অচল হয়ে পড়েছে বাংলাদেশের দ্বিতীয় মৎস্য বন্দর 

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি
বিস্তারিত জানতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ক্লিক করুন
Advertisement

মোঃ আসাদুজ্জামান, বরগুনা

বরগুনার পাথরঘাটায় জেলে এবং কোষ্টগার্ডের সাথে বিরোধের ঘটনায় অচল হয়ে পড়েছে বাংলাদেশের বৃহত্তর দ্বিতীয় মৎস্য বন্দর পাথরঘাটার বি এফ ডি সি। পাথরঘাটার কোস্টগার্ড  বাদী হয়ে জেলে ও ট্রলার মালিকদের বিরুদ্ধে ৩২ জনের নামসহ ৮শ অজ্ঞাত  আসামি করায় পাথরঘাটার শত শত জেলে গ্রেফতার এড়াতে এলাকা ছেড়েছে । আসামি আটকে কোস্টগার্ডের সাঁড়াশি অভিযানে ট্রলার মালিকরা তাদের ট্রলারসহ জেলেদের  নিয়ে বিভিন্ন মোকামে মাছ বিক্রি করছে। এ কারণে মাছ শূন্য হয়ে পড়েছে পাথরঘাটা বি এফ ডি সি পাইকারি মৎস্য বাজার।

পাথরঘাটা বি এফ ডি সি মৎস্যবাজারে পাইকার সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্বাস উদ্দিন জানান, সাগরের ট্রলিং ট্রলার বন্ধ হওয়ার পর ব্যাপকভাবে সাগরে ইলিশ দেখা দিয়েছে। এসব মাছ এখন নদীতেও ধরা পড়ছে। তবে পাথরঘাটা বিএফডিসি বাজারে কোন মাছ বেচাকেনা হচ্ছে না। তিনি বলেন, সাগরে ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে প্রতিদিন বি এফ বাজারে বিভিন্ন প্রকারের সামুদ্রিক মাছসহ ২শ থেকে ৩শ  মন ইলিশ বিক্রি হতো এখন ২০ মণ ইলিশও এই বাজারে উঠছে না। গত ১৮ জুন কোষ্টগার্ড দুটি ট্রলিং ট্রলার আটকের পর মৎস্যজীবীরা কোষ্টগার্ডের সাথে ব্যাপক সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় কোস্টগার্ডের দুটি গাড়ি ভাঙচুর করে জেলেরা।

কোস্টগার্ড বাদী হয়ে ১৯ জুন একটি মামলা করলে ৩২ জন নামিসহ  অজ্ঞাত ৮ লোককে আসামি করা হয়। এরপর থেকে কোষ্টগার্ড নিজেরাই এসব অজ্ঞাত আসামি ধরতে শুরু করে।এখন পর্যন্ত তারা দুইজন নামিসহ সন্দেহভাজন ৮ জনকে গ্রেফতার করেছে। এতে পাথরঘাটায় ব্যাপক আতঙ্ক বিরাজ করছে এ কারণেই কোন জেলেরা পাথরঘাটায় মাছ বিক্রি করতে আসেনা।

বিরোধের পর থেকে যেসব ট্রলার সাগরে গেছেন সেই সব ট্রলার সাগরে মাছ ধরে এখন পিরোজপুর, মহিপুর, আলিপুর, নিদ্রা সকিনা  পাড়েরহাটসহ বিভিন্ন মোকামে মাছ বিক্রি করছে।

এ কারণে এই উপকূলের ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যাপকভাবে বিপর্যয় নেমে এসেছে। তিনি বলেন, পাথরঘাটা থানার পুলিশ কোন আসামি ধরছে না কিন্তু কোষগার্ডের সদস্যরা পথে-ঘাটে সাধারণ মানুষকে ধরে তাদের অজ্ঞাত আসামির মধ্যে নাম দিয়ে আদালতে সোপার্দ করায় এলাকায় জেলেদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

বরগুনা জেলা ট্রলার শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মোঃ দুলাল মিয়া জানান,পাথরঘাটা বি এফডিসিতে মাছ বেচা কিনা বন্ধ হওয়ার সাথে সাথে সকল ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস নেমে পড়েছে। ট্রলার মালিকরা তাদের কোন ট্রলারে বরফ কিনছে না এ কারনে প্রায় ২০ টির মত বরফ কল বন্ধ রয়েছে। এছাড়া নিত্য পণ্যের দোকানগুলোতে কোন বেচাকেনা হচ্ছে না।

