খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে খাদ্য সম্পর্কিত সকল ইস্যুতে সামগ্রিকভাবে জাতীয় নীতি বাস্তবায়ন জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।
সোমবার (০৫ মে) বিকালে প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে বণিক বার্তা আয়োজিত ‘কৃষি, খাদ্যনিরাপত্তা ও প্রাণ-প্রকৃতি সম্মেলন ২০২৫’ এর তৃতীয় অধিবেশন ‘খাদ্যের বাজার, সরবরাহ ও দেশজ সক্ষমতা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি একথা বলেন।
শেখ বশিরউদ্দীন বলেন , আমাদের ইনফ্লেশন বাস্কেট ওয়াইড। আমি মনে করি এসেনশিয়াল প্রোডাক্ট রেফারেন্সে আমাদের একটি ইনফ্লেশন ইনডেক্স থাকা উচিত। বাজার ব্যবস্থা মনিটরিং ও রেগুলেট করতে এটা আমাদের সাহায্য করবে।
উপদেষ্টা বলেন , ১৭টি নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের তালিকা সরকার কর্তৃক নির্দিষ্ট আছে। আমরা যদি নিত্য প্রয়োজনীয় ১৭ টি পণ্যের উৎপাদন ও সরবারহ নিশ্চিত করতে পারি তাহলে আমাদের যে অর্থনৈতিক সম্ভাবনা আছে এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারবো।
তিনি বলেন , কৃষি মানেই শুধু মানুষের খাদ্য নয় -এখানে পশু খাদ্যও জরুরী বিষয়। পশু যে খাবারটা খায় সেটাও কৃষি থেকে আসে।আবার পশুকে আমরা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করি। পশু খাদ্যের মূল্যের সাথে আমাদের খাদ্যের মূল্যের একটা সম্পর্ক রয়েছে এটা আমাদের ক্রিটিকালি এনালাইসিস করতে হবে।
বিগত সময়ে দূর্বৃত্তায়ন হয়েছে। একজনের কাছ থেকে শুনে কোয়াসিজুডিশিয়াল নয় জুডিশিয়াল কিলিং থেকে শুরু করে সমস্ত কিছু হয়েছে, এটা অস্বীকার করার জায়গা নেই। এখান থেকে যে উত্তরণ ঘটাবো এটার জন্য আমাদের সরকারের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা এবং সরকারের যে অঙ্গগুলো আছে এর সক্ষমতা বাড়াতে হবে বলে উল্লেখ করেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।
অতিরঞ্জিত তথ্য উপাত্ত মারাত্মক ফ্যাসাদ তৈরি কউল্লেখ করে তিনি বলেন, বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে যে পরিসংখ্যানগত নিয়ামকগুলোকে আমরা গ্রহণ করি অধিকাংশ সময় খুবই কনফিউজিং। এটা রিপেয়ার দরকার।বড় বড় অর্থনীতি অর্থনীতিবিদরাই এই পরিসংখ্যান তৈরি করছেন এবং এই পরিসংখ্যান একমাত্র ফ্যাসাদ তৈরি ছাড়া কোন কিছুই করেনা।
গতবছর দেখেছি আলুর উৎপাদন হয়েছে এক কোটি তিন মেট্রিক টন। কনজাম্পশন হয়েছে ৮০ লাখ মেট্রিক টন। তারপর আলুর দাম হয়ে গেছে ৯০ টাকা কেজি । লক্ষ্য করে দেখলাম কোনভাবেই এটা কোলাবরেট করছেনা।কেননা পরিসংখ্যান ছিল ভুল।পরিসংখ্যানের শুদ্ধি অবসম্ভাবীভাবে প্রয়োজন বলে যোগ করেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, আমাদের খাদ্যের যে বাজার এই বাজারের আর্থিক মূল্য ৩০ লক্ষ কোটি টাকা। আমরা এর বিপণন আরো ভালোভাবে করতে চাই। কৃষির যে অর্থনীতিকীকরণ এখানে সিন্ডিকেশন অফ ফেয়ার মাইন্ড এবং সিন্ডিকেশন অফ ফেয়ার পলিসিস দরকার বলে মন্তব্য করেন তিনি।
উদাহরণ টেনে উপদেষ্টা বলেন, রমজানের আগে ডিমের দাম ১৮০ টাকা ছিল। আমরা দেখেছি যে ডিম কে হোর্ডিং করে রাখা হয়েছিল কোল্ড স্টোরেজে।মজুদ করে বাজারকে আর্টিফিশিয়ালি বাড়ানো হয়েছিল।
বিগত সরকার ব্যয়ের মহোৎসব করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন,আমাদের নাগরিকদের উপর চূড়ান্ত দায় তৈরি করেছে। বিভিন্ন সময়ে মিটিংয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের যে ব্যয়ের ফিরিস্তি দেখি খরচ করতে পারাটাই যেন কৃতিত্বের ব্যাপার ছিলো । কোন একটা খাত সৃষ্টি করে অর্থ ব্যয় করাটাকেই কৃতিত্ব মনে করা হতো। একসময় এটাই যোগ্যতার নিয়ামক ছিল যে কে কতটা খরচ করতে পারে এবং কত ভাবে দায় তৈরি করা যায় নাগরিকের উপর। আমরা এখান থেকে ফেরত এসে একটি কাঠামো তৈরি করতে চাই বলে উল্লেখ করেন তিনি।
ন্যায় বাণিজ্য তৈরি এবং মার্কেট স্টাবিলাইজেশন এর ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি আরো বলেন, বর্তমানে যে হোর্ডিং হচ্ছে এটা একটা ন্যায়ভিত্তিক হোর্ডিং হওয়া উচিত। এটা রাষ্ট্র করতে পারে, এটা পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ হতে পারে কিংবা কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান কিংবা সরকার মিলে করতে পারে। বাফার স্ট্রোরেজ ফ্যাসিলিটি গুলো তৈরি করতে না পারলে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব না। ৩০ লাখ কোটি টাকার যে খাদ্যের বাজার রয়েছে এটার আর্থিক মূল্য যদি আমরা জানি তাহলে সেখানে ইনভেস্টমেন্ট ও আমাদেরকে রিয়েলাইজ করতে হবে।
আমাদের ইরিগেশনে কি ব্যয় করতে হবে,আমাদের ফার্টিলাইজার প্রোডাকশনে কি ব্যয় করতে হবে,আমাদের এগ্রো ইকোলজিক্যাল সেক্টরে কি পরিমাণ বিনিয়োগ করতে হবে,আমাদের যে ক্লাইমেট ভালনারেবিলিটি আছে-জলবায়ুগত যে সমস্যা রয়েছে সেগুলো মোকাবেলা করতে আমাদের কি ধরনের বিনিয়োগ করতে হবে এগুলোর একটি সমষ্টিগত সিন্ডিকেশন দরকার বলে উল্লেখ করেন বাণিজ্য উপদেষ্টা।
প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ এর চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল, কাজী ফার্মস লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী জাহেদুল হাসান, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এর সদস্য সচিব আখতার হোসেন, কোয়ালিটি ফিডস এর পরিচালক এম সাফির রহমান,মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান,এসিআই লজিস্টিকস লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম সাব্বির হাসান নাসির এবং স্কয়ার ফুড এন্ড বেভারেজ লিমিটেডের এর চীফ অপারেটিং অফিসার পারভেজ সাইফুল ইসলাম।