তথ্যপ্রযুক্তি খাত সকলের জন্য নিরাপদ থাকুক – উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি
বিস্তারিত জানতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ক্লিক করুন
Advertisement

 

রাজধানীর বিটিআরসি ভবনে বিশ্ব টেলিযোগাযোগ ও তথ্য সংঘ দিবস উপলক্ষ্যে শনিবার (১৭ মে)  আয়োজিত এক সেমিনারে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব, আইসিটি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবা ফারজানা বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, আমাদের দেশে অত্যন্ত সফল একটি সেক্টর হচ্ছে আর‌এমজি সেক্টর। যার সফলতার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে নারীদের বিপুল অংশগ্রহণ। বর্ধমান সেক্টর হিসেবে আইসিটি সেক্টরে ও নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য কোথায় কোথায় প্রতিবন্ধকতা আছে তা চিহ্নিত করে সেভাবেই পলিসি গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তথ্যপ্রযুক্তি ও ইন্টারনেটের নিরাপদ ব্যবহার বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে । তথ্যপ্রযুক্তি আমাদের জন্য অনেক সম্ভাবনা তৈরির পাশাপাশি অনেক ঝুঁকিও তৈরি করেছে। আমরা সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রায় দেখি নারীরা সাইবার বোলিং, হ্যারাসমেন্ট বা ভায়োলেন্স এর শিকার হন। আমাদের সরকার এগুলো শুরু থেকে বিবেচনা নিয়েছে। আমরা চাই দেশের সাইবার স্পেস তথা তথ্যপ্রযুক্তি খাত নিরাপদ থাকুক নারী পুরুষ, শিশু,বৃদ্ধ সকলের জন্য।

বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, আমরা একটি অভাবনীয় ডিজিটাল রুপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এই রূপান্তর সমাজে সুযোগ তৈরির পাশাপাশি বৈষম্য ও তৈরি করছে। ডিজিটাল গভর্নেন্স, ই লার্নিং, ইন্টারনেট সূচক এসব সূচকে সেবা গ্রহীতার দিক থেকে আমাদের নারীরা পিছিয়ে আছে। পলিসি মেকার হিসেবে নারীদের এই পিছিয়ে থাকার বিষয়টি মোকাবেলা করা আমাদের কর্তব্য। সে লক্ষ্যে আমাদের চেষ্টাগুলো অব্যাহত রেখেছি। তবে আমি মনে করি বৈষম্য দূর করতে ইন্ডাস্ট্রির সকল স্টেক হোল্ডারদের সাথে সরকারকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে। আমরা যদি ফাইবারাইজেশন এর টার্গেট গুলো অ্যাচিভ করতে পারি, এক্সেস টু ডিভাইস বানাতে পারি, ডিজিটাল সেবাগুলোকে অফিস থেকে বিকেন্দ্রীকরণ করে নাগরিকের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে পারি তাহলে বৈষম্য নিরসনে সফলতা আসবে।

আজকের এই দিবসের কার্যক্রম আমরা ভিন্নভাবে আয়োজন করার চেষ্টা করেছি। যে নিছক একটা দিবস উদযাপনের বাইরে এসে তথ্যপ্রযুক্তিতে বিদেশে বাংলাদেশের সুনাম অর্জনকারী কৃতি সন্তান এবং সফল প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা দিয়েছি। ইন্ডাস্ট্রির স্টেক হোল্ডার এবং উদ্যোক্তাদের নিয়ে মেলার আয়োজন করা হয়েছে। মেলায় বাংলাদেশের ইনোভেটিভ আইডিয়া নিয়ে যারা কাজ করেছে তাদের শোকেস করার চেষ্টা করেছি।

যারা কানেক্টেড না তাদেরকে যদি কানেক্টিভিটির আওতা আনা যায় এবং একই সাথে যারা ডিজিটাল ডিভাইস এক্সেসিবিলিটির বাইরে আছে তাদের যদি ডিজিটাল ডিভাইস এক্সেসিবিলিটির মধ্যে আনা গেলে তা জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে এবং দারিদ্র্য বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সে লক্ষে আমারা টেলিযোগাযোগ এবং আইসিটি থেকে যে পলিসি গুলো গ্রহণ করবো সেখানে এনক্লুসিবিটিকে গুরুত্ব দিব। নারী এবং পুরুষ বায়োলজিক্যালি ভিন্ন হতে পারে কিন্তু রাষ্ট্রের প্রশ্নে এবং নাগরিক অধিকার প্রশ্নে তাদের সমান অধিকার আছে এবং এই সমান অধিকার নিশ্চিত করতে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন উদ্যোগগুলোতে আমরা সেভাবে পলিসি প্রণয়ন করব।

সরকারি সেবাকে শহর থেকে মোবাইল ডিভাইসে অথবা তৃণমূলের বিস্তৃত করতে নাগরিক সেবা নামে একটি উদ্যোগ গ্রহণ করেছি এবং এই উদ্যোগে আমাদের উদ্যোক্তাদের ট্রেনিং শুরু করেছি সেই ট্রেনিং আমরা চেষ্টা করেছি নারী উদ্যোক্তাদের হার শতকরা ৫০ শতাংশের কাছাকাছি রাখার জন্য ।