পাথরঘাটা নতুন বাজারের তৈল ব্যবসায়ী ইউসুফ মিয়া জানান, প্রতিদিন আমরা গড়ে ১শ বেরেল ডিজেল (২ হাজার লিটার) বিক্রি করতাম। এখন একবারে বেরেল তৈলও বিক্রি করতে পারিনা। তাছাড়া প্রতিটি ট্রলারে একটি নিত্যপণ্যের  দোকান থেকে ২৫ থেকে ত্রিশ হাজার টাকার মালামাল প্রায় কোরায় করতো এখন ২০০০ টাকার মালও বিক্রি করতে পারছি না। ব্যবসা-বাণিজ্যে মারাত্মকভাবে ধস নেমে এসেছে।

পাথরঘাটা আছিয়া বরফ কল মালিক কামরুল ইসলাম জানান, কয়েকজন অসৎ মৎস্য ব্যবসায়ীর কারণে এখন পাথরঘাটার শতকরা ৮০ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। আমরা বরফ বিক্রি করতে পারছি না অথচ নিয়মিত বিদ্যুৎ বিল পরিষদ করতে হচ্ছে। এ অবস্থায় চলতে থাকলে সকল ব্যবসায়ীরা পানির ব্যবসা ছেড়ে চলে যেতে হবে। আমাদের কোটি কোটি টাকা ট্রলার মালিকদের কাছে পাওনা রয়েছে। তারা অন্য মোকাম থেকে বরফ কিনে ট্রলার নিয়ে সাগরে যাচ্ছে। এবং বিভিন্ন জায়গায় মাছ বিক্রি করছে  অথচ আমাদের বাকি টাকা উঠছে না ইলিশ সিজন শেষ হওয়ার পর এই বকেয়া টাকা আর পাওয়া যাবে না। এতে করে অনেক বরফ কলের মালিকরা পথে বসে যাবে।

পাথরঘাটা আরদ্দার সমিতির দায়িত্বপ্রাপ্ত সভাপতি ছগির আলম জানান,আমাদের কোটি কোটি টাকা জেলে এবং ট্রলার মালিকদের দাদন দেওয়া রয়েছে। এরা আমাদের প্রতিবছর ইলিশ মৌসুমে মাছ দিয়ে দাদোন টাকা পরিশোধ করে। এখন কোর্স গার্ড এবং জেলেদের সাথে ঝামেলা হওয়ার কারণে পাথরঘাটা বিএফডিসিতে অধিকাংশ লোক মাছ বিক্রি করছে না। বিভিন্ন মোকামে মাছ বিক্রি করায় আমরা আড়তদাড়ি  টাকা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি এবং আমাদের কেউ দাদন টাকাও পরিশোধ করছে না এ কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যাপকভাবে ধস নেমে এসেছে। এছাড়া বি এফ পাইকারি মৎস্য বাজার ও ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। এবং সরকার লক্ষ লক্ষ টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে তিনি জানান। তিনি দাবি করেন যাতে করে এই বাজারে নির্বিঘ্নে জেলেরা ট্রলার নিয়ে এসে তাদের মাছ বেচাকিনা করতে পারে প্রশাসনের এ ধরনের একটা পদক্ষেপ নেয়া জরুরি  বলে মনে করছেন ।

পাথরঘাটা বিএফডিসি পাইকারি মৎস্য বাজারের ব্যবস্থাপক লেফটেন্যান্ট  কমান্ডার মাসুদ শিকদার জানান, পাথরঘাটায় কোস্টগার্ড  এবং জেলেদের সাথে যে ঝামেলাটি হয়েছে তাতে পাথরঘাটা মানুষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিএফডিসি বাজারে কমপক্ষে প্রতিদিন ১ থেকে দেড় হাজার মানুষের কর্মসংস্থান ছিল। বি এফডিসি বাজারে অনেক সমুদ্রগামী ট্রলারে মাছ বিক্রি না করায়। গরিব দুঃখী মানুষের এখন পরিবারে দুরবস্থা। মৎস্য শ্রমিকরা মাছ ঘাটে  কাজ করতে না পারায় তাদের সংসারে অনেকে অনাহারে অর্ধ হারে দিন কাটছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে  উপরস্থ কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ-আলোচনা করছি। যাতে করে উপকূলের জেলেদের দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর মৎস্য বন্দর পাথরঘাটা  বিএফডিসিতে নির্বিঘ্নে মাছ বিক্রি করতে পারে সেই ব্যবস্থা নিচ্ছেন বলে জানান।

 

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি
বিস্তারিত জানতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Advertisement

Contact with your
Creative & Technology Partner

Advertisement