকার, ১ হাজার ৩০০ প্রশিক্ষণ ব্যাগ, প্রায় ২০০ উন্নতমানের চেয়ার, ৭২ হাজারের বেশি পোস্টার, ১ হাজার প্রকল্পের অর্জনের ম্যাগাজিন, ২ হাজারের বেশি ফোল্ডার, মাল্টিমিডিয়া ইবুক, ১৩ হাজার নোটবুক প্যাড, ল্যাপটপ, ৩ হাজার বুক ফোল্ডারসহ ৩৬ ধরনের আইটেম। ুটি সার্ভে রিপোর্টেরও হসি পাওয়া যাচ্ছে না। । এসব কেনাকাটার জন্য তিনি কোনো রপত্র আহ্বান করেননি। ব্যক্তিগত লোকরে দিয়ে এসব কাজ করিয়েছেন। ফলে ঐ প্যাকেজের অন্যান্য মালামাল কেনা যাচ্ছে না। যেমন ২১টি এসি/এয়ারকুলার একসঙ্গে টেন্ডার না করে দুই/তিনটি করে এসি/এয়ারকুলার ক্রয়ের জন্য নিজের লোকরে দিয়ে ক্রয় দেখিয়ে টাকা তুলে নিয়েছেন। প্রকল্প পরিচালক ব্যর্থ হয়েছেন, ওনার কমিউনিটি রেডিও কার্যক্রম আধুনিকায়নেরও।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, কৃষকদের দেখানোর জন্য ডকুমেন্টারি ফিল্ম করার জন্য ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়। এ ক্ষেত্রে প্রতিটির মূল্য ধরা ছিল ২ লাখ ৮১ হাজার টাকা। কিন্তু প্রকল্প পরিচালক এ ক্ষেত্রে সুবিধা নিয়ে এবং নিজের লোককে দিয়ে প্রতিটি ফিল্ম তৈরিতে ৫ লাখ টাকা করে ব্যয় করেন। সবগুলো কাজই দেওয়া হয় তার ব্যক্তিগত পছন্দের ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে। তবে কৃষি তথ্য সার্ভিসের একজন পরিচালকের আত্মীয়কেও কাজ দেওয়া হয়েছে। এমন সব ক্ষেত্রেই তিনি অনিয়ম করেছেন।
মালামাল বুঝে না পাওয়ায় প্রকল্পের কাজ যেন থমকে আছে। এ কারণে ঐ প্রকল্প পরিচালককে মালামাল বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য ১১ ফা সরকারি চিঠি ওেয়া হয়েছে কৃষি তথ্য সার্ভিস থেকে। তাতেও কোনো লাভ হয়নি। পরে গত ২৮ এপ্রিল কৃষি মন্ত্রণালয় থেকেও সাত দিন সময় দিয়ে মালামাল পৌঁছে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। প্রকল্প পরিচালকের অদক্ষতা ও অসততায় ২৯ কোটি টাকা মূল্যের প্রেস এবং প্রেস সংশ্লিষ্ট মেশিনারিজ ক্রয় করা যায়নি। সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, নিজের একটি পরিচিত প্রতিষ্ঠানকে এই ক্রয়ের কাজ দেওয়ার জন্য তিনি চেষ্টা করেছেন। কিন্তু মন্ত্রণালয় তাতে আপত্তি দেয়। মন্ত্রণালয়ের আপত্তির পরও বারবার নিজের ঐ প্রতিষ্ঠানটিকে ক্রয়ের কাজ দেওয়ার চেষ্টা করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে মন্ত্রণালয় ড. সাইফুল ইসলামকে সরিয়ে দিয়ে প্রকল্পের মনিটরিং অফিসারকে পরিচালকের দায়িত্ব নে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত সাইফুল ইসলাম দৈনিক আমাদের কন্ঠে‘র প্রতিনিধির কাছে স্বীকার করেন তিনি মালামাল বুঝে পাওয়ার আগেই বিল পরিশোধ করেছেন। এ বিষয়ে তার ব্যাখ্যা হলো, মালামাল রাখার জায়গা ছিল না, এ কারণে বুঝে নেওয়া হয়নি। তবে কেন টাকা পরিশোধ করলেন এ বিষয়ে তিনি কোনো উত্তর দিতে পারেননি। এছাড়া সফটওয়্যার রাখার জন্য তো পৃথক জায়গার রকার নেই। অফিসের লকারেও রাখা যায়। কেন টাকা পরিশোধ করে ঐ মালামাল বুঝে নেননি এমন প্রশ্নের জবাব তিনি বলেন ভবিষ্যাতে মাল বুঝিয়ে য়ো হবে।। কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোঃ হাসানুজ্জামান কল্লোল বলেন, ঐ কর্মকর্তার কর্মকাÐে মন্ত্রণালয় বিব্রত। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়ার ফাইল প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।