সাইবার আইনের ২৫ ধারায় আমরা নারীবান্ধব একটি নতুন ধারা রেখেছি, যৌন হয়রানি ব্ল্যাকমেইলিং এবং অশ্লীল বিষয়বস্তু প্রকাশের ক্ষেত্রে নারীদের বর্ধিত সুরক্ষার কথা বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আইনে প্রতিস্থাপিত হয়েছে। সেখানে যৌন নিপীড়ন সংক্রান্ত উপাদান, চাইল্ড সেক্সুয়াল অ্যাবিউজ মেটেরিয়াল, সেক্সটোশন ইত্যাদি কন্টেন্ট বা যেকোনো ধরনের বুলিংকে আমরা অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছি। আশা করছি আইনটি আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে গ্যাজেট আকারে প্রকাশিত হবে। ইতিমধ্যে আইনটি মন্ত্রিপরিষদে অনুমোদন হয়েছে। সেক্ষেত্রে সাইবার স্পেসে আমাদের নারীদেরকে বর্ধিত সুরক্ষা দিতে পারব।
আমাদের নারী কেন্দ্রিক যে সফলতম প্রোগ্রাম গুলো আছে তার মধ্যে অন্যতম হার পাওয়ার। আমরা এই প্রকল্পটির দ্বিতীয় ফেজ শুরু করছি এবং এখানে আমাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সার্টিফিকেটধারী নারী উদ্যোক্তা তৈরি করা এবং পর্যাপ্ত সংখ্যক ফ্রিল্যান্সার তৈরি করা। আমরা বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা এবং উপজেলার নারী উদ্যোক্তা এবং ফ্রিল্যান্সারদের কে এখানে প্রশিক্ষণ প্রদান করার চেষ্টা করব। পাশাপাশি এটুয়াই থেকে শীস্টেম (SheSTEM) নামে একটি প্রকল্প আছে। যার মাধ্যমে সায়েন্স, টেকনোলজি, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ম্যাথমেটিক্স এই স্টেম এডুকেশন নারীদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য আমরা দেশের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোগ্রাম আয়োজন করে বিভিন্ন ধরনের মোটিভেশন দিয়ে থাকি এবং প্রশিক্ষণ প্রদান করে থাকি। এই প্রকল্প চলমান থাকবে। পাশাপাশি বাংলাদেশ হাইটেক পার্কের “ডিজিটাল উদ্যোক্তা এবং উদ্ভাবন ইকো সিস্টেম উন্নয়ন প্রকল্প” নামে প্রকল্প আছে সেখানেও আমরা পর্যাপ্ত সংখ্যক নারী উদ্যোক্তাকে ট্রেনিং কাভারেজের আওতায় আনার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। তথ্য এবং সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মহোদয়ের প্রত্যাশা অনুযায়ী কর্মজীবী নারীদের জন্য তথ্যপ্রযুক্তির প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় তথ্য ও সম্প্রচার সচিব বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে ধারণ করে অন্তর্বর্তী সরকার নারী পুরুষের সমতায়নে অঙ্গীকারবদ্ধ। শিল্পায়ন, নাগরিক জীবন এবং শিক্ষা স্বনির্ভরতা নারীকে ঘরের বাইরে কাজ করার সুযোগ করে দিয়ে প্রশস্ত করেছে দেশের কর্মক্ষেত্র। ফলে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং তথ্য প্রযুক্তি সহ দেশের সকল ক্ষেত্রে নারীদের আবার বিচরণ পরিলক্ষিত হচ্ছে। তিনি বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব কে কর্মজীবী নারীদের তথ্য প্রযুক্তি প্রশিক্ষণ প্রদানের অনুরোধ করেন।

বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় আইসিটি সচিব বলেন, নারীদের নিরাপত্তায় আমরা কাজ করছি। সাইবার সেফটি অর্ডিন্যান্স যা মন্ত্রিপরিষদে অনুমোদিত হয়েছে তাতে সাইবার বুলিং এর বিষয় রয়েছে। এআই পলিসিতেও নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়টি আছে। আমরা পরিস্থিতি বিবেচনায় কাজ করছি যাতে নারীরা বৈষম্য থেকে বেরিয়ে আসতে পারে।

প্রসঙ্গত, ‘ডিজিটাল রূপান্তরে নারী-পুরুষ সমতায়ন’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বিশ্বব্যাপী আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব টেলিযোগাযোগ ও তথ্য সংঘ দিবস। বাংলাদেশও আজ এ দিবসটি পালন করা হচ্ছে। দিবসটি উপলক্ষ্যে সভা, সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া বিটিআরসি প্রাঙ্গণে মেলা, মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা কর্তৃক ডাক টিকেট অবমুক্তকরণ এবং দেশের বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে হ্যাকাথন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে একটি ন্যাশন ওয়াইড আইএসপি ও অপর এক ডিভিশনাল আইএসপির হাতে ই-লাইসেন্স তুলে দিয়ে বিটিআরসির ই লাইসেন্সিং সেবার উদ্বোধন করা হয়।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব( রুটিন দায়িত্ব) মোঃ জহিরুল ইসলাম এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিটিআরসি চেয়ারম্যান অব. মেজর জেনারেল এমদাদ উল বারীসহ সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তা এবং টেলিকম সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি
বিস্তারিত জানতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Advertisement

Contact with your
Creative & Technology Partner

Advertisement