পানি সম্পদ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, বন্যার ক্ষয়ক্ষতি কমাতে আমাদের প্রস্তুতি বাড়াতে হবে এবং বন্যার আগাম সঠিক পূর্বাভাস পেতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের কয়েকটি জিনিসের উন্নয়ন করা দরকার। আমাদের নিজেদের ইনস্টিটিউশনগুলোকে ক্ষমতায়িত করবার যে পদক্ষেপ তাতে বিলম্ব করলে চলবে না।
শনিবার (১০ মে) বিকেলে রাজধানী ঢাকার ইস্কাটনে প্রবাসী কল্যাণ ভবনের প্রবাসী মিলনায়তনে জালালাবাদ অফিসার্স এসোসিয়েশন আয়োজিত “Flood Hazards in Sylhet Region: Problems and way forward” শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, যুক্তরাজ্যের আবহাওয়া অফিসের সাথে একটা আলাপ-আলোচনা চালাচ্ছি তারা যেন আমাদেরকে সাইট স্পেসিফিক বন্যার আগে থেকে বলবার জন্য সহায়তা দেয় এবং তাদের যে হাইরেজুলেশন ডাটা আছে সেটাতে তারা আমাদেরকে প্রবেশের সুযোগ দেয়। তিনি বলেন, তাহলে কিন্তু আমাদের যে ঘাটতিটা রয়ে গেছে সেটা আমরা অনেক দিক থেকে কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবো।
উপদেষ্টার রিজওয়ান হাসান বলেন, এখনো পর্যন্ত তাদের সাথে যে আলোচনা চলছে তাতে মনে হচ্ছে পার্টনারশিপ বা অংশীদারিত্বের মাধ্যমে আশা করি তাদের ডাটায় প্রবেশ করতে পারব। আর তাহলে বন্যা মোকাবেলায় প্রস্তুতির ক্ষেত্রে আমরা অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারবো।
উপদেষ্টা আরও বলেন, সিলেটে নদী ভাঙ্গন আছে, তারপরে বন্যা আছে।বন্যা একটা সমস্যা, বন্যা আবার আমাদের মতন একটা সক্রিয় ব-দ্বীপের জন্য ইতিবাচকও বটে। বন্যার সময় যে পলি বয়ে নিয়ে আসে নদীগুলো তাতে আমাদের ভূমি কিন্তু খুব উর্বর হয়। কিন্তু এটা যখন আমাদের ম্যানেজমেন্ট বা ব্যবস্থাপনার সক্ষমতার বাইরে চলে যায় তখন সেটা আমাদের জন্য একটা সমস্যা নিয়ে আসে।
তিনি বলেন, এক হচ্ছে ঐতিহাসিক সময় হতে বন্যা হচ্ছে এবং বন্যা হবে। বন্যাকে আমাদের আটকানোর কোন উপায় নেই, আটকানোর কোন সুযোগ নাই। আমাদের সক্রিয় বদ্বীপ তো, এখানে ভূতাত্বিক গঠন এখনো হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এ সমস্যা আমাদের আরো বেশি বাড়ছে।
তিনি বলেন, বন্যা কে আমরা কতটুকু আটকাতে পারবো, বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি, বন্যার ঝুঁকিটাকে আমরা আমাদের কর্মকাণ্ড দিয়ে কতটুকু বাড়িয়ে দিচ্ছি সেটা আমাদের দেখতে হবে। বন্যা হয়তো আমরা আটকাতে পারবো না কিন্তু আমাদেরকে জীবাশ্ম জ্বালানি এবং অন্যান্য উৎস থেকে জলবায়ু পরিবর্তন যে হচ্ছে সেখানে আমাদেরকে অবশ্যই নিয়ন্ত্রণ আনতে হবে।
উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান বলেন, সুরমা-কুশিয়ারা বন্যা ও পানি ব্যবস্থাপনা নিয়ে ২০২৫ – ২০২৮ সাল পর্যন্ত একটা প্রকল্পে প্রাথমিক অনুমোদন দেয়া হয়েছে যেটার মোট বাজেট ধরা হয়েছে ১ হাজার ৪২ কোটি টাকা।
এটাতে আপনাদের মতামত থাকলে আমাদেরকে জানাবেন বলে উপদেষ্টা তাঁর বক্তব্যে বলেন। সুনামগঞ্জ হাওর এলাকার বন্যা ও পানি ব্যবস্থাপনার জন্য ২০২৫-২০২৮ সাল পর্যন্ত একটি প্রকল্প নেয়া হচ্ছে যার বাজেট ধরা হয়েছে ২০৬৪ কোটি টাকার। এই প্রকল্পের বিষয়েও আপনারা আপনাদের মতামত জানাবেন বলে তিনি তাঁর বক্তব্য উল্লেখ করেন ।
তিনি বলেন, হাওরে ট্যুরিজম নিয়ন্ত্রণের একটা নির্দেশনা তৈরি করতে হওয়ার অধিদপ্তরকে বলা হয়েছে। টাঙ্গুয়ার হাওর এবং হাকালুকি হাওরের সীমানা চিহ্নিত করে কোথায় আমাদের সোয়াম ফরেস্ট তৈরি করতে হবে, আদৌ লিজ দেবো কি দেব না, হাওরে মালিকানাধীন যে জমিগুলো আছে ওই জমিগুলো ভরাট করা এবং সেখানে শিল্প প্রতিষ্ঠান করা থেকে কেমন করে বিরত রাখা যাবে সে কাজগুলো করতে একটা নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে হাওর অধিদপ্তরকে ।
উপদেষ্টা বলেন, প্রাথমিকভাবে ১১টি নদী চিহ্নিত করেছি। বিভিন্ন বিভাগ থেকে ১টি করে নদী এবং কক্সবাজারের বাঁকখালী নদীসহ মোট ১১ টি নদী দখল এবং দূষণমুক্ত করনের কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করনের দিকে এগিয়ে নেয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, অন্ততপক্ষে একটি নদীও যদি দখল এবং দূষণমুক্তকরণের কাজ আমরা আমাদের মেয়াদে শুরু করতে পারি তাহলেও এটি একটা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। আর বাকি নদীগুলোও দখল ও দূষণমুক্ত করনের জন্য প্রস্তুতি শেষ করে দিয়ে যেতে চেষ্টা করবো।
এ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডাক্তার বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার, দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক এবং মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ডঃ মোঃ আব্দুর রব।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত সচিব জাফরুর রেজা চৌধুরী। সেমিনারে সিলেট এলাকার বন্যার ঝুঁকি বিষয়ে বিষয়ভিত্তিক বক্তব্য রাখেন বুয়েটের ইন্সটিটিউট অফ ওয়াটার এন্ড ফ্লাড ম্যানেজমেন্ট এর অধ্যাপক ড. মাশফিকুস সালেহীন, প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফাইজুল ইসলাম চৌধুরী প্রমুখ। সভাপতির বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট চিকিৎসক প্রফেসর ডা: মো: আবদুল্লাহ।
উল্লেখ্য যে, অনুষ্ঠানের শেষের দিকে জালালাবাদ অফিসার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি হিসেবে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আব্দুন নাসের খানকে সভাপতি এবং ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমদ চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক করে আগামী ২ বছরের জন্য নির্বাহী কমিটি ঘোষণা করা হয়।